শেখ খায়রুল ইসলাম পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধি: ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির জন্য বাজার ব্যবস্থায় যোগ হয় সুপার শপ, শপিং মল, সুপার মার্কেট, মেগা মল। বাজারে গিয়ে সরাসরি পণ্য ক্রয়ের পাশাপাশি মানুষজন বর্তমানে অনলাইনে অর্ডার করে ঘরে বসেই পণ্য পেয়ে যাচ্ছে। সরাসরি পণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে ক্রেতারা বিভিন্ন পণ্য যাচাই-বাছাই করে কাক্সিক্ষত পণ্য ক্রয় করতে পারে। কিন্তু অনলাইনে পণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে বিক্রেতার অনলাইনে দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পণ্য অর্ডার করতে হয়। সরাসরি পণ্য যাচাই-বাছাই করার সুযোগ না থাকায় কিছু সুযোগসন্ধানী ব্যক্তি কাঙ্ক্ষিত পণ্য সরবরাহ না করে অর্থ আত্মসাৎ বা নিম্নমানের পণ্য সরবরাহসহ বিভিন্ন ধরনের প্রতারণার আশ্রয় নিচ্ছে।
ফেসবুকে অনবরত ঘুরছে পণ্যের বিজ্ঞাপন। দামি ফোন,ক্যামেরা,ইলেকট্রনিকস নানা গ্যাজেট কম দামে বিক্রির অফার দেখে ম্যাসেঞ্জারে দিলেন ‘নক’। কথোপকথনের এক পর্যায়ে পণ্যটি কিনতে রাজি হলেন গ্রাহক। চুক্তি হলো পণ্য হাতে পাওয়ার পর টাকা পরিশোধ করবেন।
তবে পণ্য সরবরাহ খরচসহ অগ্রিম কিছু টাকা পাঠাতে হবে। টাকা নেওয়ার পর দিল ‘ব্লক’ অথবা হাতে পেলেন নিম্নমানের পন্য এভাবেই চলছে অনলাইন প্রতারণা।
অনলাইনে এবং অফলাইনে ক্যামেরা এন্ড গ্যাজেট নামের ঢাকার মিরপুরের একটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান নানা ধরনের লোভনীয় অফার দিয়ে নিম্নমানের ইলেকট্রনিকস পণ্য বিক্রি করে ক্রেতা সাধারনের সাথে দীর্ঘদিন ধরে প্রতারনা করে আসছে।
পাশাপাশি ঔসকল বিক্রিত পন্যের ওয়ারেন্টি নিয়ে প্রতিনিয়ত ক্রেতা সাধারনের সাথে দুর্ব্যবহার এবং ওয়ারেন্টি পন্য ফেরৎ না দেওয়ার হুমকিও প্রদান করছে এধরনের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সাধারণত,এই প্রতিষ্ঠানটি যেভাবে নকল পন্য দিয়ে প্রতারণা করে সেটা দেখে নেওয়া যাক:
১. ভুয়া বা অতিরঞ্জিত বিজ্ঞাপন – আসল মানের চেয়ে অনেক বেশি ভালো বলে দাবি করা হয়।
২. নকল বা রিফারবিশড পণ্য নতুন বলে বিক্রি – পুরনো বা রিফারবিশড ডিভাইসকে নতুন বলে চালিয়ে দেওয়া হয়।
৩. ওয়ারেন্টি বা রিটার্ন পলিসিতে গড়মিল – পণ্য কেনার পর দেখা যায়, ওয়ারেন্টি কাজ করে না বা রিটার্ন দেওয়া সম্ভব নয়।
৪. লোভনীয় ছাড় ও অফার – বাজারমূল্যের চেয়ে অনেক কম দামে অফার দিয়ে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করা হয়।
৫. নকল ব্র্যান্ডিং ও লেবেলিং – জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের লোগো বা ডিজাইন নকল করে সস্তা পণ্য বিক্রি করা হয়।
