Friday, 05 December 2025, 11:18 AM

কালিয়াকৈরে উত্তর রাঙ্গামাটিতে লাল শাপলার স্বপ্নরাজ্য

তুষার আহম্মেদ: গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক ইউনিয়নের উত্তর রাঙ্গামাটি এখন লাল শাপলার অপরূপ সৌন্দর্যে মোড়া। বিস্তীর্ণ জলাভূমি জুড়ে হাজারো লাল শাপলার রঙ যেন প্রকৃতির হাতে আঁকা এক অনন্য শিল্পকর্ম। সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর—এই তিন মাস শাপলার মৌসুমে গ্রামের দৃশ্যপট হয়ে ওঠে অন্য রকম।রবিবার সকাল ৬টার সময় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চারপাশে ছড়িয়ে আছে ভোরের নরম কুয়াশা। শিশিরে ভেজা ঘাসের ডগায় সূর্যের প্রথম আলোর স্পর্শ, আর তার প্রতিফলন পড়েছে শান্ত পানির উপর। সবুজ পাতার ভেলায় অসংখ্য লাল শাপলা পূর্ণ সৌন্দর্যে ফুটে আছে। পানির আয়নায় ভেসে থাকা আকাশের নীলাভ রঙ আর শাপলার লালিমা মিলে যেন তৈরি করেছে এক অপূর্ব জলরঙের ছবি। হালকা বাতাসে ফুলের মাথা দুলছে—যেন নীরবে অভিবাদন জানাচ্ছে নতুন সূর্যকে।


স্থানীয়দের মতে, শাপলার আসল সৌন্দর্য ফুটে ওঠে ভোরে। সকাল ৬টা থেকে ৮টা পর্যন্ত সময়টিই শাপলা দেখার সেরা সময়। এই সময়ে ফুলগুলো পুরোপুরি ফোটে থাকে, আর সূর্যের আলো পড়ার সঙ্গে সঙ্গে রঙ হয়ে ওঠে আরও উজ্জ্বল।


স্থানীয় বাসিন্দা সুজন মিয়া বলেন, “শাপলার মৌসুম এলেই আমাদের গ্রামের সকালটা অন্য রকম হয়ে যায়। ভোরে ঘুম ভাঙে ফুলের সৌন্দর্যে। সকাল ৬টা থেকে ৮টার মধ্যে শাপলা পুরোপুরি ফুটে থাকে, তারপর আস্তে আস্তে পাপড়ি মুড়িয়ে নেয়।”গ্রামের যুবক সিফাত হোসেন জানান, “ভোরবেলা শাপলার রঙ এত উজ্জ্বল হয় যে মনে হয় পুরো গ্রাম যেন লাল কার্পেটে ঢাকা। এই সময়টাই প্রকৃতির সবচেয়ে সুন্দর রূপ।”স্থানীয় তরুণ রাকিব হোসেন বলেন, “বৃষ্টি শেষে পানি জমলে শাপলা ফুটতে শুরু করে। ভোরে এই দৃশ্য এত সুন্দর হয় যে চোখ সরানো যায় না। শুধু ফুল নয়, এটা আমাদের গ্রামের গর্ব।”গ্রামের গৃহিণী আনোয়ারা বেগম বলেন, “শাপলার লাল রঙ আর সকালের শিশির মিলে এমন এক দৃশ্য তৈরি করে, যা মনকে সারাদিন সতেজ রাখে। যেন প্রকৃতির সাজানো বাগানে দাঁড়িয়ে আছি।এলাকার তরুণী সুমাইয়া আক্তার বলেন, “সকাল ৬টায় যখন চারপাশ ভরে যায় লাল শাপলায়, তখন মনে হয় আমরা যেন ছবির ভেতরে আছি। এই দৃশ্য চোখে দেখলে মন ভরে যায়।বিশেষজ্ঞদের মতে, লাল শাপলা শুধু সৌন্দর্যের প্রতীক নয় এটি জলাভূমির জীববৈচিত্র্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। শাপলার নিচে জন্ম নেয় নানা প্রজাতির মাছ ও জলজ উদ্ভিদ, যা স্থানীয় পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে।প্রকৃতিপ্রেমীরা বলছেন, এই শাপলার সৌন্দর্য অক্ষুণ্ণ রাখতে হলে স্থানীয়দের সঙ্গে দর্শনার্থীদেরও সচেতন হতে হবে। ফুল না তোলা, পানিতে ময়লা না ফেলা এবং জলাভূমির প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট না করা এসব মানলেই বছরের পর বছর এই সৌন্দর্য টিকে থাকবে।

// Disable right-click context menu // Disable text selection // Disable dragging of images and text // Disable copy events // Disable common keyboard shortcuts for copying // Check for Ctrl/Command key combinations with C, X, S, or P