Monday, 10 March 2025, 03:35 AM

কবি আজহারুল ইসলাম আল আজাদ-এর লেখা “করোনায় জীবন...

করোনায় জীবন যুদ্ধ

                                         ………….আজহারুল ইসলাম আল আজাদ

গোটা বিশ্ব আতঙ্কে কম্পমান। চিনের উহান শহরে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে যা গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে বলে মিডিয়া সংবাদ মাধ্যমগুলো টিভি চ্যানেলে বুলেটিন আকারে কখনও সংবাদ হিসেবে প্রচার চালাচ্ছে।তারই ফলশ্রুতিতে ১৬ই মার্চ ২০২০ তারিখ বাংলাদেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মসজিদ,মন্দির,গীর্জা,প্যাগোটা সহ সকল উপাসনালয় বন্ধ করে দেয়া হয় প্রতি গ্রামে গ্রামে বাঁশের খুটি দিয়ে লকডাউনের ব্যবস্থা করা হয় এবং সকল যানবাহন দোকান-পাঠ বন্ধ ঘোষনা করা হয়। হ্যান্ড স্যানিটাইজার মাস্ক ব্যবহার ও কুড়ি মিনিট পরপর যে কোন সাবান দিয়ে হাত ধোঁয়ার নির্দেশ স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় কর্তৃক ঘোষনা করা হয়।

লকডাউনের কারনে বন্ধ হয়ে যায় আলোক ব্যাপারীর দোকানটি।

সুর্য ডুবো ডুবো। ঝি ঝি পোকাগুলো যারপর নেই গান শুরু করেছে! সন্ধা ঘনিয়ে আসছে আলোক ব্যাপারীর বাড়ীতে বিদ্যুৎ নেই। বিদ্যুতের লাইন সপ্তাহখানেক হল বিল পরিশোধ না করার কারনে কেটে দিয়েছে। কয়েকদিন থেকে সেই পুরোন টিনের তৈরী নম্পটা ব্যবহার করছে আজ স্ত্রী লতা সন্ধ্যা বাতি দেয়ার জন্য ঘরে প্রবেশ করে সেই পুরোনো টিনের তৈরি নম্পটা খুঁজছে কিন্তু যেখানে নম্পটা থাকার কথা সেখানে খু্ঁজে পাওয়া যাচ্ছে না,রেগে মেগে লতা অস্থির হয়ে বলে ,” করোনা তুমি কোথায় আমাকে নিয়ে যা আর পারি না কেন যে আমার মরন হয় না?” বলে আর খুঁজে বিছানার নিচে চৌকির খুরার নিকট নম্পটা পরে আছে তা দেখতে পেয়ে আস্তে করে তুলে দেখে নম্পটাতে কোন তেল নেই যদিও ছিল তা মাটিতে মিশে গেছে।পলতাটা মাটিতে গড়াগড়ি করে অন্যত্র পরে আছে। তেল বিহীন নম্পটা আর জালাতে না পেরে টর্চ জালিয়ে সন্ধে বাতি দিলেন লতা।
লকডাউনের আগে থেকে স্বামী আলোক ব্যপারী দীর্ঘদিন থেকে পেটের ব্যথায় অসুস্থ তারপরও নিয়মিত দোকানটি খুলে রাখত। বর্তমানে বিছানায় মাছ মারছে বাবারে ও মারে বলে কাতরাচ্ছে আস্তে আস্তে তেলহীন বাতির মত নিবু নিবু করে দিন কাটছে।

তাদের একমাত্র মেয়ে লায়লা। বয়স সবে মাত্র ১২বছর চলছে ! সে ৬ষ্ট শ্রেনির ছাত্রী। সর্বদা বাবার পেটে তেল মালিশ ও মাথায় তেল পানিসহ খেদমত করছে। সে এতটুকু বুঝতে পেরেছে যে তার বাবা পৃথিবী ত্যাগ করা মানে তার মাথার ছাদ না থাকা। এই আবস্থায় সে আরও বুঝতে পারছে যে অভাব কাকে বলে? অার যদি পৃথিবীতে না থাকেন তাহলে কি হতে পারে? আলোক ব্যাপারীর দোকানটাও দীর্ঘদিন থেকে বন্ধ। টাকা পয়সার যতেষ্ট অভাব। কে উপার্জন করবে? উপার্জনকারী একমাত্র আলোক ব্যপারী। ব্যবসা বন্ধ থাকায় অর্থের সংকটে ভুগছে। মেয়েটা যদি ছেলে হত তাহলে হয়ত যে বয়স হয়েছে তাতেই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বসতে পারত।ভাগ্যকে দোষ দিয়ে অঝোর নয়নে কাঁদছেন লতা। এ অবস্থায় তার নিজের করার বা কি আছে?

