বুড়িগঙ্গা নদীর কূল ঘেঁষে গড়ে উঠা পুরানো ঢাকার ঐতিহ্যবাহী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় নানা সংকট পেরিয়ে দিনদিন সমৃদ্ধির পথে ধাবিত হচ্ছে। পাঠশালা থেকে স্কুল, স্কুল থেকে কলেজ এবং কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয়ে প্রতিষ্ঠানটি দেশের উচ্চ শিক্ষায় তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বর্তমানে পুরনো ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে এই প্রতিষ্ঠানটি। একাডেমিক মানোন্নয়নের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক ও অবকাঠামোগত অগ্রগতি অর্জনে বিশ্ববিদ্যালয়টি দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় একটি মডেল বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আত্ম-পরিচয় পেতে আর বেশি দেরি নেই। এজন্য আবাসিক হলে ব্যবস্থা নিশ্চিত করা গেলে বিশ্ববিদ্যালটির কোনো দুর্বলতাই থাকবে না। প্রায় ১১ বছরের পথচলায় বিশ্ববিদ্যালয়টি এগিয়ে চলছে। অপূর্ণতা কেবল আবাসিক হলের।
একাডেমিক উন্নয়ন
একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অনুসঙ্গ হলো একাডেমিক ডেভেলপমেন্ট। ক্ষেত্রে শিক্ষকদের সংখ্যা ইতোমধ্যেই নিশ্চিত করতে পেরেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কেননা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল শিক্ষকের সংখ্যা খুবই কম। অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকের অনুপাতটি একেবারেই অসামঞ্জ্যপূর্ণ ছিল। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। এখন প্রায় ৬০০ জনের মতো শিক্ষক রয়েছেন। আগে এর সংখ্যা ছিল ৩০০ জন। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হচ্ছে সবচেয়ে মেধাবী এবং যোগ্যতাসম্পন্নরাই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে আছেন। বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় নতুন একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়। দিনদিন এ বিশ্ববিদ্যালয় দেশে পরিচিতি এবং সুনাম অর্জন করছে। সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় রাজধানীর বুকে দ্বিতীয় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। সেক্ষেত্রে শিক্ষক হওয়ার জন্য বা শিক্ষকতা করার জন্য পছন্দের তালিকায় প্রথম দুই তিনটির মধ্যে এখন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। বর্তমানে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগে ১৭ জন শিক্ষকের মধ্যে নয়জনের পিএইচডি ডিগ্রি আছে। বাকি ছয়জন এখন পিএইচডি ডিগ্রি করছেন। এই একই অবস্থা রসায়ন বিভাগে বিরাজ করছে। পিএইচডি ডিগ্রিধারীরাই শিক্ষক হচ্ছেন। যারা নতুন তাদের রেজাল্ট ভালো। এতে তারা সহজে স্কলারশিপ পাচ্ছেন। প্রায় একশ’ জনের মতো শিক্ষক এখন আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ইউরোপ, কোরিয়া, জাপান এবং চীনে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করছেন। অনেকে পিএইচডি করে ফিরে এসেছেন। কাজেই এখন শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকের মধ্যে ভালো মিথস্কিয়া হচ্ছে এবং হবে। ভালো ডিগ্রিধারী শিক্ষক এবং মেধাবী শিক্ষার্থী- এই দুইটি বিষয়ে যখন সম্মিলন ঘটছে বা ঘটতে যাচ্ছে, এতে শিক্ষার মান বাড়ছে। সবদিক থেকে একাডেমিক মান ক্রমান্বয়ে অগ্রগতির দিকে ধাবিত হচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। যদিও দেশের প্রাচীন ও বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার সম্ভাবনা নেই; তবে একাডেমিক উৎকর্ষ বৃদ্ধি করলে এটি বড় বিশ্ববিদ্যালয় হতে পারে; জ্ঞান বিতরণ ও জ্ঞান আহরণের শ্রেষ্ঠ কেন্দ্র হিসেবে পরিণত করা যেতে পারে।
জ্ঞান আহরণ
বর্তমানে জ্ঞান আহরণের কার্যক্রম জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সমান তালে এগিয়ে যাচ্ছে। গবেষণা কর্মকা- বলতে যা বোঝায় তা শুরুতেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিল না। গত তিন বছরে এই সব গবেষণা কর্মকা- চালু হয়েছে। এমফিল এবং পিএইচডি প্রোগ্রাম খোলা হয়েছে। এই সব প্রোগ্রামের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা গবেষণা করছে এবং শিক্ষকরা তাদের তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব পালন করছেন। এভাবেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা কর্মকা- চালু হয়। ইতোমধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন বিভাগে এমফিল এবং পিএইচডি প্রোগ্রামে প্রায় একশ’ শিক্ষার্থী অধ্যায়ন করছে। এর বাইরেও শিক্ষকদের ব্যক্তিগতভাবে ইনরোল প্রজেক্ট হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন থেকে অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সেই গবেষণা কর্মকা-ের কয়েকটি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে এবং বাকিগুলো সমাপ্তির পথে রয়েছে। গাইড লাইনে আরো কতকগুলো গবেষণা কর্ম পরিচালনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। উচ্চশিক্ষা গ্রহণে শিক্ষকদের বাইরে যাওয়া এবং তারা ফিরে আসায় জগন্নাথের একাডেমিক পরিবেশ ক্রমান্বয়ে উন্নত হচ্ছে।
চলমান অবকাঠামোগত উন্নয়ন
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে অবকাঠামোগত ব্যবস্থা। বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি, ইন্টারনেট সুবিধা এবং গবেষণাগাওে নজর বাড়ানো হয়েছে। তবে শিক্ষকদের বসার জায়গা, শিক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত ক্লাসরুমের ক্ষেত্রে সমস্যা এখন রয়েছে। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় সমস্যা জায়গার। মাত্র সাড়ে সাত একর জায়গার উপর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় অবস্থিত। বড় ধরনের অবকাঠামো নির্মাণের জায়গা খুবই সংকীর্ণ। তারপরও বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা এবং শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কক্ষ এবং ল্যাবরেটরি প্রয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সহায়তায় বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ক্যাম্পাসে দুইটি স্পিডি ইন্টারনেট ব্যবস্থা চালু করা হয়ছে। যাতে ক্যাম্পাসে সবাই ইন্টারনেট সুবিধা পায়। খুব দ্রুত ইন্টারনেট সুবিধার মাধ্যমে সবাই যেন বিশ্ব মানের ডিজিটাল লাইব্রেরিতে প্রবেশের সুযোগের দিকে গুরুত্বরোপ করা হচ্ছে। সেই কাজটি ইতোমধ্যে প্রায় সম্পন্ন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে ই-লাইব্রেরি চালু করা হয়েছে। ই-বুক সিস্টেমে চলে গেছে পুরো গ্রন্থাগার। এখন সকলে বই বা গবেষণা পত্রিকা পড়ার জন্য খুব সহজেই ওইসব অনলাইনে প্রবেশ ও ডাউনলোড করতে পারেন। তবে লাইব্রেরির জন্য ৫০ লাখ টাকার বই কেনা হয়েছে। লাইব্রেরিটি ই-লাইব্রেরিতে পরিণত হওয়ায় যুগের চাহিদাও পূরণ হয়েছে। এখন পৃথিবীর ২৬টি পাবলিশারের বই সরাসরি শিক্ষার্থীরা পড়তে পাচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের হেকেপ প্রকল্পের আওতায় কম্পিউটার সায়েন্স, একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেম এবং মাকেটিং বিভাগে গবেষণার কাজ শুরু হয়েছে এবং তার অনেকটাই প্রায় সম্পন্ন। রসায়ন এবং উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগে ল্যাবরেটরি এবং কম্পিউটার সুবিধার উন্নয়নের জন্য হেকেপ প্রকল্পের আওতায় কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। এই ল্যাবরেটরিগুলোতে আধুনিক যন্ত্রপাতি কেনার প্রক্রিয়াও চলছে। ল্যাবরেটরি উন্নয়নের জন্য উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন। নিজস্ব অর্থায়নে ল্যাবরেটরির যেসব যন্ত্রপাতি ক্রয় করা সাধ্যের মধ্যে, সেসব যন্ত্রপাতি আস্তে আস্তে ক্রয় করা হচ্ছে।
সংকট উত্তোরণে জোর প্রচেষ্টা
