বিডি নীয়ালা নিউজ(২৯ই এপ্রিল১৬)-বিনোদন ডেস্কঃ বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বর্ষের ছাত্রী ছিলেন কাশ্মীরের মেয়ে মুরসিলিন পীরজাদা। পশ্চিমা পোশাক পরা ২৩ বছর বয়সী অত্যন্ত সুন্দরী এই তরুণীর স্বপ্ন ছিল বলিউড ছবির নায়িকা হওয়া। প্রস্তাবও পেয়েছিলেন বলিউডের বিখ্যাত প্রযোজনা সংস্থা ইয়াশ রাজ ফিল্মের পক্ষ থেকে।
বর্তমানে সেই মুরসিলিন পীরজাদার জীবন বদলে গেছে। এখন তিনি পশ্চিামা পোশাক ছেড়ে নিয়মিতই বোরখা পরে চলাফেরা করেন। বলিউড সিনেমার নায়িকা হওয়ার বদলে এখন তার চোখে মুখে একটাই স্বপ্ন, তিনি একজন ইসলাম ধর্মের প্রচারক হতে চান। ইয়াসমিন মুজাহিদ নামের এক মিসরীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন ধর্মপ্রচারক, যিনি ইসলাম নিয়ে লিখেন ও বক্তৃতা দেন তার মতো হওয়া বাসনা এখন এই তরুণীর।
বর্তমানে তার ফেসবুক প্রোফাইল পিকচারে তাকে বোরখা দ্বারা আবৃত অবস্থায়ই দেখা যায়। এছাড়া এই তরুণী এখন ডা. জাকির নায়েক পরিচালিত প্রতিষ্ঠান আইআরএফ-এর বক্তা। ভারতের মুম্বাইতে তিনি জনসাধারণের উদ্দেশে ইসলাম সম্বন্ধে বক্তৃতা দিয়ে থাকেন।
তবে অনেকেই প্রশ্ন করেন, কি এমন ঘটেছিল তরুণী পীরজাদার জীবনে, যার জন্য হঠাৎ এমন পরিবর্তন? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানিয়েছেন, ‘এই পরিবর্তনটা শুরু হয়েছিল বলিউডের মাধ্যমে। আমার বাবা ফিরোজ পীরজাদা ধনাঢ্য ব্যবসায়ী যিনি ইয়াশ চোপড়াকে বিগত তিন দশক ধরে চিনেন। ২০১২ সালে বাবা আমাকে ইয়াশ চোপড়ার সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। ইয়াশ চোপড়া আমাকে তার সিনেমায় সহকারি পরিচালক পদে কাজ করার প্রস্তাব দেন।’
তিনি জানান, এরপর তিনি ইয়াশ রাজ চলচিত্রের অন্য একটি সিনেমার কস্টিউম সহকারী পরিচালক পদে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন। যেহেতু তারা নতুন মুখদের সিনেমায় নিতে আগ্রহী সেহেতু পীরজাদাকে স্ক্রীন টেস্ট দিতে বলে। পীরজাদা বলল, ‘আমি সেলোয়ার কামিজ পরে ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালাম। হঠাৎ আমি কেমন যেন শারীরিক ও মানসিকভাবে অরক্ষিত বোধ করলাম।’ এরপরই পীরচাদার বোধ হয়, এসব তাকে দিয়ে সম্ভব না।
এরপর ইয়াশ চোপড়ার ছেলে আদিত্য চোপড়াকে পীরজাদা টেক্সট করে জানিয়ে দিল যে, ‘তিনি আর অভিনয় করবেন না এবং সহকারী পরিচালক পদেও কাজ করবেন না। এটা খুবই কঠিন কাজ তার জন্য।’ তারপর পীরজাদা এক কস্টিউম ডিজাইনার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবার সিদ্ধান্ত নিলেন এবং মানিশ মালহোত্রা’র সাথে কাজ করা শুরু করলে।
অক্টোবর ২০১২ এর দিকে ইয়াশ চোপড়া মারা যান। পীরজাদা বলেন, ‘আমার নিকট তিনি একজন শিক্ষকের মতো ছিলেন। তার মৃত্যুতে আমি যেন একটি বিরাট অবলম্বন হারিয়ে ফেললাম। মৃত্যুর চিন্তায় আমি যেন কেমন কেঁপে উঠলাম। নাচ, গান, বিনোদনের ঊর্ধ্বে জীবনে আসলে কী আছে এই সম্পর্কে আমি ভাবতে থাকলাম।’
ওই ঘটনার পর থেকে পীরজাদা মালহোত্রার সাথে কাজ করা বন্ধ করে দিল। তিন চার মাস ধরে শুধু বাসায়ই ছিল। ওই সময় তিনি খুবই বিষাদগ্রস্ত ছিলো। তার সব বন্ধু ওই সময়ে সিনেমা জগতে পাড়ি জমাচ্ছিল। আর সেখানে তিনি সকল প্রকার সুযোগ ছেড়ে দিলেন।’
সে সময় তাদের বাসায় থাকা কাগজের একটি ফাইল দেখলেন। পীরজাদা বলেন, “জিনিসটা আমাদের বাসায় প্রায় ছয় বছর ধরে পড়ে আছে। কেউ একজন জিনিসটা আমাদের দিয়েছিল, কিন্তু আমরা তা খুলে দেখবারও প্রয়োজন বোধ করিনি। তবে ২০১৩ সালের শুরুর দিকে এক সন্ধ্যায় আমি জিনিসটা খুলে দেখলাম’।
তিনি বলেন, জিনিসটি ছিল ডা. জাকির নায়েকের “ইসলামে নারীর মর্যাদা” নামক একটি লেকচারের ট্রান্সস্ক্রিপ্ট। সে আরও বলল, ‘আমি কখনই ধার্মিক ছিলাম না। মাঝে মাঝে নামাজ পড়তাম। কিন্তু ট্রান্সস্ক্রিপ্টটা আমার মনে বিরাট বড় প্রভাব বিস্তার করল। ওইদিন সন্ধ্যায় আমি সেটি পড়ে শেষ করলাম। অবশেষে আমি জীবনের উদ্দেশ্য খুঁজে পেলাম।’
এরপর পীরজাদা অনলাইনে ইসলাম নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করেন এবং নুমান আলি খান ও ইয়াসমিন মুজাহিদের ইউটিউব ভিডিওগুলো দেখেন। তিনি এসব দেখে খুবই আলোকিত বোধ করেন এবং তাদের মতো হওয়ার ইচ্ছে পোষণ করেন। তিনি সে সময়ে ইসলাম সম্পর্কে জানার তাগিদ অনুভব করেন।
২০১৩ সালের মার্চ মাসে তিনি জাকির নায়েকের পরবর্তী ফারহাত নায়েকের তত্ত্বাবধানে আইআরএফ-এর একটি কোর্সে ভর্তি হল। তার ভাষায় তিনি এখন ওই প্রতিষ্ঠানের একজন বক্তা হওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠানের সব থেকে উপরের লেভেলের কোর্স করছেন। কোর্সেরই অংশ হিসেবে তাকে বক্তৃতা দিতে হয়। এখন পর্যন্ত পীরজাদা প্রায় ১০ টি লেকচার দিয়েছেন। বিগত আগস্ট মাসের ১০ তারিখে পীরজাদা তার বাবার সাহায্যে শ্রীনগরে একটি ইসলামিক পিস কনফারেন্স’ আয়োজন করেন।