Monday, 10 March 2025, 08:08 PM

করোনা চিকিৎসায় আশার আলো!

                                                        ……….মাহফুজার রহমান মন্ডল

বিশ্বে মহামারী রূপ ধারণ করার পূর্ব মুহূর্ত থেকে আজ অব্দী কোভিড-১৯ -এর  প্রতিষেধক তৈরির কাজ করে যাচ্ছে নানান দেশ। ইতিমধ্যে কয়েকটি দেশে তা প্রয়োগও চলছে। ফলাফলের আশায় অধীর আগ্রহে অপেক্ষারত মানুষগুলো দিন গুনছে, তাছাড়া বা  উপায় কি? মানুষ যেভাবে মৃতবরণ করছে তাতে বিশ্ব নেতারা হতবাক। কেউ থামায়ে রাখতে পারেনি মৃত্যুর মিশিল তবে চীন তাদের একান্ত প্রচেষ্টায় লকডাউন পর্যন্ত খুলে দিয়েছে।

বেশি দিনের কথা নয় ডিসেম্বরে’১৯ইং -এ চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম শনাক্ত করা হয় করোনা ভাইরাস। এরপর বিশ্বের ২০১টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে প্রাণঘাতী এই ভাইরাস। এ পর্ন্ত এই ভাইরাস -এ আক্রান্ত হয় বিশ্বের ২১ লাখ ৮৫ হাজার জন এবং মৃত্যু বরণ করেছে ১ লাখ ৪৬ হাজারেরও বেশি। তবে আক্রান্ত ও মৃত্যর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে।

বর্তমান বিশ্বের নিকট অতি পরিচিত একটি ভাইরাস যার নাম ‘করোনা ভাইরাস’। অথচ আজ থেকে ৫৬ বছর আগে মানব শরীরে ভাইরাসটি প্রথম শনাক্ত করেছিলেন স্কটল্যান্ডের এক নারী যার নাম জুন আলমেইডা।

করোনা ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট একটি রোগ যার নাম কোভিড-১৯। প্রথম করোনা ভাইরাস শনাক্ত করেছিলেন ড. আলমেইডা ১৯৬৪ সালে লন্ডনের সেন্ট থমাস হাসপাতালের গবেষণাগারে ।

কে জানতো যে এই সেই মরণ ব্যাধি যা আজ তান্ডবলীলা চালিয়ে যাচ্ছে বিশ্বের এপ্রান্ত থেকে ও প্রান্তে। হতাশায় হতাশায় বিশ্ববাসি দিন কাটাচ্ছে, ঘরে ঘরে সবাই বন্ধি।  নিম্ন আয়ের মানুষগুলো আজ রাস্তার ভিখারী তবে সরকারী ও বেসরকারী অনুদানে নিমন্ত্রন করা হচ্ছে। কিন্তু মধ্য আয়ের মানুষগুলো কি করবে? লজ্জায় তারা রাস্তায় দাঁড়াতে পারছে না, পারছে না মুখ ফেটে কিছু বলতে। যাইহোক এসম্পর্কে বললে অনেক কিছু বলা যায়। বর্তমান যে অবস্থা তাতে দুরুত্ব বজায় রেখে সাবধানে চলাচল করাই শ্রেয়।

 লক্ষ মৃত্যুর মাঝেও কোভিড-১৯ চিকিৎসায় কিছু আশার আলো নিয়ে এল নতুন পদ্ধতি। কমপক্ষে ২০টি ভ্যাকসিন তৈরির কাজ চলছে বিশ্বজুড়ে, বলছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। মার্চ’২০ মাসের শেষের দিকে ওষুধ ব্যবহারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে লাইসেন্স দেওয়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা ফুড অ্যান্ড ড্রাগস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) ক্লোরোকুইন ও হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ব্যবহারের বিষয়ে অনুমোদন দেয়। তবে দুই একজন ভালো হলেও  এটা কার্যকারী কমেই পাওয়া গেছে।

এদিকে  মানুষের উপর প্রথম টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ চালিয়েছে বোস্টনের বায়োটেকনোলোজি কোম্পানি মডার্না থেরাপিউটিকস। যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ইয়ান লিপকিন করোনা ভাইরাসের চিকিৎসায় নতুন পদ্ধতির কথা জানিয়েছে। তার মতে, নতুন ‘ব্লাড-প্লাজমা থেরাপি’ নভেল করোনা ভাইরাস চিকিৎসায় ব্যবহার করা যেতে পারে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনবিসি জানিয়েছে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন প্লাজমার মাধ্যমে সম্ভাব্য এ চিকিৎসা পদ্ধতি ইতিমধ্যে চীনে পরীক্ষা করা হয়েছে। প্রচলিত ওষুধের আগেই এর ব্যবহার শুরু হতে পারে। চীনের সংবাদ সংস্থা সিনহুয়া জানিয়েছে, চীনের উহানে গত মাসের শুরুর দিকে একটি মোবাইল হাসপাতালে প্লাজমা দিতে দেখা গেছে করোনাভাইরাস থেকে সেরে ওঠা এক ব্যক্তিকে। এ পদ্ধতি ইতিমধ্যে চীনে প্রয়োগ হচ্ছে।