শিক্ষকদের বসার স্থান এবং শিক্ষার্থীদের ক্লাসরুমের সমস্যা থেকে উত্তোরণের জন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য প্রথম ধাপের একশ’ কোটি টাকার প্রকল্প বাতিল হওয়ার পর্যায়ে চলে গিয়েছিল। গত ৫ বছরে এর বাস্তবায়ন ছিল ৫ শতাংশেরও কম। কাজেই এই প্রকল্প বাতিল প্রকল্পের মধ্যে চলে যায়। পুনরায় এই প্রকল্পকে নতুন করে ভাগ করে, সময় বাড়িয়ে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এই প্রকল্পে প্রধান দুইটি কম্পোনেন্ট রয়েছে। একটি হচ্ছে একাডেমিক ভবনের উর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ। বর্তমানে দুইটি ফ্লোর সম্পন্ন হওয়ার পথে। ক্রমান্বয়ে একটির পর আর একটি ফ্লোর নির্মাণ হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসরুমের সংকট আর থাকবে না। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শতভাগ অনাবাসিক। একজন শিক্ষার্থীরও থাকার কোনো ব্যবস্থা নেই। শিক্ষক থেকে শুরু করে কর্মকর্তা-কর্মচারী কারো কোনো থাকার ব্যবস্থা নেই। সেদিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রধান লক্ষ্য ছিল মেয়েদের আবাসিক হল নির্মাণ। অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের সংখ্যা কম। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে এখানে আবাসিক সুবিধা নেই। যে এলাকায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় অবস্থিত অর্থাৎ পুরান ঢাকায় মেয়েদের নিরাপত্তাসহ স্বাস্থ্যসম্মত থাকার বাড়িঘরের অভাব রয়েছে। শিক্ষার্থীদের মেসের সংকট রয়েছে। যার কারণে এখানে ছাত্রীদের সংখ্যা কম। এই সব বিষয় বিবেচনায় রেখে আবাসিক হল নির্মাণের জন্য প্রথমে মেয়েদের হল নির্মাণের উদ্যোগ য়ো হয়। ইতোমধ্যে ২০ তলা বিশিষ্ট আধুনিক বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব নামে একটি হল নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। যেখানে এক হাজার ছাত্রী অবস্থান করতে পারবে। পুরো উদ্যামে এই হলের নির্মাণ কাজ চলছে। এই হল নির্মাণ সম্পন্ন হলে কিছুটা হলেও ছাত্রীদের আবাসিক সমস্যা দূর হবে। সরকারের সহযোগিতায় এবং হল পুনরুদ্ধার কমিটির অক্লান্ত পরিশ্রমে বেদখল হওয়া কয়েকটা ছাত্রাবাস (৩টি) নিজেদের নিয়ন্ত্রণে এসেছে। সেগুলোর বর্তমান স্থাপনা ঝুঁকিপূর্ণ। জায়গা কম হওয়ায় সেখানে পূর্ণাঙ্গ ‘হল’ হবে না। কাজেই এর বিকল্প সমাধান খোঁজা হচ্ছে।
হল আন্দোলনের যৌক্তিকতা
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আবাসিক ব্যবস্থাবিহীন একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় পরিপূর্ণ রূপ পায় না। যদিও ইউরোপের অনেক দেশেই আবাসিক ব্যবস্থা নেই-এমন বিশ্ববিদ্যালয় আছে। আবাসিক হলের সাথে উচ্চ শিক্ষার নিবিড় সম্পর্ক বিদ্যমান তা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। উপযুক্ত পরিবেশ একজন শিক্ষার্থীর বেড়ে উঠার ক্ষেত্রে কতটা ভূমিকা রাখে, তা বলার অপেক্ষা রাখে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীর শিখনীয় বিষয়গুলো কেবল ক্লাসরুমেই সীমাবদ্ধ থাকে না। ক্লাসে যতটা না শিখবে তার চেয়ে বেশি শিখতে পারে একজন শিক্ষার্থী যে পরিবেশে বাস করছে, যাদের সাথে মিলছে, হাতের নাগালে শিক্ষা উপকরণ সহজলভ্য কিনা ইত্যাদি বিষয়ের উপর। ফলে আবাসিক হলের সাথে একজন শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবনের অনেক বিষয় ঔতপ্রোতভাবে লেগে আছে।
শিক্ষার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সেই আবাসিক হলের কোনা ব্যবস্থা নেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মকারী কারো জন্য আবাসিক ব্যবস্থা অনুপস্থিত। আবাসিক হল না থাকার কারণে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০ হাজার শিক্ষার্থীকে আজ অবস্থান করতে হচ্ছে ঢাকা শহরের আনাচে-কানাচে। উপায় না থাকায় পুরনো ঢাকা পাতলাখান লেন, কলতাবাজার, শাখারি বাজার, লক্ষ্মীবাজার, বাংলাবাজার, গোয়ারঘাট লেনসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘিঞ্জি পরিবেশে উচ্চ শিক্ষা জীবন পার করতে হচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরকে। কেউ বা আবার অবস্থান করছেন ঢাকার বাহিরে। আর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান এমন, যেখানে আসতে হলে যানজটের সম্মুখীন হতেই হবে। ফলে ‘অনাবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়’ বিশেষণটি এখন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০ হাজার শিক্ষার্থীর গলার কাঁটা হয়ে উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আজ দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা পড়াশুনা করছে জরিপ করলে দেখা যাবে তাদের অধিকাংশ নি¤œবিত্ত, নি¤œ মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। বাবা-মা মাথার ঘাম পায়ে সন্তানদের জন্য টাকা পাঠাচ্ছে। অনেকে পরিবার তাও বহন করতে পারে না। ফলে টিউশনি করাই তাদের একমাত্র অবলম্বন। আর বর্তমানে মেবাধী শির্ক্ষ্থাীরা ভর্তি হচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরেই শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য থাকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। রাজশাহী এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিও সুযোগ পাওয়া সত্ত্বেও অনেকে ভর্তি হয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। যারা ভর্তিযুদ্ধে মেধার পরিচয় দিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হচ্ছে, তারা এখানে কি পাচ্ছে ?
সমস্যা যখন জন্মগত
প্রতিষ্ঠাকালীন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের আদলে তৈরি করা হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে কথা ছিল, শিক্ষার্থীরাই টাকা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় চালাবে। পরে আওয়ামী লীগ সরকার এ আইন সংশোধন করে। অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ই রাষ্ট্রীয় খরচে চলবে- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তা নিশ্চিত করেন। কিন্তু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান সমস্যা সম্পূর্ণ অনাবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়। শুধু তাই নয়, ক্লাসরুম, শিক্ষক, শিক্ষা উপকরণ সংকট থেকে শুরু করে নানা সমস্যা রয়েছে। শিক্ষার্থীরা কষ্ট করে শিক্ষা গ্রহণ করছে। তাদের পরিবহন ব্যবস্থাও অপ্রতুল। বাসের ব্যবস্থা থাকরেও যানজটের কারণে বাসগুলো ঠিকমত চলতে পারে না। ছাত্রীদের আরো দুরাবস্থা। আবাসিক হলে কোনো ব্যবস্থা না থাকায় নারী শিক্ষার্থীদের সংখ্যা শতকরা ১০ ভাগ। অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে বেশি টাকা খরচ করে ভর্তি হলেও নানা সমস্যা আর সংকটের মধ্য দিয়ে শিক্ষাজীবন পার করছেন।
হলের স্বপ্ন যখন পুরনো কারাগারে
আবাসিক হলের সমস্যা সমাধানে অনেকটাই পথ দেখাতে পারে পুরনো কারাগারটি। ফলে শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবি হয়ে উঠছে পুরনো কারাগারটি। চকবাজারের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কেরানীগঞ্জে স্থানান্তরিত হওয়ায় খালি জায়গায় হল নির্মাণের স্বপ্ন দেখছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা। এ দাবিতে বিভিন্ন সময় আন্দোলন করেছেন তারা। সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন থেকে চিঠিও পাঠানো হয়। তবে চিঠির কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। সম্প্রতি ওই জায়গায় জাদুঘর ও পার্ক করা হবে- এমন খবর ঘোষণার পর আবার আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। দাবি পূরণে ক্যাম্পসে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন, মিছিল, বিক্ষোব সমাবেশ করছেন। এদিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেছেন, ‘‘পুরান ঢাকায় হল করার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা নেই। কেন্দ্রীয় কারাগারের জায়গা খালি হওয়ায় সেখানে হল তৈরির স্বপ্ন দেখছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এজন্য কিছু জমি চেয়ে সরকারের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে এক বছরের বেশি সময় আগে। কিন্তু কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।’’ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সাামাজিক মাধ্যমসহ নানাভাবে তাদের দাবি জানাচ্ছেন। তারা বলছেন, ‘কেন্দ্রীয় কারাগারের জমিতে সরকার বঙ্গবন্ধু স্মৃতি কারাগার জাদুঘর এবং জাতীয় চার নেতা স্মৃতি কারাগার জাদুঘর নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। তবে তা সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে না দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধানে দেয়া হোক।
