আজ ঘুম থকে উঠেই ইত্তেফাক পত্রিকার একটি কলাম চোখে পড়ল। যে কলামে উল্লেখ আছে "প্রাথমিক থেকেই দূর্বল ভিত্তি হয় ইংরেজির" এইচ এস সি'র ফলাফলে ইংরেজিতে ভরাডুবির নেপথ্যে "প্রাথমিক শিক্ষা" যে কারণে এইচ এস সিতে ভরাডুবি। এটি নিবন্ধক মহোদয় কি দেখে লিখেছেন জানিনা তবে আমি একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে এটি মেনে নিতে পারি না। তাই লিখলাম -
বিষয়টি নিয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ ক্ষোপে ফেটে পড়ছেন আর ফেটে পড়বেই না কেন? ক্ষোপের কিছু কারণতো আছে। শিশু শিক্ষার্থীদের ক্লাসে কোন ইংরেজি পড়ানো হয় না এবং ১ম ও ২য় শ্রেণিতে ইংরেজি পড়ানো হলেও শিক্ষার্থী তা ধরে রাখতে পারে না। ৩য়-৫ম শ্রেণিতে শিক্ষার্থীদের ইরেজির নির্দিষ্ট সিলেবাস অনুযায়ী পড়ানো হয়, যা শিক্ষার্থীদের ধারণ ক্ষমতার মধ্যে সীমাবদ্ধ এবং ধরে রাখাও সম্ভব। ফলে দেশের বেশিরভাগ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাশের সংখ্যা শতভাগ।
একটি বিষয় হলো, যে শিশুরা যে বয়সে হাইস্কুলে যায় সে বয়সে তাদের ধারণ ক্ষমতা বেশি থাকে, তাহলে হাইস্কুল গুলো কি পড়ান না নাকি ঘোড়া ডিঙ্গিয়ে ঘাস খান কিন্তু নিবন্ধক মেহেদী হাসান একতরফা ভাবে তাঁর নিবন্ধ কলামে শুধু প্রাথমিক বিদ্যালয়কে দায়ী করতে পারেন কি?
শিক্ষার্থীরা হাইস্কুলে দুইটি পাবলিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। একটি হলো অষ্টম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা আর একটি হলো এস এস সি পরীক্ষা। অষ্টম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষায় কতজন শিক্ষার্থী ইংরেজি বিষয়ে অংশগ্রহণ করেছে আর শিক্ষার্থীদের মধ্যে কতজন ইংরেজি বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছে নিবন্ধক মহোদয় এই বিষয়টি খুতিয়ে দেখেছেন কি?
প্রাথমিক শেষ করে ৫ বছর পর মাধ্যমিক পরীক্ষা অর্থাৎ এস এস সি পরীক্ষা হয়। যেটি গুরুত্বপূর্ন পরীক্ষা হিসেবে বিবেচিত হয়। সেই পরীক্ষায় কতজন শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছেন সেটি হিসেব কষে তখন প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে দায়ী করা যেতে পারে।
এখন প্রশ্ন হলো অষ্টম শ্রেণি ও এইচ এস সি' পরীক্ষায় শিক্ষার্থী কিভাবে পাশ করল?
প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করে এসএস সি পর্যন্ত ফলাফল সন্তোষজনক হল এইচ এস সি'তে অকৃতকার্য হলো এটার জন্য দায়ী কে?
এখন আসেন এস এস সি পরীক্ষার একটি জরীপ দেখি-(বিদ্যালয় ভিত্তিক)
সাল শতভাগ পাশ শতভাগ ফল
২০২১ ৫৪৯৮টি ১৮টি
২০২২ ২৯৭৫টি ৫০টি
২০২৩ ২৩৫৪টি ৪৮টি
২০২৪ ২৯৬৮টি , ৫১টি
২০২৫ ৯৮৪টি ১৩৪টি
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যদি ইংরেজি পড়ানো না হয় বা ভিত্তি নড়বড়ে হয় তাহলে এই জরীপে যারা পাশ করেছে তারা কিভাবে ইংরেজি পাশ করল? এইচ, এস সি'র ফলাফলে ইংরেজিতে ভরাডুবির নেপথ্যে "প্রাথমিক শিক্ষা" এটি একতরফা দায়ী করা হয়েছে যা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের হেয় করা হয়েছে। এটি কেন বলেছেন এর নেপথ্যের রহস্য কি? সেটিও জানি না।
পরিশেষে একটি কথাই বলব প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে একতরফা দোষ না দিয়ে সর্বস্তরে কিভাবে শিক্ষার মান উন্নয়ন করা যায় সকলেই চেষ্টা করি।
মো.আজহারুল ইসলাম আল আজাদ
প্রধান শিক্ষক
গাড়াগ্রাম উত্তরপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়।
কিশোরগঞ্জ, নীলফামারী।