………মাহফুজার রহমান মণ্ডল
“অভাগা যে দিকে যায় নদীর পানি শুকিয়ে যায়” চিরন্তন বাক্যটি যেন আজ বাংলার ৭০%-এর বেশি লোকের ভাগ্যে নাড়া দিচ্ছে। সেই যে শুরু গত ৮ই মার্চ’২০ইং সেদিন প্রথম করোনাভাইরাস রোগী শনাক্ত হয় আজ অবধি চলমান। আমরা নিম্ন ও নিম্নমধ্য বৃত্তরা কিভাবে বেঁচে আছি এক মাত্র আল্লাহই জানেন। মানুষ বেঁচে থাকার জন্য যে যেভাবে পারে নিজের মতো করে ব্যবস্থা করে চলছে।
গতবারের দিনগুলোতে মৃত্যু ও সংক্রামণের হার যেভাবে ছিলো তাতে গণমানবের টনক কোনভাবেই নড়েনি। তবে কিছু মানুষের মনে নাড়া দিয়েছিল যাদের পরিবার আক্রান্তছিল সাথে উচ্চ মহলের ব্যক্তিবর্গ, কারণ তাদেরেই আক্রান্তর খবর পত্রপত্রিকায় পাওয়া যেত। ফলে গ্রামেগঞ্জে মানুষের অবাধ মেলামেশা যেন করোনার প্রভাব নেই বললেই চলে। সরকার অনেক চেষ্টা করেছে বা করতেছে কিন্তু কোন সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। খেটে খাওয়া মানুষগুলো করবেই বা কি? পেটতো আর বাঁধা মানে না।
তবে বিগত বছরের লকডাউনে মানুষের মধ্যে যে একটা আতঙ্ক কাজ করেছিলো তা যেন এবার ‘গুরে বালি’। “কে শুনে কার কথা চৈত্রী মাসে বান”, শুরু হলো নিজের মত চলা। পরিবহন শ্রমিকদের চিন্তা নেই ন্যায্য ভাড়া তারা পেল। শপিংমল ব্যবসায়ীগণ মিছিল-মিটিং করলো খুলে দেওয়া হলো সীমিত সময়ের জন্য ব্যবসা করার সুযোগ। দিন দিন বেড়েই চলছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা তাই সরকারের মাথায় আসলো এক সপ্তাহের লকডাউন। ঘোষণা হতে না হতেই মানুষ ঢাকা ছাড়ার প্ল্যানে মেতে উঠলো। বিশেষ করে দিনে এনে দিনে খাওয়া মানুষগুলো বা ঘরে বসে থাকা মানুষগুলো গ্রামের পানে ছুটে চললো।
পরবর্তীতে ঈদ-উল-ফিতরেও মানুষ লকডাউন মানেনি সরকার আশাবাদী ছিল যে কঠোর লকডাউনে মানুষ ঘরমুখী না হলেও হয়তো সংক্রামণের হারটা কমে আসবে। কিন্তু সবকিছুকে তোয়াক্কা না করে যে যেভাবে পারলো অর্থাৎ যারা গ্রামে ঈদ করার কথা তারা করেই ফেললো। ঈদ-উল-ফিতরে এই সব কাহিনী দেখে এবার সরকার সিদ্ধান্ত নিলো চলমান লকডাউন যা ১লা’২১ জুলাই শুরু হয়েছিল তা ধীরে ধীরে বাড়িয়ে ১৪ই’২১ জুলাই পর্যন্ত থাকবে তবে ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষে ১৪ই জুলাই মধ্যরাত থেকে ২৩শে জুলাই সকাল ৬টা পর্যন্ত লকডাউন শিথিল থাকবে। ঈদ-উল-আযহার পর লকডাউন যথারীতি শুরু হলো……।
পরে যা ঘটলো তা বর্ণনাতীত বেঁধে দেওয়া সময়কে উপেক্ষা করে যে যেভাবে পারছে এখনও ঢাকায় ঢুকার চেষ্টা অব্যাহত আছে। এদিকে তৈরি পোশাক শিল্পসহ সব ধরনের শিল্প-কারখানা খুলে দিতে সরকারের উচ্চ মহলে বারবার অনুরোধ করছিলেন শিল্প মালিকরা। গত বৃহস্পতিবার(২৮/০৭/২১ইং) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আবারও অনুরোধ জানান তারা। তাই সরকার আগামী ১লা আগস্ট থেকে রপ্তানিমুখী শিল্প-কারখানা খোলা রাখার অনুমতি দিয়েছে। আর আগামী ৫ই আগস্টের পর থেকে সরকারি কিছু কিছু অফিসও খুলে দেয়া হতে পারে বলে জানা গেছে। তবে একথাও বলা হয়েছে যে যারা শিল্প-কারখানায় চাকুরী করেন তারা ৫ অগাস্ট’২১ইং-এর পর ঢাকায় ঢুকবেন।
বর্তমান সময়টা যে আমরা পার করছি তা অত্যন্ত ঝুকিপূর্ণ। আমরা ভুলেই গিয়েছিলাম যে পার্শ্ববর্তী মহারাষ্ট্র ভারতের কি অবস্থা হয়েছিল। এই করোনা হাজার হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয় কয়েক দিনের মধ্যে। যেখানে হাসপাতালে অক্সিজেনের সংকট, হাসপাতালে বেড নেই, ডাক্তারের অভাব সাথে নার্সেরও সংকট, শ্মশানগুলোতে লাশের মিশিল। মানুষতো দেখে দেখেও শিখে কিন্তু আমরা কি শিখলাম যে সকারের লকডাউনকে তোয়াক্কা করছি না। যে ভারত থেকে আমরা অক্সিজেন নেই সেই ভারতে আবার অক্সিজেনের সংকট। তাই পাকিস্তান সেই সময় এম্বুলেন্স ও অক্সিজেনের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল।