এদিকে শিক্ষার্থীদের আবাসন সমস্যা নিরসনে নাজিমউদ্দিন রোডের পুরোনো ‘ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার’-এর খালি জমি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে (জবি) চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত দেয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক কাউন্সিল সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। ৮ আগস্ট জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৮-তম জরুরি একাডেমিক সভা উপাচার্য অধ্যাপক ড মীজানুর রহমান-এর সভাপতিত্বে তাঁর সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্যবৃন্দ শিক্ষার্থীদের ও প্রতিষ্ঠানের বৃহত্তর স্বার্থ বিবেচনায় শিক্ষার্থীদের আবাসিক সমস্যা সমাধানকল্পে নাজিমউদ্দিন রোডস্থ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার স্থানান্তরের পর উক্ত ভূমি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়-এর অনুকূলে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক কাউন্সিল সরকারের নিকট আহ্বান জানান। একই সাথে একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্যবৃন্দ ছাত্র-ছাত্রীদের তাদের স্বাভাবিক শিক্ষাকার্যক্রম ব্যাহত হয় এরকম কর্মসূচি থেকে সরে আসার আহ্বান জানান। নাজিমউদ্দিন রোডস্থ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার স্থানান্তরের পর উক্ত ভূমি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুকূলে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত পাওয়া গেলে, সেখানে বহুতল ভবন তথা আবাসিক হল নির্মাণ করে শিক্ষার্থীদের আবাসিক সমস্যা সমাধানের পদক্ষেপ নেয়া যাবে।
জানানো হয়েছে প্রস্তাবিত ভূমি পাওয়া গেলে সেখানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং জাতীয় চার নেতার নামে জাদুঘর, গবেষণাকেন্দ্র, সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এবং আবাসিক হল নির্মাণ করা হবে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয় নেতৃবৃন্দের জন্ম-মৃত্যু দিবস পালনসহ তাঁদের স্মৃতি রক্ষার্থে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করবে। এ কাজটি অন্য যেকোন প্রতিষ্ঠানের চেয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ই ভালোভাবে করার সক্ষমতা রাখে বলে একাডেমিক কাউন্সিল মনে করে। বর্তমানে প্রায় ২০,০০০ ছাত্র-ছাত্রী এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন। এসব ছাত্র-ছাত্রীর অধিকাংশই নিম্ন -মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন আবাসিক হলের সুবিধা না থাকায় শিক্ষার্থীদের পক্ষে দূর-দূরান্ত থেকে যানবাহনে চড়ে ক্যাম্পাসে আসা যেমন কষ্টসাধ্য তেমনি ক্যাম্পাস সংলগ্ন এলাকা অত্যন্ত ব্যয়বহুল হওয়ায় তাদের পক্ষে সেখানে বাসা ভাড়া করে/মেসে অবস্থান করাটাও অত্যধিক কঠিন। ফলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য আবাসিক হল নির্মাণ করা অত্যন্ত জরুরি।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের দাবি খুবই পুরনো। মাঝে মাঝে এই আন্দোলন গড়ে উঠে। ২০০৫ সালে কোনো ধরনের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ছাড়াই তড়িঘড়ি করে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করার জন্য জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। অন্যান্য নতুন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় যেভাবে প্রতিষ্ঠা করা হয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে তা হয়নি। ফলে আবাসিক হলের সমস্যাটি জন্মগত। দেড়শত বছরের ঐতিহ্যবাহী কলেজ ছিল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। মাত্র সাড়ে সাত একর জায়গার উপর ২০ হাজার শিক্ষার্থীদের অধ্যয়নের বিষয়টি চিন্তা না করেই কলেজ থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হয়। ফলে প্রতিষ্ঠাকালীন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের আদলে তৈরি করা হয়। আর যাই হোক বর্তমান সরকার শিক্ষা থাতে তাদের সর্ব্বোচ উদার মনমানসিকতার পরিচয় দিয়েছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ও সরকারের সে নজর পড়েছে। এর অংশ হিসেবে আমরা দেখি, অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ই রাষ্ট্রীয় খরচে চলবে- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তা নিশ্চিত করেন।
হল আছে হল নাই
তৎকালীন জগন্নাথ কলেজের ১২টি হল ছিল। কিন্তু ২০০৫ সালের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আগেই হলগুলো বেহাত হয়ে যায়। বিভিন্ন ভূমিদস্যূ, ব্যবসায়ী এবং প্রভাবশালীরা এসব হল দখল করে কাগজপত্র তৈরি করে নেয়। বর্তমানে কয়েকটি হল উদ্ধার করা হলেও বাকিগুলো এখন বেহাত রয়েছে। তবে এটাও সত্য যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের হল উদ্ধারের দায়িত্ব শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের হওয়া উচিত নয়। কারণ শিক্ষক-শিক্ষার্থদের পক্ষে হল উদ্ধার সম্ভব নয়। নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়। হলগুলো উদ্ধারের দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে। শিক্ষকরা পড়াবেন শিক্ষার্থীরা পড়বেন। কাজেই এদিক থেকে বিবেচনা করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক সমস্যা সমাধানের পথ সরকারকেই দেখাতে হবে।
যে কারণে পুরনো কারাগারে হলের স্বপ্ন যৌক্তিক
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল যে প্রস্তাব দিয়েছে, তা অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গত। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চাইলেই এই মুহূর্তে হলের সমাধান করে দিতে পারে না। এক্ষেত্রে চাই সরকারের সুনজর। সরকারই একটু আন্তরিক হলেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যলয়ে দীর্ঘদিন থেকে চলে আসা আবাসন সমস্যার সমাধান হতে পারে। কারাগারের জায়গাই হতে পারে এই সময়ের জন্য হলের সমস্যা সমাধানে উপযুক্ত পাথেয়। কেন্দ্রীয় কারাগারের জমিতে সরকার বঙ্গবন্ধু স্মৃতি কারাগার জাদুঘর এবং জাতীয় চার নেতা স্মৃতি কারাগার জাদুঘর নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিসন্দেহে ভালো উদ্যোগ। সেই উদ্যাগের সাথে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত তা আরো যুগোপযোগী, যুক্তিসঙ্গত এবং টেকসই হবে। জাদুঘরের পাশাপাশি আবাসকি হল হলে শিক্ষার্থীরা আমাদের জাতীয় নেতাদের আরো কাছে থেকে জানার চেষ্টা করবে। তরুণরা ইতিহাস ঐতিহ্যের মধ্যে বেড়ে উঠুক -এমনটি আমরা সবাই চাই। শিক্ষার্থীদের দাবি সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে না দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধানে দেয়া হোক।