হাজারো হোক লায়লা কম বয়সের মেয়ে মানুষ তো। তাকে দোকানে বসতে দিতে লতার মন সায় দেয় না।লায়লার বেশি সময় কাটত চাচা ঝলক মিয়ার বাড়ীতে ঝলক মিয়ারও কোন সন্তান নেই। এই লায়লাই হল দুই বাড়ীর আদরের মেয়ে আর চাচীতো তাকে মেয়ের মতই দেখে আর লায়লা বেশী সময় ঝলক মিয়ার বাড়ীতে খাওয়া দাওয়াও করত। বাবার অসুস্থতার জন্য এখন বাড়ীতে থাকে।

আলোক ব্যাপারীর অসুস্থতায় লতা একেবারে ভেঙে পড়েছে। বাবার বাড়ীতে কয়ে বলে দশ হাজার টাকা ধার নিয়ে লতা আলোক ব্যপারীকে মেডিকেলে নিয়ে যায় শারীরিক অসুবিধার বিভিন্ন প্রকারের পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয় তবে তার করোনাও পরীক্ষা করা হয় তবে করোনা নিগেটিভ। তার হয়েছে পেটে আলছার। ডাক্তার ঔষধ লিখেছে তা সেবনে বর্তমানে কিছুটা আরোগ্য।

প্রতিবেশী ছালাম উদ্দিনের ছেলে সাজু মিয়া চিনে লেখা পড়া করতে যায় চিনে করোনা ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন দেশ থেকে আগত ছাত্র-ছাত্রীদের নিজ নিজ দেশে পাঠানো হয় এবং তাদের ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে সরকারী ভাবে রাখার ব্যবস্থা করা হলেও সাজু প্রথমবারের ফ্লাইটে আসার সুযোগ পেল না ২য় বারেও আসার সুযোগ হল না তার।
সেখান থেকে খুবই কস্ট করে সে, তৃতীয় বারের ফ্লাইটে দেশে পৌছিলে তাকে ঢাকায় কোয়ান্টাইনে ১৪ দিন রাখা হয় এবং পরবর্তিতে সে বাড়ীতে আসে। তাকে দেখার জন্য অনেকে আসে কিন্তু তারা সামাজিক দূরুত্ব মেনে তার সাথে কথা বার্তা বলেন। লায়লাও সেখানে যায়, লায়লাকে দেখে সে কাছে ডেকে বসতে বলে লায়লা তার পাশে বসে কথা বলে। লায়লার চেহারায় মনে হয় না সে ১২ বছরের কন্যা, বেশ নাদুশ নুদুশ চেহারা চোখে হরিনী চাহুনি।
গলায় পুতির মালা। মনে হয় ষোল বছরের ষোড়শী। লায়লার রুপ লাবন্যে সাজু মিয়া মুগ্ধ। সাজুর সাথে লায়লা কথা বলতে বলতে চট করে উঠে বাড়ীর দিকে দৌড় দেয়। পিছন থেকে সাজু তাকে ডাকে লায়লা কিছুতেই সারা না দিয়ে চলে যায়।

চৌদ্দ দিন কোয়ারান্টাইনে থাকার পরও সাজু মিয়ার হঠাৎ জ্বর মাথা ব্যাথা গলা ব্যাথা শুরু হয়। বাবা মা প্রতিবেশী এই অবস্থা দেখে ভীষন ভয় পায়। আস্তে আস্তে শ্বাসকষ্ট শুরু হলে গ্রামে ছড়িয়ে পরে সাজু মিয়ার করোনা হয়েছে এ অবস্থায় তাকে বাড়ীতে না রেখে মেডিকেলে ভর্তি করা হলে তার শারীরিক পরীক্ষায় ধরা পড়ে তার করোনা পজেটিভ।চৌদ্দ দিন মেডিকেলে থেকে সম্পূর্ণভাবে সুস্থ হয়ে সে বাড়িতে আসে।

এদিকে কয়েকদিন পর লায়লার জ্বর শুরু হলে সাথে খুস খুস কাশি মাথা ব্যাথা গলা ব্যাথা শুরু হয়। মা লতা ভেবে নেয় যে বর্তমানে আবহাওয়ার কারনে হয়ত এমন হচ্ছে বেশ কিছুদিন ধরে ঔষধ খাওয়ার পরও সুস্থ্য না হওয়ায় মেডিকেলে নিয়ে তার করোনা টেষ্ট করা হলে করোনা পজেটিভ হয়েছে বলে
পরীক্ষার ফলাফল আসে। মা লতা মেয়ের এমন ফলাফল দেখে মুর্চা খেয়ে পরেন। লায়লা দৌড় দিয়ে চায়ের দোকান থেকে এক গ্লাস পানি নিয়ে এসে চোখ মুখে ছিটালে মা চোখ খুলেন। বিকেল বেলা মা ও মেয়ে বাড়ীতে ফিরে আসেন। টাকার অভাবে মেডিকেলে তাকে ভর্তি করানো সম্ভব হল না।
এভাবেই করোনা সারা দেশময় ছড়িয়ে পড়ে।

// Disable right-click context menu // Disable text selection // Disable dragging of images and text // Disable copy events // Disable common keyboard shortcuts for copying // Check for Ctrl/Command key combinations with C, X, S, or P