Monday, 10 March 2025, 03:29 AM

কবি প্রকাশ চন্দ্র রায়-এর কবিতা চৈতালী

চৈতালী

……………….প্রকাশ চন্দ্র রায়

নামটা পড়েই চমকে উঠলাম।
ছবিটা দেখে তো হার্টবিট বেড়ে গেল দ্বিগুণ।
চৈতালী রায়।
পাঁচ বছর পূর্বে সরকারী কলেজের ইন্টার ফার্ষ্ট ইয়ার এর ছাত্রী।
সুন্দরী শুধু নয় চৈত্রের রৌদ্র যেন-ছুঁইলেই ফোস্কা পড়ে যাবে হাতে- এতই তেজস্বী রূপসী!চঞ্চলা, মেধাবী; গোল্ডেন ফাইভ পেয়েছে S.S.C তে।
কলেজ চত্বরে প্রবেশ প্রস্থানের গতিটা যেন উত্তাল স্রোতস্বিনীর মত।
ছাত্ররা তো বটেই রিটায়ার্ড এর পথে প্রফেসররাও চাতকের মত অপেক্ষায় থাকে চৈতালীর দর্শন প্রত্যাশায়।
আমি ইন্টার ফাইনাল ইয়ারে
বেশ নাম ধাম আছে কলেজে।
তা ছাড়া বাবা সুদীপ্ত চৌধুরী কলেজের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি,ডাকসাইটে বিজনেস ম্যাগনেট।
তার ছেলে প্রদীপ্ত চৌধুরী বলে কথা।
আমাকে না চেনা মানে, সে তার দুর্ভাগ্য।
সে ছাত্র-ছাত্রীই হোক কিংবা শিক্ষক -শিক্ষিকা।
খেলাধূলা, সঙ্গীত, সাহিত্যসহ কলেজের যাবতীয় ফাংশন এই প্রদীপ্ত চৌধুরীকে ছাড়া কেউই কল্পনা করতে পারে নি সে সময়।
মৌসুমি, মন্দিরা, সুমা, সাথী, রাখি, সুলেখা এরা প্রায় দশ বারো জন আমার প্রেম প্রত্যাশী।
শুধু প্রেমপ্রত্যাশীীই নয়, বলা চলে শারীরিক সান্নিধ্য প্রার্থীনিও।
একটু সুযোগ পেলেই এদের সবাই আমাকে ছুঁয়ে দেওয়ার প্রতিযোগিতায় নামতো।
এত যে সুন্দরী, অসুন্দরী, অতি সুন্দরীরা কল্পনায় হাবুডুবু খাচ্ছে আমার প্রেমে-একহাতে তালি বাজাচ্ছে তারা।
আমার কিন্তু মোটেও ভ্রুক্ষেপ নেই সেদিকে।
তার যথেষ্ট কারণও ছিল।
বিখ্যাত বড়লোকের একমাত্র ছেলে হওয়া সত্ত্বেও আমার চেহারাটা ছিল শরৎচন্দ্রের ‘পথের দাবী’র সব্যসাচী কিংবা ‘দত্তা’ উপন্যাসের নরেন ডাক্তারের মত হ্যাংলা পাতলা।
রংটা ছিল কালো নাকি শ্যামলা-এত ব্রিলিয়ান্ট ছাত্র হয়েও আজ পর্যন্ত স্থির করতে পারিনি আমি।
চোখ দু’টো কোটরাগত, গাল দু’টো চোপসানো আব্রাহাম লিঙ্কনের মত, শারীরিক গঠনও একই, নাকটা থ্যাবড়া।
কপাল প্রশস্ত, কিছুটা উজ্জ্বল।
কপালের উপরে আমার একমাত্র গর্বের ধন-ঘনকালো মসৃণ ব্যাকব্রাশ করা চুল।
শরীরের নিরানব্বই শতাংশ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নিয়েই অসুখী ছিলাম আমি,
শুধু এক শতাংশ নিয়ে আজও গর্ববোধ করা যায়,
সে আমার চুল! চিকন চিবুক ঢাকার উদ্দেশ্যে চিবুকঢাকা লম্বা চুল রাখতাম মাথায়।
সে চুলের পরিচর্যারও বিশেষ প্রয়োজন হত না,
এমনকি চিরুনী দিয়ে আচড়ানোরও প্রয়োজন পড়তো না;
শুধু আঙুল চালিয়ে পিছনদিকে হেলিয়ে দিলেই চলতো।
মৌসুমি, মন্দিরা, সাথী, সুমি- আবদার করতো আমার চুল ছুঁয়ে দেখার জন্য-আমিও বিশেষ আপত্তি করতাম না।
সেদিন অকস্মাৎ একটা বিদঘুটে কান্ড ঘটালো সুন্দরী সুলেখা।
কলেজ অডিটরিয়ামে রিহার্সেল চলছে পরের দিনের নবীন বরণ অনুষ্ঠানের।
চৈতালী গাইছে-( যদি বারণ করো তবে গাহিব না-) আমি তাল সংযোগ করছি-( ধা/ধি/না )-( না/থু/না )-( ত্রেকেটে/ধি/না/।
গানের শেষ পর্যায়ে সুলেখা এলো,সাথে সুজন।
সুজনের হাতে মোবাইলের ক্যামেরা অন করা।
পটাপট ছবি তুলছে আমাদের।
সুলেখা আমার একদম কাছে এসে কানের কাছে মুখ এনে ফিস ফিস করে কি যেন বলতে চাচ্ছে,
আমার দু’হাত তো ব্যস্ত ডুগি-তবলায়।
হুট করে সে একটা KISS করে ফেললো আমার গালে।
তাল কেটে গেল, গান থেমে গেল।