জগন্নাথ বিশ্বাবিদ্যালয়ের সঙ্গে মিশে আছে ড. দীনেশ চন্দ্র সেন, আতাউর রহমান খান, ড. আনিসুজ্জামান, শাহরিয়ার কবির, শেখ ফজলুল হক মনি, ব্রজেন দাশ, কাজী ফিরোজ রশীদ, ডা. মোস্তফা জালাল মুহিউদ্দিন (সাংসদ), মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, নজরুল ইসলাম বাবু (সাংসদ), আলী ইমাম, প্রবীর মিত্র, এটিএম শামসুজ্জামান, ফকীর আলমগীর, হায়দার হোসেন (শিল্পী) ছাড়াও দেশে-বিদেশে বিখ্যাত অনেকের নানা স্মৃতি। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যমান আবাসন সমস্যা সমাধানের জন্য পুরনো ঢাকায় পর্যাপ্ত কোনো জায়গাও নেই। দখলকৃত হলের কয়েকটি উদ্ধার করা হলেও সেগুলোতে শিক্ষার্থীদের অবস্থান করার জন্য পরিবেশ নেই। কাজেই নতুন হল নির্মাণ ছাড়া আর কোনো পথ দেখা যাচ্ছে না। আর একটি বিষয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এতো সংখ্যক শিক্ষার্থীর আবাসিক হলের ব্যবস্থা তাৎক্ষণিকভাবে করতেও পারবে না। কাজেই শিক্ষার্থীরা পুরনো কারাগারের জায়গার যে দাবি তুলেছে, তা সরকারকে বিবেচনা করতে হবে। সরকারের উচিত হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট সমস্যা সমাধানে সঠিক পথ বের করা। সেক্ষেত্রে পুরনো কারাগারের জায়গা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে দেয়া সম্ভব হলে, তাতে কোনো কার্পন্য দেখানো উচিত নয়। কারণ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন সমস্যা দূর করার জন্য পুরনো কারাগারের জায়গাটিই হতে পারে একটি মাইলফলক। আর কারাগারের জায়গা দেয়া সম্ভব না হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সমস্যা সমাধানের অন্য কোনো ব্যবস্থা সরকারকে গ্রহণ করতে হবে। কেবল তাই নয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে একই সাথে বঙ্গবন্ধু এবং জাতীয় চার নেতাদের জীবন ও কর্ম বিষয়ক একটি কোর্স চালু করা যেতে পারে। সকল শিক্ষার্থীদের জন্য কোর্সটি বাধ্যতামূলক করা হবে। একই সাথে গবেষণার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হোক। বর্তমান সরকার জনকল্যাণে নিয়োজিত সরকার। উন্নয়নের সেবা সকলের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিয়ে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে দৃঢ় পরিকর রাজনৈতিক প্রজ্ঞাসম্পন্ন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শিক্ষা খাতে এই সরকারের অবদান আকাশচুম্বী। যথাযথ শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে এই সরকার দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে। শিক্ষাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে সমাধান করছে শিক্ষকদের সমস্যাসহ নানা সংকট। কাজেই বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ সর্বাগ্রে বিবেচনা করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালকে পুনানো কারাগারের জমি প্রদানের সরকার সকল করণীয় ঠিক করবে। এজন্য সকল বাধা অন্তরায় পেড়িয়ে সর্বোচ্চ উদার মনমানসিকতার পরিচয় দিয়ে প্রধানমন্ত্রী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০ হাজার শিক্ষার্থীকে আবাসিক হলের সুবিধার সাথে যুক্ত করবেন – এমনটি প্রত্যাশা।
উন্নয়নের নতুন প্রকল্প
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নয়নের জন্য নতুন একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। যেটা সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছে। কয়েকটি মিটিং করে প্রকল্পের ডিটিপি তৈরির কাজ প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে। এই আড়াইশ’ কোটি টাকার প্রকল্প একনেকে পাস হলে অবকাঠামোগত সমস্যা সমাধানের পথে বড় ধরনের মাইল ফলক হবে। এই আড়াইশ’ কোটি টাকার প্রকল্পে দুই কম্পোনেন্ট রয়েছে। একটি বিশ তলা একাডেমিক ভবন নির্মাণ। বর্তমানে বিজ্ঞান ভবনটি জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এই ভবনটি ভেঙে সেখানে ২০ তলা একটি ভবন নির্মাণ করা হবে। আর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে ছাত্রদের জন্য একটি হল নির্মান করা হবে। এটি সিন্ডিকেটে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এক হাজার ছাত্রের জন্য বড় আবাসিক হল ক্যাম্পাসের আশেপাশে নির্মাণের জন্য জায়গা এবং পরিবেশ নেই। সেজন্য কেরানীগঞ্জে নবনির্মিত জেলখানার বিপরীত দিকে ঢাকা মহাসড়কের পাশেই প্রায় ২৩ বিঘা জমি ইতোমধ্যে ক্রয় করা হয়েছে। আশেপাশের আরো কিছু সরকারি জায়গা মিলে এখন প্রায় ২৫ বিঘা জমির মালিক। এই জায়গায় ছাত্রদের হল নির্মান করা হবে। নতুন আড়াইশ’ কোটি টাকার প্রকল্পে এই দুইটি কাজ করা হবে। এর বাইরেও বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি থেকে শুরু করে লাইব্রেরিতে বইয়ের সবিধাসহ স্থাপত্য নির্মাণ করা হবে। এতে করে অবকাঠামোগত সমস্যা থেকে উত্তোরণ ঘটবে।
প্রশ্নহীন শিক্ষার মান
বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মানোন্নয়ন নির্ভর করে শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের মানের উপর। প্রতিষ্ঠানটির বড় অর্জন হলো এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ ক্রুটিমুক্ত। ডিজিটাল পদ্ধতি অবলম্বনের মাধ্যমেই তা সম্ভব হয়েছে। দেশের সেরা মেধাবী শিক্ষার্থীরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হচ্ছে। কারণ ভর্তি পরীক্ষার মধ্যে যে ক্রুটিবিচ্যুতিগুলো ছিল, সেগুলো বিভিন্নভাবে উত্তোরণ ঘটিয়েছি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। অনেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা অনুকরণীয়ও বলেন। অনেক বিশ্ববিদ্যালয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার পদ্ধতি সম্পর্কে জানছে এবং শিখছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার পদ্ধতি খুবই কার্যকর তার প্রমাণ মিলছে। ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কয়েকটি ব্যাচ বের হয়ে চাকরি করছে। বিসিএস পরীক্ষায় ভাল রেজাল্ট করে কর্ম সংস্থান হয়েছে অনেকেরই।
বেড়ে চলছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আকার
অপর একটি চাওয়ার বিষয় ছিল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা এবং গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইআর) খোলা। এর জন্য একটি ল্যারেটরি স্কুলের প্রয়োজন ছিল। ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট এবং পোগোজ স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির যৌথ উদ্যোগে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। যার ফলে পোগোজ স্কুল এখন পোগোজ ল্যাবরেটরি স্কুল এন্ড কলেজ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় নামে পরিচালিত হচ্ছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এবং পোগোজ ল্যাবরেটরি স্কুল এন্ড কলেজ যৌথ উদ্যোগে একীভূত প্রতিষ্ঠান হিসেবে আবিভূত হওয়ার জন্য সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। ইতোমধ্যে আইইআর- এর পরিচালক দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন। তিনি আইইআর -য়ে নতুন ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের ক্লাস এবং পড়াশুনার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। একই সাথে ওই স্কুলে শিক্ষার মানোন্নয়ের জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন এবং স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত হচ্ছেন।
সাংস্কৃতিক উন্নয়ন