যাইহোক চীন এখন কন্ট্রোলে এনেছে যেখানে তারা লকডাউন পর্যন্ত উঠিয়ে নিয়েছে। করোনা ভাইরাস এর টিকা আবিষ্কারে অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছে তারা। তারা করোনার সম্ভাব্য টিকা মানবশরীরে পরীক্ষার দ্বিতীয় পর্যায় শুরু করেছে ৷  এ টিকা প্রাথমিক অবস্থায় ৫০০ স্বেচ্ছাসেবী নিজেদের শরীরে নিচ্ছে। 

এদিকে ক্যালিফোর্নিয়ার একদল গবেষক একটি জার্নালে এক তথ্য প্রকাশ করেছে যে ৬৯টি প্রচলিত ঔষুধেই ভালো হয় করোনা। করোনা চিকিৎসায় রাশিয়ার ৬ ওষুধ আবিষ্কার করেছে। জার্মানির একটি বায়োটেক ও চিকিৎসা বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠান কিউরভ্যাকের চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মোতে সবকিছু ঠিক থাকলে জুন-জুলাই-এর শেষে ১ম ১০০ জন ও পরে হাজার খানেক মানুষের উপর পরীক্ষা চালানো হবে।  এরপর সেই টিকা পৌঁছে যাবে সব দেশে।

আমাদের দেশের সন্তান এই ভয়াবহ করোনা আতঙ্কের মধ্যেই সু-খবর দিতে যাচ্ছেন তাঁরা হলেন-  ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের(ডুয়েট) এর তিন গবেষক। তারা বলছেন, দেশীয় উদ্ভিদ ও প্রযুক্তি ব্যবহারে করোনা নিরাময়ে ওষুধ তৈরি সম্ভব। দ্রুত ফল ও গবেষণাকে কাজে লাগাতে সরকারকে উদ্যোগী হওয়ার আহবান গবেষক দলের।

কোভিড-১৯ -এর প্রতিষেধক উদ্ভাবনে বিভিন্ন দেশে  গবেষণা চলছে । আশার আলো দেখাচ্ছে জাপান, তারা তৈরি করেছে একটি ওষুধ  যা সাফল্য এনেছে  বলে তারা দাবিদার। ওষুধটির নাম  ‘আভিগান’ ইহা প্রতিরোধে সক্ষম বলে গবেষকরা দাবি করেন। এই ওষুধ গ্রহণে মাত্র সাত থেকে নয় দিনে একজন রোগী সুস্থ হয়ে যেতে পারেন। 

এছাড়া আশার কথা শুনিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও। বিভিন্ন দেশ ধীরে ধীরে কিভাব স্বাভাবিক জীবন যাপনের দিকে এগোবে তার গাইড লাইন প্রণয়ন করবে। তবে জার্মানি ধীরে ধীরে নিষেধাজ্ঞা তোলার পরিকল্পনা শুরু করবে  আগামী ১৯ এপ্রিলের পরে।  উইরোপে মৃত্যুর মিছিল থাকিলেও সংক্রমকের পরিমান কমছে তাই তারা দিন দিন স্বাভাবিক জীবনযাপনের পরিকল্পনা শুরু করেছে। কিন্তু ইউএসএ -এর অবস্থা এখনো খারাপ মৃত্যুকে কোনো মতেই থামানো যাচ্ছে না। 

সারা বিশ্বে এখন থমথম অবস্থা বিরাজ করলেও চীন, জাপান ও কোরিয়ার মতো দেশ লকডাউন খুলে ফেলেছে।  এদিকে ইউরোপের দেশগুলোর অবস্থা ভালো হচ্ছে বলে জার্মান লকডাউন খুলবে ইতিমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে।  তাহলে আমরা আশা করতেই পারি খুব দূরে নয় বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে আমরাও করোনা মুক্ত হবো। মুক্ত হবে দেশের মানুষ ঘরে বন্ধি হয়ে আর থাকতে হবে না। বেড় হয়েছে ঔষধ বেড় হচ্ছে প্রতিশোধক টিকা এখন প্রয়োগের পালা, দরকার একটু ধৈর্য্য ধরা। তবে আক্রান্তের হাত থেকে বাঁচার এখন একটাই উপায় ঘরে থাকা ও সামাজিক দুরুত্ব বজায় রাখা। 

লেখক– কলামিষ্ট, সম্পাদক ও কবি

// Disable right-click context menu // Disable text selection // Disable dragging of images and text // Disable copy events // Disable common keyboard shortcuts for copying // Check for Ctrl/Command key combinations with C, X, S, or P