আর এভাবেই দীর্ঘদিন ধরে গ্রাহকের সাথে প্রতারনা করে আসছে "ক্যামেরা এন্ড গ্যাজেট" নামের একটি ব্যবসায়ী প্রতিস্ঠান।প্রতিষ্ঠানটি টিকানা, মিরপুর শপিং সেন্টার,দোকান নং-৬০১,লেভেল-৬,মিরপুর-২,ঢাকা-১২১৬।এরা প্রতারনার জন্য বেশ কিছু মোবাইল নাম্বারও ব্যবহার করে।01886600033, 01950000544, 01673418186।নামসর্বস্ব ওয়েবসাইট খুলে নামি-দামি ইউটিউব কন্টেন্ট ক্রিয়েটরকে দিয়ে যেকোন একটা আসল পন্যের রিভিউ ভিডিও বানিয়ে,নানাধরনের অফারের লোভ দেখিয়ে সেই ভিডিওর ডেসক্রিপশনে এধরনের প্রতারক ব্যবসায়ীদের ওয়েবসাইটের লিংক দিয়ে দেয়।ফলে ঐসকল পরিচিত ইউটিউব ক্রিয়েটরের কথায় কোন জাচ বিচার না করেই সেই লিংকে ঢুকে পন্যটির অর্ডার করে দেয়।
পামাপাশি এই "ক্যামেরা এন্ড গ্যাজেট"প্রতিষ্ঠানটি ইউটিউবে ও ফেসবুকে পেজ খুলে নামি দামি পণ্যের বিজ্ঞাপন দিয়ে মানহীন কপি গ্যাজেট পাঠিয়ে গ্রাহকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।ঐ পন্যটি ক্রেতা হাতে পেয়ে বুঝতে পেরে পুনরায় পন্যটি তাদের ঠিকানায় পাঠালে শুরু হয় নতুন চালাকি।পন্যটির বিক্রোত্তের সেবা দেবার কথা থাকলেও সেটি না করে ক্রেতার সঙ্গে বাক-বিতন্ডা করে পন্যটি আর ফেরত না দিয়ে তাদের মিরপুরের দোকানে যেয়ে নিয়ে আসতে বলে।
খুলনার ভুক্তভোগী এক সাংবাদিক এবিষয়ে বলেন,গত ২১ নভেম্বর একটি এ্যাকশন ক্যামেরার অর্ডার দেন ক্যামেরা এন্ড গ্যাজেটে পরবর্তীতে সেই ক্যামেরাটি ২মাসের মাথায় নস্ট হয়ে গেলে তাদের দোকানে পাঠানো হলে নানা বাহানা করে, পরে আর ক্যামেরাটি ফেরৎ দেয়নি।
বর্তমানে ফেজবুক ও ইউটিউবে নানা পন্যের চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে দির্ঘদিন ধরে ক্রেতা সাধারনের সাথে এধরনের প্রতারনা করছে ক্যামেরা এন্ড গ্যাজেট শপটি।তাদের দোকানে বিভিন্ন সেকেন্ডহ্যান্ড ক্যামেরা অথবা নানা ধরনের সেকেন্ডহ্যান্ড গ্যাজেটকে নতুন বলে বেশি দাম নিয়ে গ্রাহককে প্রতারিত করছে।নতুনের আড়ালে পুরাতনের রমরমা ব্যবসা পেতে বসেছে মিরপুরের ক্যামেরা এন্ড গ্যাজেট শপ।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন-২০০৯-এর ৪৪ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি কোনো পণ্য বা সেবা বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে অসত্য বা মিথ্যা বিজ্ঞাপন দিয়ে ক্রেতা সাধারণকে প্রতারিত করলে তিনি অনূর্ধ্ব এক বছর কারাদণ্ড বা অনধিক দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
বাংলাদেশে ই-কমার্সের প্রসার দিন দিন বাড়ছে এবং অনেক উদ্যোক্তা অনলাইনে বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করে অভাবনীয় সফলতা পাচ্ছেন। অনলাইন ব্যবসা দেশের প্রান্তিক উদ্যোক্তাদের জন্য একটি বড় সম্ভাবনার ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। বড় কোন প্রস্তুতি বা পুঁজি ছাড়াই প্রত্যন্ত গ্রামের ছেলে-মেয়েরাও উদ্যোক্তা হয়ে উঠার স্বপ্ন দেখছে।অথচ এধরনের কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর কারনে অনলাইন থেকে পন্য ক্রয় করতে আগ্রহ হারাচ্ছে ক্রেতা সাধারন, হচ্ছেন প্রতারিত।