কবি গুরু রবীন্দ্রনাথের কণ্ঠে স্থান পেয়েছে, ‘পুরনো সেই দিনের কথা ভুলবি কি রে হায়…!’ পুরনো দিন যদি সুন্দর হয় তবে তা ভুলে থাকা বড়ই কঠিন। কেননা পুরানকে ডিঙ্গিয়েই নতুনের আগমন। পুরান ঢাকা যেখানে স্বতন্ত্র সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য ছিল, যা আমাদের বর্তমান সভ্যতারই অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। ঢাকাই সংস্কৃতি মানেই পুরান ঢাকার সংস্কৃতি। আর এই পুরান ঢাকার সংস্কৃতি, প্রথা, কৃষ্টি, আনুষ্ঠানিকতা সবকিছুতেই একটা নিজস্বতা আছে। এখানকার ইতিহাস-ঐতিহ্য সবকিছুই ১৯৭১ -পরবর্তীকালে স্বাধীন দেশের রাজধানী হয়ে আশ্চর্য দ্রুততায় বদলে গেছে। বর্তমানে ঢাকার পুরনো নাগরিক ও নতুন নাগরিকদের এক ধরনের সাংস্কৃতিক পার্থক্য হয়। নতুন ঢাকার সংস্কৃতির চাপে পুরান ঢাকার সংস্কৃতি আজ কালের গর্ভে হারিয়ে যাওয়ার মতো। কিন্তু নিজের শিকড় ছেড়ে বড় হয়ে কত দূর যাওয়া যায়? তাই পুরান ঢাকার সংস্কৃতিকে বাঁচানো আজ সময়ের দাবি হয়ে উঠেছে। ইতিহাসবিদরা বলছেন, ঢাকার সংস্কৃতি বদলে গেছে নানাভাবে। আমরা ঢাকাই সংস্কৃতিকে অবহেলা করেছি। এ সংস্কৃতি রক্ষায় সবাইকে সচেতন হতে হবে।পুরান ঢাকার আরেক ঐতিহ্য জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। কালের সাক্ষী হিসেবে পাঠশালা থেকে স্কুল, স্কুল থেকে কলেজ এবং কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয়ে প্রতিষ্ঠানটি পুরান ঢাকাকে সেই হারানো ঐতিহ্য, যশ, খ্যাতি এবং সাংস্কৃতিক বলয় ফিরে আনার হাল ধরেছে। আর এজন্যই বিশ্ববিদ্যালয়টির বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান প্রতিনিয়ত নানা প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। পহেলা বৈশাখ, স্বরসতী পূজা, সাকলাইন উৎসবসহ স্থানীয় এবং জাতীয় পর্যায়ের নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পুরান ঢাকাকে জাগিয়ে তুলে ফের শিকড়ে ফেরার বাসনায় মগ্ন বিশ্ববিদ্যালয়টি। এ যেন এক ঐতিহ্যের হাত ধরে আরেক ঐতিহ্যকে ঘরে ফিরানোর তীব্র তাড়না। পুরান ঢাকার কেন্দ্রস্থল হচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যায়। কিন্তু এই পুরান ঢাকা দৃশ্যপট আজকের মতো ছিল না। ইতিহাস পর্যবেক্ষণে জানা যায়, পুরান ঢাকা একসময় অত্যন্ত সুপরিকল্পিত, সুন্দর ও ছিমছাম একটি শহর ছিলো। কিন্তু মুঘল শাসকদের পতনের পর থেকে পুরান ঢাকা’র ভাগ্যে বিপর্ষয় নেমে আসে। ব্রিটিশ শাসকরা এ শহরের কিছু দেখভাল করলেও নানা অবহেলায় পুরান ঢাকা ধীরে ধীরে তার শ্রী হারিয়ে ফেলছে।
যাতায়াত ব্যবস্থার অগ্রগতি
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় অনাবাসিক হওয়ায় যাতায়াতের জন্য বাসনির্ভর ছিল। বাসের তীব্র সংকট একং স্বল্পতা ছিল। ইতোমধ্যে অনেক রুটে বাস চালু করা হয়েছে। শিক্ষকদের বাসের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। আগে শিক্ষকদের বাদুরঝোলা হয়ে যাতায়াত করতে হতো। এখন শিক্ষকরা আরাম করে অনেকে দূরবর্তী স্থানে বাসে বসে যেতে পারছেন। বাস এখন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, মাওয়াঘাট, নারায়ণগঞ্জ এবং নরসিংদীর দিকে যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন ব্যবস্থা সংকট আরো রয়েছে এবং তা উন্নত হওয়া দরকার। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়িগুলো কয়েকবার আসা-যাওয়া করে। কিন্তু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যা হচ্ছে গাড়িগুলো একবার বের হলে দ্বিতীয়বার আর যেতে পারে না। এর একটি সমস্যা হচ্ছে গাড়ি রাখার জায়গা সংকট। গাড়ির সংখ্যা বাড়ানোর ক্ষেত্রে এটি একটি বড় অন্তরায়। অবাসিক সমস্যার সমাধান রাতারাতি সম্ভব হচ্ছে না। গত পাঁচ বছর পরিবহন সেক্টরে বাস কেনা বন্ধ ছিল। বর্তমান উপাচার্য নতুন বাস কেনার ব্যবস্থা করেছেন। এ বছরই নতুন তিনটি বাস যুক্ত হয়েছে পরিবহনে। ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বাসের ট্রিপ বৃদ্ধি করা হয়েছিল আগে থেকেই। বর্তমানে শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে বিশটিরও বেশি বাস বিভিন্ন রুটে চলাচল করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যমান আবাসিক সংকটের কারণে পর্যাপ্ত পরিবহন সুবিধা বৃদ্ধি করা একটি বড় কাজ। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এতো বছর বয়সেও কোনো এ্যাম্বুলেন্স ছিল না। ইতোমধ্যে একটি এ্যাম্বুলেন্স ক্রয় করা হয়েছে। ছাত্র শিক্ষক এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জরুরি প্রয়োজনে এটি কাজে লাগবে।
প্রকাশনার মাধ্যমে পরিস্ফুটিত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশনার বিষয়ে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। ইতোমধ্যে জনসংযোগ, তথ্য ও প্রকাশনা বিভাবে পূর্ণকালীন একজন পরিচালক হিসেবে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. মিল্টন বিশ্বাসকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তিনি বাংলা বিভাগে নিজেও অনেকে গবেষণা করেছেন। তিনি যোগদান করার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশনা কার্যক্রমে অগ্রগতি সাধিত হচ্ছে। কারণ একটি বিশ্ববিদ্যালয় পরিস্ফুটিত হওয়ার জন্য প্রকাশনা প্রয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আর একটি উদ্যোগ নিয়েছে। শিক্ষকদের যে সব গবেষণামূলক কর্মকা- আছে, সেগুলোর পা-ুলিপি জমা দেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। কয়েকটি পা-লিপি পাওয়াও গেছে। এই সব পা-ুলিপি রিভিউ-য়ের জন্য পাঠানো হয়েছে। পরে এগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশনা হিসেবে বই আকারে বের করা হবে। যে সব গবেষণা প্রকল্প বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন ছিল, সেগুলোরও কয়েকটি রিপোর্ট বিভিন্ন জায়গায় প্রেরণ করেছি। সেসব বিষয়ে মতামত পেলে সেগুলোও প্রকাশ করা হবে। প্রত্যেক বিভাগে বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নাল রয়েছে। কতকগুলো বিভাগ স্বউদ্যোগে জার্নাল বের করছে। সেখানে কেন্দ্রীয়ভাবে বিশ্ববিদ্যালয় পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে। এই সব কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মানোন্নয়নের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রকাশনার মাধ্যমে জ্ঞানভিত্তিক চর্চার বহিঃপ্রকাশ ঘটবে এমন গবেষণা এবং আর্টিকেলের দিকে নজর দেয়া হচ্ছে।
পুরান ঢাকার সেই হারানো জৌলুস ফেরাচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
ইতিহাস বলে ৭০০ থেকে ১২০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ঢাকা অঞ্চলটিতে শহর গড়ে ওঠে। ঢাকার নামকরণের সঠিক ইতিহাস নিয়ে ব্যাপক মতভেদ রয়েছে। কথিত আছে, সেন বংশের রাজা বল্লাল সেন বুড়িগঙ্গা নদীর তীরবর্তী এলাকায় ভ্রমণকালে সন্নিহিত জঙ্গলে হিন্দু দেবী দুর্গার একটি বিগ্রহ খুঁজে পান। দেবী দুর্গার প্রতি শ্রদ্ধাস্বরূপ রাজা বল্লাল সেন ওই এলাকায় একটি মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। যেহেতু দেবীর বিগ্রহ ঢাকা বা গুপ্ত অবস্থায় খুঁজে পাওয়া গিয়েছিলো, তাই রাজা, মন্দিরের নাম রাখেন ঢাকেশ্বরী মন্দির। মন্দিরের নাম থেকেই কালক্রমে স্থানটির নাম ঢাকা হিসেবে গড়ে ওঠে। আবার অনেক ঐতিহাসিকের মতে, মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীর ১৬১০ খ্রিস্টাব্দে ঢাকাকে সুবাহ্ বাংলার (বর্তমান বাংলাদেশ, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ঝাড়খ- এবং উড়িষ্যার বেশকিছু অঞ্চল) রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করেন; তখন সুবাদার ইসলাম খান আনন্দের বহিঃপ্রকাশস্বরূপ শহরে ‘ঢাক’ বাজানোর নির্দেশ দেন। এই ঢাক বাজানোর কাহিনী লোকমুখে কিংবদন্তির রূপ নেয় এবং তা থেকেই শহরের নাম ‘ঢাকা’ হয়ে যায়। পুরান ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান কর্ণধার উপাচার্য শিক্ষাবিদ, কলামিস্ট, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান। এই বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করেই পুরান ঢাকার সেই হারানো জৌলুস ফেরানোর তাগিদে তিনি দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। সংস্কৃতিমনা উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বিশ্বাস করেন, সাংস্কৃতিক জাগরণই পারে সমাজ থেকে সকল অপশক্তি নাশ করতে। সংস্কৃতিই হলো জাতির ধারক এবং বাহক। মানুষের মনুষ্যত্বের বিকাশ এবং সভ্যতার চাকাকে আরো বেগবান করতে সংস্কৃতির ভূমিকা অপরিসীম। আজকাল সমাজে নানা অনাচার, অনিষ্ট ঘটনা এবং মানবতাবিরোধী কর্মকা- সংঘঠিত হচ্ছে। এ সবের মূল কারণ হলো সংস্কৃতির মাধ্যমে মানুষের সুকুমার বৃত্তির চর্চা না হওয়া। যথাযথ সাংস্কৃতিক পরিম-লে বেড়ে উঠা মানুষের দ্বারা অন্যায় কাজ করা সম্ভব নয়। সাংস্কৃতিক চর্চা শিক্ষার অন্যতম অনুসঙ্গ। আর এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা অনেক কিছু অর্জন করে। তার এই সাংস্কৃতিক বিকাশে প্রচেষ্টা ফুটে উঠছে বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা কর্মকা-ে।