অট্টহাসির রোল পড়ে গেল হলভর্তি দর্শক-শ্রোতাদের মাঝে।
ততক্ষণে সুজনের ক্যামেরায় দুই তিনবার শ্যুট হয়ে গেছে।
আমি তো হতভম্ব ঘটনার আকস্মিকতায়!
বেয়াদব সুলেখা তখন বীরদর্পে ঘোষনা দিচ্ছে,
-আমি সুলেখা রাণী, H.S.C পরীক্ষার্থীনি এই মর্মে ঘোষনা করছি যে,
আমি আমার ক্লাসমেট শ্রীমান প্রদীপ্ত কুমার রায় চৌধুরীকে মনেপ্রাণে ভালবাসি I love him heartily। আজ তার উদ্বোধন করলাম।
অদ্য থেকে সে আমার-একান্তই আমার।
আমি ব্যতীত অন্য কেউ যেন তার ধারেকাছে ঘেঁষার চেষ্টা না করে।
চৈতালীর চাঁদমুখে তখন যেন অমাবস্যার ঘন আঁধার ভর করলো।
চোখে ঝরঝর শ্রাবণধারা নিয়ে উল্কাবেগে ছুটে বেরিয়ে গেল সে হলঘর থেকে।
হলভর্তি সবাই স্তম্ভিত, পিনপতন নিরবতা নেমে এলো ঘরে।
আমিও স্তম্ভিত, কিংকর্তব্যবিমূঢ়।
হারমোনিয়াম তবলা যথাস্থানে নিথর পড়ে আছে।
হারমোনিয়ামের উপরে চৈতালীর খোলা ডায়রীর পাতা-সিলিং ফ্যানের বাতাসে উড়ছে।
নিঃশব্দে ডায়রীটা তুলে নিলাম হাতে।
সুলেখার বালখিল্য প্রগলভ আচরন ভুলে ততক্ষণে গুঞ্জন শুরু হয়েছে।
সবার মুখে একই প্রশ্ন- -কি হয়েছে চৈতালীর ?
কেন সে অমন করে কাঁদতে কাঁদতে গেল চলে?
আমি অপার বিস্ময়ে অদম্য কৌতুহলে ডায়রীর পাতা উল্টিয়ে চলেছি।
প্রায় প্রতিটি পৃষ্ঠায় বেশ আর্ট করে লেখা -“আমি তোমার যোগ্য না হলেও.”
“তোমাকেই ভালবাসি” মিস্টার প্রদীপ্ত রায় চৌধুরী।
কোথাও সংক্ষিপ্ত অক্ষরে পাতাভর্তি লিখেছে, -Mr. P. D. Roy Chowdhury.
সেই থেকে অদ্যাবধি চৈতালীর সঠিক কোন তথ্য পাওয়া যায় নি।
মোবাইলও সুইচড্ অফ।
ওর মামার বাসায় থেকে কলেজ পড়তো- তাদের বক্তব্য ছিল- -ঐদিন কাঁদতে কাঁদতে বাড়ীতে চলে গেছে,
আর কোন সংবাদ পাওয়া যায় নি।
সামনে ফাইনাল পরীক্ষার ব্যস্ততার মাঝেও তোলপাড় তুলতো আমার মনে ঐদিনের ক্রন্দসী চৈতালীর দ্রুত প্রস্থান।
চৈতালী যদি আমাকে ভালোই বাসে তবে কেন এতদিন সে আমাকে জানায় নি?
তার এতদিনের ব্যবহারে তো বিন্দুমাত্রও কোন অভিব্যক্তি চোখে পড়ে নি আমার!
আবার মনে হয়েছে নাকি দুর্দান্ত সুলেখা’দের ভয়েই নিভৃত মনে ভালবেসে গেছে সে।
দুরন্ত সুলেখা ডাকসাইটে পুলিশ কর্মকর্তা’র একমাত্র মেয়ে।
ববকাট চুল, স্কীনটাইট জিন্সের প্যন্টের উপর ওড়না ছাড়া টি-শার্ট,
তার উপরে জিন্সের জ্যাকেট পরে ড্যাম কেয়ার মুডে,
সানগ্লাস মাথায় গুজে কলেজের যত্রতত্র ঘুরে বেড়াত।
এসব এলোমেলো ভাবনা ভাবতে ভাবতে চিন্তাজটে আটকে যেত মন।
মাত্র দশ মিনিট আগে ফেসবুক অন করতেই দেখি ফ্রেন্ড রিকোয়েস্টে চৈতালীর নাম।
ছবিতে আগের চেয়ে আরও সুন্দর দেখাচ্ছে।
চমকে উঠলাম- হৃৎপিন্ডটা লাফাচ্ছে ধ্বক্ ধ্বক করে।
তড়িঘড়ি করে Confirm করতে গিয়ে হাত কাঁপতে লাগলো আনন্দাতিশয্যে ।
Confirm করে প্রোফাইলে গিয়ে দেখি..”চৈতালী রায়”।
Bio তে লিখেছে -I am still alone. বাংলায় লিখেছে. -“
চৈত্রের খরা বুকে নিয়ে চৈতালী বিষাদের আঁধারে কাটায় সময় একাকী;
দুঃসহ দুঃখের সাথে তার হয়েছে মিতালী।”
বিস্ময়ের শিখরে বসে ভাবছি… –
তবে কি সেও ফেসবুকে আমার রচিত কবিতাংশটি পড়েছে-
# আমার পৃথিবীতে এখন প্রত্যহ বহে কালবৈশাখী ঝড়–

// Disable right-click context menu // Disable text selection // Disable dragging of images and text // Disable copy events // Disable common keyboard shortcuts for copying // Check for Ctrl/Command key combinations with C, X, S, or P