আমরা জানতেছি যে ভারতের ভারিয়ান্ট আমদের দেশে ঢুকে পড়ছে। তারপরেও ভীতি কাজ করছে না তবে সবাই যে ভয় করছে না তা নয়। ভয়ের মধ্যে থেকেও পেটের তাগিদে ঘরে বন্ধি থাকতে পারছে না। আগে যে মৃত্যু ও সংক্রামণের হার ছিল তা এখন কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমান সময়ে সর্বোচ্চ মৃত্যু একদিনে ২৫৮ জন ও সংক্রামণ ১৫ হাজারেরও অধিক। এপর্যন্ত মোট মৃত্যু ২০ হাজারেরও অধিক যেখানে আক্রান্তের সংখ্যাও ১২ লাখ ২৬ হাজারেরও অধিক।
আজ প্রিন্ট, অনলাইন ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া খুলেই দেখা যায় বাংলাদেশের কি অবস্থা। ঠিক ভারতের মতো অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে যেখানে একটা আইসিইউ বেডের জন্য এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ছুটতে হচ্ছে। অক্সিজেনের সংকট দেখা দিচ্ছে যেখানে পেতে ভাত নেই সেখানে চিকিৎসার টাকা কথা থেকে আসবে। যদিও কিছু দিন আগে ভারত সরকার আমাদের অক্সিজেনের চাহিদা কিছুটা মিটিয়েছেন। তারপরেও অক্সিজেনের কিছুটা হাহাকার রয়েছে। আইসিইউ বেড খালি না থাকায় শুয়ে থাকা মা ছেলেকে বাছানোর জন্য আইসিইউ বেড ছেড়ে দিয়েছে। এধরণের ঘটনাও ঘটছে।
সংকটময় মুহূর্তগুলো কাটতে না কাটতেই লকডাউনের বেড়াজাল থেকে রেহার পাচ্ছে হাজারও মানুষ। এ কি ধরনের সংকেত তা বুঝতে পারছি না। এখনেই আইসিইউ-তে বেড নেই আর অক্সিজেনের সংকট। মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা আরও দ্বিগুণ হলে কি হবে একবার ভাবুন? মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ হলে সরকারের পদক্ষেপেইবা কি তা কি বুঝা যায়। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ বি এম খুরশীদ আলম কঠোর লকডাউন বর্ধিত করার কথা বলেছেন। যেখানে ইতিমধ্যে ৩১ই অগাস্ট’২১ই পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা হয়ে গেছে।
যদিও লকডাউন বর্ধিত করার কথা বলা হচ্ছে তারপরেও ১লা অগাস্ট থেকে রপ্তানিমুখী শিল্প-কারখানা খোলা রাখার অনুমতি দিয়েছে। আর ব্যাংকতো আগে থেকেই খোলা আছে যেখানে আগামী ৫ আগস্টের পর থেকে সরকারি কিছু কিছু অফিসও খুলে দেয়া হতে পারে বলে জানা গেছে। একথা শুনে ঢাকায় ইতিমধ্যে অনেকেই ঢুকার চেষ্টা করছেন বা ফেরিঘাটগুলো ও ঢাকায় প্রবেশ পথগুলো দেখলে বুঝতে পারবেন পেটের দায়ে কিভাবে ছুটে চলছে নিম্ন আয়ের মানুষগুলো।
৫ই আগস্টের পর থেকে ঢাকায় এবং অন্যান্য মহানগরীতেও গণপরিবহন চলাচল শুরু হতে পারে। পরে পর্যায়ক্রমে দূরপাল্লার বাসও চলাচল করবে। যদিও এবিষয়ে সরকার থেকে এখনো কোন সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়নি। তবে এইসব খুললেই কি শপিংমল ও ব্যবসায়ীগণ আবার আন্দোলন করবে? যেখানে ধীরে ধীরে সব স্বাভাবিক হয়ে আসবে কিন্তু নাম মাত্র লকডাউন কি আমরা পাচ্ছি যেখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শুধু লকডাউন নিয়ে ঘুমাবে?
আমরা যাই করি না কেন, আমরাতো মানুষ। যদি আমদেরকে আমরাই না বুঝি তাহলে সরকার এখানে কি করবে? বাঁচা মরার দায় এখন আপনার হাতে। আপনি কোন দৃষ্টিতে এই করোনা ভাইরাসকে দেখবেন এটা আপনার উপর নির্ভর করবে। তবে প্রতিষেধক টিকা এখন আপনার হাতে নাগালেই পাবেন যা স্বাস্থ্য মন্ত্রী বলেছেন এনআইডি কার্ড দেখালেও টিকা নিতে পারবেন। তাহলেতো ভালোই হলো যে আপনি খুব তারাতারি টীকার আওতায় আসবেন। আর যারা আরও তারাতারি টিকা পেতে চান অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করুন। লিঙ্কটা নিচে দেওয়া হলো-
লেখক – সাহিত্যিক, সম্পাদক ও কলামিস্ট