সাংস্কৃতিক পরিবর্তনে নতুন বিভাগ চালু
মূলত এই তাড়না থেকে আমরা দেখি ২০১৩ সালের ২০ মার্চ কঠিন চ্যালেঞ্জ নিয়ে উপাচার্য হিসেবে অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করার পর থেকে একাডেমিক এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি পুরান ঢাকা কেন্দ্রিক একটি সাংস্কৃতিক বলয় গড়ে তোলার জন্য এতটুকু পিছপা হননি। সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করে চলেছেন পুরান ঢাকার কল্যাণে। তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় কলেজের সংস্কৃতি থেকে বিশ্ববিদল্যায়ের সার্বিক সংস্কৃতিতে উপনীত হয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। এই স্বল্প সময়ের মধ্যে যথাযথ নেতৃত্ব, প্রশাসনিক দক্ষতা এবং ব্যক্তি পরিচিতির মাধ্যমে অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে পুরান ঢাকার সেই হারানো দিন ফিরাচ্ছেন। অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের আগে সাংস্কৃতিক অনুষঙ্গী- সংগীত, চারুকলা, নাট্য, নৃত্য ও চলচ্চিত্রের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিভাগগুলো ছিল না। তিনি অনুধাবন করেন এসব বিভাগ না থাকার কারণে সাংস্কৃতিক কর্মকা- জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে উপেক্ষিত। একটি পরিপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বিভাগগুলো গুরুত্বপূর্ণ। এমন তাড়না থেকেই উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ে সঙ্গীত, চারুকলা, নাট্যকলা, ফিল্ম এন্ড টেলিভিশন বিভাগ চালু করেন। তিনি বিশ্বাস করেন পুরানো ঢাকায় সাংস্কৃতিক কর্মকা- পুনরুজ্জীবিত করতে এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে সাংস্কৃতিক বলয় গড়ে তোলার ক্ষেত্রে চারুকলা, নাট্য কলা, সঙ্গীত, ফিল্ম এন্ড মিড়িয়া স্টাডিস বিভাগ অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। তার এই স্বপ্নগুলো আজ বাস্তব রূপ নিয়েছে। এইসব বিভাগ খোলার পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক পরিবেশের পরিবর্তন সাধন হচ্ছে। এখন এমন কোনো দিন নেই যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো না কোনো সাংস্কৃতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক তথা শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশের অনুষ্ঠান হয় না। এই সব বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্য দিেেয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক চর্চার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং যুক্ত হচ্ছে পুরানো ঢাকা। পুরান ঢাকাবাসী এই সব আয়োজনে নিবিঘেœ অংশগ্রহণ করছে। পুরান ঢাকায় কাওয়ালি, বাউল, মুর্শিদি, জারি, সারি, উর্দু, গজল ও গানের জলসা হতো। এখন আকাশ সংস্কৃতির প্রভাবে এসব হারিয়ে গেছে। বাদ্যযন্ত্র ঢোল, বাঁশি, সারিন্দা, আড়বাঁশি (মুরলি), করতাল, মন্দিরা, তবলা, শঙ্খ, ডিমর বা ডুগডুগি, মৃদঙ্গ উল্লেখযোগ্য ছিল। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগ সেই অভাববোধ পূরণ করবে।
পুরান ঢাকায় নতুন মাত্রা যোগ
রাজধানীর পুরান ঢাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ঐতিহ্যের স্মারক। কালের পরিক্রমায় সেই ঐতিহ্য হারিয়ে যেতে বসলেও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কিছু কিছু ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির কারণে মানুষ এখন ঢাকামুখী হচ্ছে। ফের নতুন করে পরিচিতি পাচ্ছে এই সব ঐতিহ্যের স্মারক। বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে অবস্থিত পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী স্থান বাহাদুরশাহ পার্ক। আঠারো শতকের সিপাহি বিদ্রোহের ঘটনায় এখানে ১৭ জন সিপাহিকে মৃত্যুদ- দেয়া হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন বাহাদুরশাহ। সে কারণেই পার্কটির নামকরণ করা হয়েছে বাহাদুরশাহ পার্ক। পুরান ঢাকায় একসময় নাম করা বিদ্যালয় ছিল পোগোজ স্কুল। এই স্কুলে পড়াশোনা করেছেন কবি শামসুর রাহমান, কবি কায়কোবাদ, স্যার কেজি গুপ্ত আইসিএস, লাহোর ট্রিবিউনের প্রতিষ্ঠাতা ড. নিশিকান্ত চট্টোপাধ্যায় ও বান্ধব পত্রিকার সম্পাদক কালী প্রসন্ন ঘোষসহ অনেক বিশিষ্টজন। কালের পরিক্রমায় স্কুলটি তার ঐতিহ্যও হারাতে বসলেও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যায় সেখানে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। স্কুলটি এখন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে। একসময় বিউটি বোর্ডিং রাজধানীর কবি-সাহিত্যিকদের মিলনমেলা ও আড্ডার স্থান ছিল। এখানে অনেক কবি-সাহিত্যিক তাঁদের বিখ্যাত কবিতা ও সাহিত্য রচনা করেছেন। ওই বোর্ডিংটি মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক বাহিনীর হাত থেকে রেহাই পায়নি। এ ছাড়া পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী স্থান পাটুয়াটুলী, বুলবুল একাডেমি অব ফাইন আর্টস (বাফা), ঈশ্বর দাস লেন, জুবিলী স্কুল, লালকুঠি, ফরাশগঞ্জ অরফানেজ, রূপলাল হাউস, শ্যামবাজার, রূপলাল দাস লেন, পাঁচবাড়ী, ঢাকা কেন্দ্র, মালাকার টোলা ও শ্যামবাজার ঘাট। সত্যিকার অর্থে এই পুরানো ঢাকাকে কেন্দ্র করেই আজকের নতুন ঢাকার জন্ম। কিন্তু কালের বিবর্তনে পুরান ঢাকা নানা কারণে অনেকাংশে পিছিয়ে রয়েছে। অথচ এই পুরানো ঢাকাই ছিল এক সময় সাংস্কৃতিক কর্মকা-ের মূল কেন্দ্র। বুড়িগঙ্গা ছিল কবি সাহিত্যিকদের সৃষ্টিকর্মের উৎস। অনেক সৃজনশীল মানুষের জন্ম এই পুরানো ঢাকায়। কাজেই এই আদি ঢাকাই ছিল আমাদের প্রসিদ্ধ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। বিউটি বোডিং, আহসান মঞ্জিল, বুলবুল ললিত কলা একাডেমি, জহির রায়হান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রসহ পুরানো ঢাকার নানা সংগঠনগুলো এখন আর আগের মতো সক্রিয় নয়। নানা কারণে এই প্রতিষ্ঠান আজ ঝিমিয়ে পড়েছে।
জবি বিভেদ কমাচ্ছে পুরান ও নতুন ঢাকার
অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শাহবাগ, রমনা, ধানম-িকে কেন্দ্র করে নতুন ঢাকার উৎসব-অনুষ্ঠান, আয়োজন সরগরম থাকে। কিন্তু পুরানো ঢাকায় এই সব উৎসব হয় না বললেই চলে। পুরানো ঢাকার লোকদের যানজট অতিক্রম করে নতুন ঢাকা কেন্দ্রিক সাংস্কৃতিক বলয়ে আসতে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়। এতে অনেকে নতুন ঢাকার উৎসব আয়োজনে আসতে নিরুৎসাহী হন। কাজেই পুরানো ঢাকার লোকজন সাংস্কৃতিক কর্মকা- থেকে অনেকভাবেই বঞ্চিত হচ্ছেন। অথচ ঢাকা শহরের অর্ধেক জনগোষ্ঠীর বসবাস পুরান ঢাকায়। আগে ঢাকায় যাত্রাপালার কথা শোনা যেত প্রবীণদের মুখে। পাড়ার সবাই মিলে আয়োজন করত। অভিজাত পরিবারে বাইজি নাচ, হিজড়ার নাচ ছিল বহুল প্রচলিত। এখন এসব স্মৃতিকে পুরুজ্জীবিত করছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। ক্যাম্পাসে মাঝে মাঝেই আয়োজন করা হচ্ছে যাত্রাপালার। এতে অংশ নিচ্ছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্য কলা বিভাগ এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। এই বিভাগের হাত ধরেই পুরান ঢাকার যাত্রাপালার সেই সুনাম আবার ছড়িয়ে পড়বে। পুরান ঢাকার এই সব অসঙ্গতি এবং সাংস্কৃতিক অভাববোধ মনোযোগের সাথে অনুধাবন এবং অবলোকন করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান। মাত্র তিন বছর আগেও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় তার নিজস্ব সাংস্কৃতিক কর্মকা-ে পিছিয়ে ছিল। জাতীয় উৎসবে এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা পাড়ি জমাত নতুন ঢাকা কেন্দ্রীক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রমনাসহ নানা স্থানে। কিন্তু অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমানের কল্যাণে শিক্ষার্থীরা আজ ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে সকল উৎসব উদযাপন করছে। সেই সাথে পুরান ঢাকাবাসী ফিরে পাচ্ছে তাদের সেই সোনালী দিন। তিন বছর আগে পহেলা বৈশাখে এই পুরান ঢাকায় ফের নতুন করে মঙ্গলশোভাযাত্রার শুভ সূচনা করেছেন অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান। তার এই অগ্রযাত্রা ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লিখা থাকবে।
উৎসব পালা-পার্বণে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
পুরান ঢাকার বাংলা নববর্ষ উদ্যাপনের সেই ঐতিহ্য ফিরানোর চিন্তা-চেতনার অংশ হিসেবে এবারও ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। বাংলা নববর্ষ উৎসব উদযাপনের মধ্য দিয়ে হারিয়ে যাওয়া পুরান ঢাকার ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে সর্বাত্মক প্রয়াস চালাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ জন্য পুরান ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান এবং ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ব্যবসায়ী সংগঠনসহ ৬০ টিরও বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সাংস্কৃতিক সংগঠন নববর্ষ উৎসবে অংশগ্রহণ করবে বলে নিশ্চিত করেছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান। তিনি বলেন, ‘পুরান ঢাকা বাংলার ইতিহাস-ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। একসময় ঢাকার প্রাণকেন্দ্র ছিল পুরান ঢাকা। কিন্তু কালক্রমে এখানকার উৎসবগুলো নতুন ঢাকামুখী হয়ে পড়েছে। আমরা চেষ্টা করছি পুরান ঢাকার উৎসবপ্রবণ মানুষদের সহযোগিতায় সে ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে।’ এবারের নববর্ষে মঙ্গল শোভাযাত্রার মূল থিম ছিল কচ্ছপ। বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা, নাট্যকলা ও সঙ্গীত বিভাগ, উদীচী, সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, আবৃত্তি সংসদ, বিএনসিসি, রোভার স্কাউট, ডিবেটিং সোসাইটি, ফিল্ম সোসাইটি, ইংরেজী বিভাগের উদ্যোগে এবং শিক্ষক, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের উদ্যোগে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও দিনব্যাপী পালাগান অনুষ্ঠিত হয়। নানা ধরনের পিঠা-পুলি ইলিশ-পান্তাসহ পুরান ঢাকার ঐতিহ্য ফুটিয়ে তুলতে ক্যাম্পাস, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক মিলনায়তন (টিএসসি) এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায় বসে বিভিন্ন স্টল। পহেলা বৈশাখে সকাল সাড়ে ৯টায় মঙ্গল শোভাযাত্রা পুরো ক্যাম্পাসসহ পুরান ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে। চারুকলা বিভাগের উদ্যোগে নানা রঙের মুখোশ, মাছ, ময়ূর, দোয়েল, কোয়েল, মাটির হাঁড়ি-পাতিলসহ গ্রামবাংলার বিভিন্ন পশুপাখির নৈসর্গিক দৃশ্য ফুটিয়ে তোলা হয়। নববর্ষ উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ও ট্রেজারার অধ্যাপক ড. সেলিম ভুইয়া বলেন, পুরান ঢাকার হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতেই আমাদের এই আয়োজন। ঢাকায় আগে গ্রামের মতো বৈশাখী মেলা, পূজার মেলা, ঈদ মেলা হতো। গহনা, আলতা, লাল-নীল ফিতে, খেলনা ও খাবার পাওয়া যেত মেলায়। সেই মেলারও আয়োজন থাকছে এবারের নববর্ষ বরণে। পুরান ঢাকার সেই ঐতিহ্যবাহী বাহন ঘৌড়ার গাড়িতে চলাচল করতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ক্যাম্পাসে কোনো অনুষ্ঠান হলেই সম্মুখে থাকে বর্ণিল ঘোড়ার গাড়ি। এতে পুরান ঢাকার সেই ঐতিহ্য আর হারানো ভয় নেই।
পুরান ঢাকা ও জবির একসাথে চলার প্রত্যয়
আগেকার দিনে রাজা-বাদশারা হাতি নিয়ে যুদ্ধে যেতেন। তারা প্রতিপক্ষকে আক্রমণ করে কুপোকাৎ করতেন হস্তি বাহিনী দিয়ে। ৩০০ হাতি নিয়ে আলেকজান্ডারকে বাংলা থেকে বিতাড়ন করে বাংলা বিজয় করা হয়েছিল। সেই কাহিনী তুলে ধরে এবং হাতিকে সামনে রেখে ২০১৫ সালেও বর্ষবরণে বিশাল মঙ্গল শোভাযাত্রা করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। এছাড়াও শোভাযাত্রায় ঘোড়া, ফোক পাখিসহ বিভিন্ন পশুপাখি এবং সিকা, সরা, অলংকৃতপাত্রসহ গ্রাম বাংলার নৈসর্গিক দৃশ্য ফুটিয়ে তোলা হয়। পুরানো ঢাকার ৩০টির বেশি স্কুল, কলেজ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক, ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিরা এতে অংশগ্রহণ করেন। এছাড়াও সম্প্রতি ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা আর নানা আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে উদযাপিত হয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম উৎসব সরস্বতী পূজা। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় পূজা কমিটির উদ্যোগে এ পূজার আয়োজন করা হয়। ক্যাম্পাসে এতো ছোট জায়গার মধ্যে প্রায় ৩২টি ম-পে স্বরসতী পূজা সুষ্ঠুসুন্দর এবং মনোরম পরিবেশের মধ্য দিয়ে উদযাপন হয়েছে। সেখানে পুরান ঢাকার হাজার হাজার লোকের সমাগম ছিল। গভীর রাত পর্যন্ত পুরান ঢাকাবাসী এই উৎসবে মেতে উঠে। এতে পুরান ঢাকাবাসীর মনের আশা আকাঙ্খা পূরণ হচ্ছে। আর এর মধ্য দিয়েই এক ধরনের সাংস্কৃতিক পরিবর্তন সাধন হচ্ছে। কিছু দিন আগে বিশ্ববিদ্যালয় বসন্তবরণ উৎসব উদযাপন করা হয়েছে। এছাড়াও জাতীয় দিবস এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠানসহ নানা পালা পার্বনে নানা উৎসবের আয়োজন করা হয়। ইতিহাস বলে পুরান ঢাকার মানুষ অত্যন্ত সংস্কৃতিমনা। তাদের জীবনে সাংস্কৃতিক কর্মকা- গুরুত্বপূর্ণ। কাওয়ালি, নাচ-গান, বাদ্য-বাজনা ইত্যাদি তাদের সংস্কৃতির অবিচ্ছিন্ন অঙ্গ। ঢাকাবাসী আগুন খেলা আয়োজন করত। এখনও বিভিন্ন মিছিলের সামনে আগুন খেলা দেখানো হয়। মোরগ ছাড়া হয় লড়াইয়ের জন্য। ১৮ মাস বয়স হলে লড়াইয়ের জন্য মোরগগুলোকে তৈরি করা হয়। এ জন্য লড়াকু মোরগ পালন করা হয়। পুরান ঢাকার আকাশে উড়ত সাপ, মাছ, ঢোপ, চোঙ, মানুষ, উড়োজাহাজসহ আরও কত জাতের ঘুড়ি। এখন এতো বৈচিত্র্য না থাকলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এই সব সংস্কৃতি ফিরিয়ে আনতে দৃঢ়ভাবে সচেষ্ট ।
হচ্ছে সুকুমারবৃত্তির চর্চা
এছাড়াও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে ডিবেটিং ক্লাব, আবৃত্তি সংসদ, চলচ্চিত্র সংসদ, বাঁধন, উদীচী, সাংবাদিক সমিতি, ফটোগ্রাফি সোসাইটি, বিএনসিসিসহ অন্যান্য সংগঠন। এই সব সংগঠন অত্যন্ত শক্তিশালী। প্রায়ই তাদের প্রোাগ্রাম থাকে এবং তাদের কার্যক্রম অত্যন্ত গতিশীল। তাদের কার্যক্রমে শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের অংশগ্রহণ অনেক বেশি। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা নেতৃত্বের গুনাবলী এবং সাংগঠনিক দক্ষতা অর্জন করছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার শিক্ষার্থীদের তুলির আঁচড়ে ফুটে উঠবে পুরানো ঢাকার সার্বিক চিত্র। কিংবা ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগের শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে নির্মিত হবে পুরানো ঢাকা কেন্দ্রিক নাটক, সিনেমা, শর্টফিল্ম, ডকুমেন্টারিসহ নানা বিষয়। সংগীত এবং নাটকে মুখর থাকবে পুরানো ঢাকা। সেদিন আর বেশি দূর নয়। কয়েকদিন আগেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাপক আয়োজনের মধ্য দিয়ে সঙ্গীত উৎসব উদ্যাপন করা হলো। কাজেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিকাশমান এই সাংস্কৃতিক কর্মকা-ে নতুন ঢাকার লোকজন ফের পুরানো ঢাকামুখী হবে, এমন সময় খুবই সন্নিকটে। পুরান ঢাকা বাংলাদেশের অন্যতম বাণিজ্যকেন্দ্র। এখানকার চকবাজার এলাকায় সব রকমের পণ্যসামগ্রীর বিপণন হয়। ঢাকা মহানগরী এবং দেশের অন্যান্য অঞ্চলের শপিং মলগুলো এখান থেকেই তাদের বেশিরভাগ মালামাল ক্রয় করে। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো হলো – নয়াবাজার, মিটফোর্ড, সিদ্দিকবাজার, আলুবাজার, নবাবপুর, পাটুয়াটুলী, সদরঘাট, বংশাল ইত্যাদি। এখানকার স্থানীয় অধিবাসীরা মূলত ব্যবসায়ী। বংশ পরম্পরায় তারা ব্যবসা করে আসছে। বহিরাগত অনেক লোক এখানে চাকুরী করে থাকে। কাজেই এই পুরান ঢাকা গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে হারানো সংস্কৃতি পুনরুজ্জীবিত করলে এই এলাকা থেকে নানা অনাচার, আনাকাঙ্খিত ঘটনা হ্রাস পাবে। মানুষের রুচিবোধ বাড়বে। বাড়বে নৈতিকতা এবং দৃঢ় হবে সুকুমার বৃত্তিগুলো।
জবির হাত ধরেই পরিচিতি পাচ্ছে পুরান ঢাকা
আমাদের সৌভাগ্য, বাংলা ভাষার অন্যতম প্রধান কবি, বাংলাদেশের স্বাধীনতার কবি শামসুর রাহমানের অন্যতম পরিচয় তিনি ঢাকার কবি। ঢাকা শহর তার কবিতায় এক অনাগত শিল্পসাফল্যে হাজির হয়েছে; অনাগত মহাকাল বারবার এই সত্যটি উদ্ঘাটন করবে। শামসুর রাহমানের কবিতায় ঢাকা নগরী তার নানা বর্ণের রূপ ও অনুষঙ্গ নিয়ে হাজির হয়েছে। অবশ্যই বুড়িগঙ্গা তীরে অবহিত পুরান ঢাকার মূল সত্তা কবির চেতনাকে নিবিড়ভাবে আচ্ছন্ন করে রেখেছে, তার জীবন ও কাব্যচেতনার শেকড়ও এ শহরে। এ পুরান ঢাকার মাহুতটুলিতে কবির জন্ম । তিনি মাহুতটুলিতেই বড় হয়েছেন এ প্রাচীন শহরের একান্ত নিজস্ব ‘মুঘল-বাঙালি’ সংস্কৃতির আবহাওয়ায়। বুড়িগঙ্গা তীরের পুরান শহর ঢাকার একান্ত নিজস্ব আধুনিকতা তার অনুভবকে সমৃদ্ধ করেছে। কেবল সাংস্কৃতিক কর্মকা-েও নয়, প্রয়োজনের তাগিদেও এই পুরান ঢাকা তরুণদের কাছে গুরুত্ব পাচ্ছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক সুবিধা না থাকায় শিক্ষার্থীদের অবস্থান করতে হচ্ছে এই পুরান ঢাকার নানা অলিগলির বাসাবাড়িতে। এর এই কারণে একেবারে মফস্বল এলাকা থেকে আসা শিক্ষার্থীরা জানতে পারছে পুরান ঢাকার ইতিহাস, দেখতে স্মৃতিমাখা ঐতিহাসিক নানা স্থান ও প্রতœতত্ত্ব নির্দশন। বলতে গেলে পুরান ঐতিহ্যের সাথে বেড়ে উঠছে নতুন প্রজন্ম। এতে শিক্ষার্থীরা আদি ঢাকার ইতিহাস ঐতিহ্যে, সংস্কৃতি, প্রথা, কৃষ্টি, আনুষ্ঠানিকতা সবকিছুর সাথে সখ্যতা গড়ে তুলছে। এতে পুরান ঢাকা আরো সমৃদ্ধ হচ্ছে। পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ্ পার্ক, জিঞ্জিরা প্রাসাদ, হোসেনী দালান, শাঁখারি বাজার, রুপলাল হাউজ, লালকুঠি, সদর ঘাট, ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল, তারা মসজিদ, বেগমবাজার মসজিদ, চকবাজার শাহী মসজিদ, আর্মেনীয় গীর্জা, ঢাকেশ্বরী মন্দির, বলধা গার্ডেন, লালবাগ কেল্লা, আহসান মঞ্জিল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখর থাকে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশেই রয়েছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম কলেজ, মহানগর মহিলা কলেজ, সোহরাওয়াদী কলেজ, ঢাকা মুসলিম হাইস্কুল, ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল, সেন্ট ফ্রান্সিস স্কুলসহ নানা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এই সব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক কর্মকা-ে অংশগ্রহণের মাধ্যমে নিজেদেরকে বিকাশিত করার সুযোগ পাচ্ছে।
জবিই রক্ষা করবে পুরান ঢাকার সংস্কৃতি
পুরান ঢাকার মানুষ খুব ভোজনরসিক। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও পুরান ঢাকার খাবারের সাথে পরিচিত হয়ে উঠছে। মোঘল প্রাদেশিক রাজধানী হিসেবে অনেক আগে থেকেই উত্তর ভারতীয় খাবারগুলো এখানে জনপ্রিয়। এখানকার উল্লেখযোগ্য খাবারগুলো হলো টিক্কা, জালি কাবাব, কাঠি কাবাব, শাম্মি কাবাব, বটি কাবাব, নার্গিস কাবাব, শিক কাবাব, দই-বড়া, মুরগি মোসাললাম, খাসির পায়া, কাচ্চি বিরিয়ানী, পাক্কি বিরিয়ানী, মোরগ পোলাও, নান রুটি, বাকরখানি বা সুখা রুটি, নিহারি, বোরহানী, লাবান ইত্যাদি। এছাড়াা নান্না বিরিয়ানী, হাজীর বিরিয়ানী উল্লেখযোগ্য। বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো আয়োজন হলেই এই সব খাবারের উপস্থিতি ক্যাম্পাসে দেখা যায়। পুরান ঢাকায় তাজিয়া মিছিল, আগুন খেলা, মেলা, মোরগ লড়াই, কবুতরের লড়াই, গানের আসর ছাড়াও পহেলা বৈশাখে ঘুড়ি উৎসব ছিল। এক ভবন থেকে ঘুড়ি ওড়ালে আরেক ভবন থেকে সুতার মারপ্যাঁচে তা কেটে দেওয়া হতো। পুরান ঢাকার উৎসবে যেভাবে সাজানো হতো, এভাবে সাজানো অন্য কারও দ্বারা সম্ভবও ছিল না। লাঠি খেলা, মোরগ লড়াই, গোল্লাছুট, কানামাছি, লুডু ও বৌছি হারিয়ে গেছে। ব্যবহার্য জিনিসপত্র :বদনা, বালতি, সুরই, জগ, গ্লাস, আসবাবপত্র ইত্যাদিতে খানদানি ভাব আনতে সচেষ্ট তারা। এসব নিদর্শনের নির্মাণশৈলী এবং কারুকার্য দেখলে মুগ্ধ হতে হয়। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় পুরান ঢাকায় এসব আসবাবপত্র ব্যবহার ও সংরক্ষণেও সচেষ্ট হবে বলে বিশ্বাস।
বের হচ্ছে দক্ষ মানবসম্পদ
শিক্ষার মান বজায় রাখতে হলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর পাশাপাশি রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকাটা জরুরি। এক্ষেত্রে ক্যাম্পাসের পরিবেশ সব সময় সুষ্ঠু এবং স্বাভাবিক। শিক্ষার্থীদের রেজাল্ট, কর্মসংস্থানের দিক দিয়ে তারা কী ধরনের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারছে, যোগ্যতায় ও প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারছে কিনা- এসবই পর্যালোচনা করা দরকার। অবকাঠামো উন্নয়নের নামে দালান-কোঠা বানিয়ে দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার স্বপ্ন না দেখে বরং দেশময় কিংবা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে হবে লেখাপড়ার উচ্চ মান; শিক্ষকদের গবেষণা ও প্রকাশনার অভিনবত্ব। আগামীর দিনগুলোতে উচ্চ মানসম্মত লেখাপড়া, পরীক্ষা ও ফলাফল নিয়মিতকরণ এবং শিক্ষকদের জ্ঞান অন্বেষী মনোভাব- আপাতত এটুকু হলেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় গৌরবের শিখরে আরোহণ করতে সক্ষম হবে। ইতোমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরেই অবস্থান করে নিচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। ৩৫তম বিসিএস পরীক্ষায় দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। এছাড়া সম্প্রতি শেষ হওয়ার পুলিশের এসআই পরীক্ষায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ সংখ্যক শিক্ষার্থী উর্ত্তীর্ণ হয়েছে।
নেস্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে
অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমার স্বপ্ন এই এলাকার সাংস্কৃতিক কর্মকা- ও বিনোদনের উৎস হবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। তার সেই স্বপ্ন আজ বাস্তবায়নের পথে। তার হাত ধরেই পুরান ঢাকা ফের হারানো ইতিহাস এবং ঐতিহ্য ফিরে পাচ্ছে। এখানকার অধিবাসী ফের তাদের শিখরে ফিরছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এই এলাকায় সাংস্কৃতিক কর্মকা-ে নেতৃত্ব দিচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় কেবল জ্ঞান অর্জন এবং বিতরণের ক্ষেত্র নয়, বরং জাতীয় জীবনের সংস্কৃতি, কৃষ্টি, কালচার, ইতিহাস, ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। সেই লক্ষ্যেই এগিয়ে চলছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যেমন একটি জাতি গঠনে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে, তেমনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এই ঢাকার সংস্কৃতিকে জিইয়ে তুলছে। আর এর নেপথ্যের মানুষ উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং সরকারের সার্বিক কল্যাণে আরো এগিয়ে যাক জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদানে আরো সমৃদ্ধ হোক আমাদের জাতীয় ইতিহাস ঐতিহ্য। হলের ব্যবস্থা হলে সম্পন্ন তড়িত গতিতে এগিয়ে যাবে জগন্নাথ বিশ্বদ্যিালয়। বর্তমান সরকার চলমান হল আন্দোলনে ইতিমধ্যে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে। তবে শিক্ষার্থীরা যেন আশ্বস্ত হয়ে ক্লাসে ফিরেন-সরকারের পক্ষ থেকে এমন ঘোষণা আসাই কাম।
লেখক- প্রভাষক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়