মাহফুজার রহমান মণ্ডল রাচিত কবিতাসমুহ
ভরা দুপুরে ভজনালয়ে বসে
ভূরি ভোজন করতে ভূল নাহি করে,
ভুলের বসে যারা ভূমিতে চষে
ভূল কি হয়েছে তাদের এ ভুবনেতে?
ভোর হলে তারা লাঙ্গল কাঁধে নিয়ে
ভূমিতে চাষ করে, ভবের এই দেশে।
ভূতের আশ্রালয়ে ভূতর সেজে
ভ্রমণ করে যারা ভিখারীর বেসে।
ভিন্ন দেশে বিভিন্ন কারুকার্যে
নাচে তারা ভোঁদরের সাথে।
ভন্ডরাই ভদ্র বেসে ভাবাবেগে রত
ভিতুরা ভঙ্গীতে তাদের আশারত।
ভীম, অর্জন, নকুলেরা ছিল ভুবনেতে
ভগবানের জাত তারা ভয়শূন্য করে।
ভ্রাতৃত্বের টানে ভিন্ন আবেশে
ভরা সমুদ্রে ভেসে তারা আসে।
লাল নীল এই ভুবনেতে
ভিক্টোরিয়ারা চিরদিন বেঁচে থাকে
ভরকে ভর করে ভাবিতে থাকে
ভারীটাকে সংগে নিতে ডর নাই করে।
আমি বলছি তুমি শুন আমার বাণী
আমি শোনাই বিদ্রোহের কিচ্ছা আর কাহিনী
মনোযোগ নেই তোমার আমি যা বলি
তাইত তোমার মন দস্যুর বুলি।
আমার বুলি শুনে হাসাহাসি কর
দেশ যাচ্ছে রসাতলে তাকি মনে কর?
সংসার সাজাচ্ছে যে যা ভাবে পারে
সংসারী হতে পারে, তাকে চিনবে কি করে,
বয়স যাচ্ছে বেড়ে তোমার, এখনও বেকারত্ব
এদেশে অনেক আছে তোমার মত অবিরত
গড় আয়ু চিন্তা করে লিখছি আন মনে
আমাকে কি ভাবতে পার দিবা কিরণে।
বর্তমান এই ভাবের দেশে মিত্র আছে বটে
বেকারত্ব জীবনে সবসময় অঘটন ঘটে।
অঘটন ঘটন পটিয়াসী বাংলায় ভাবারত
ভাবের দেশে কর্ম পেলে দূর হবে বেকারত্ব।
তুমি ছিলে, তুমি আছ, তুমি থাকবে।
নদীর বহমান স্রোতের ধারা ছন্দময়ে
ক্ষণিকের জন্য দাড়াবার কোন অবকাশ নেই,
তার চলার পথে হঠাৎ বাঁধা পড়লে
ক্ষণিকের জন্য জলগুলো আটকা পড়ে,
উজানের দিকে প্রবাহিত হতে থাকে
পরা শক্তিগুলো সহ্য করতেনা পেরে
বাঁধ স্ববেগে ভেঙ্গে যেতে থাকে।
প্রচন্ড বেগে চলতে থাকা জল ধারার সংগে
সংঘর্ষ চলতে থাকে যারা বাধা দিয়েছিল
সেই কুখ্যাত বিদ্বেষীদের সাথে।
শহিদ হয়েছিল শত শত তাজা প্রাণ,
ক্ষণিকের বাঁধটি শক্ত বটে, আরো বেশি
শক্ত বন্ধন ছিল বাঙ্গালীর কণ্ঠ।
তুমি ছিলে, তুমি আছ, তুমি থাকবে।
চলন্ত গাড়ীতে আঘাত হানলে
সম বেদনায় ব্যতিত হয়ে ব্যাথা পাবে।
চলন্ত বায়ুতে আঘাত করলে
সাপাং সাপাং ধ্বনি প্রতিফলিত হবে।
চলন্ত সরকারকে আঘাত করলে
ধীরে ধীরে বিপদের ঘণ্টা বাজবে।
চলন্ত জীবকে আঘাত করলে
ব্যাথা পেয়ে মৃত্যুর ঘণ্টা বাজবে।
নদীর স্রোতকে আঘাত করলে
উজানের দিকে বন্যা প্লাবিত হবে।
ঘড়ির কাঁটাকে আঘাত করলে
সময় কি আর থেমে থাকবে?
দ্বার থেকে দ্বার করে দরবার
ভিক্ষার ঝুলি কাঁদে, বেড়ায় ঘর ঘর।
লজ্জা নাই যার ঝুলি কাঁদে তার,
কর্ম নাই করে তবু দ্বারে দ্বারে।
সারারাত ভাবে যাবে কার দ্বারে,
বর্ষা নামিলে হতাশা হয়ে ভাবে,
কর্ম নাই করে তবু দ্বারে দ্বারে।
বিধাতা দিয়েছে তারে যা যা লাগে,
নিজ দুর্বল বলে ঝুলি নেয় কাঁদে।
লজ্জা ঢেকে রেখে বেড়ায় নিজ স্মরণে
কর্ম নাই করে তবু দ্বারে দ্বারে।
শিশু জন্ম নিল আজ নতুন কিছু পাওয়ার আশায়
মায়ের কোলে হেলে দুলে স্তন্য পান করে পিপাসায়।
নবজাতকরা জানে না কখন সকাল আর বৈকাল,
দিনরাত্রি কাটে তাদের নিদ্রা আর ক্ষণকাল।
বয়স বাড়ার সাথে সাথে ছূটাছুটি হাসা-হাসি আর কান্নায়,
ঘরেতে যেন মন বসে না, জাগতিক চাহনির বাসনায়।
কথা বলে পুটপুট, মাতৃস্নেহের পরশ বুলে
বাবার ছটফট ডাকে তার কর্ণ যুগল শিয়রে ওঠে।
হাটিহাটি পা পা বিদ্যালয়ে আনাগোনা,
সভ্যতার শিকড়ে পৌঁছতে চায় এই নব জাতকের বাহনা।
ছোট বাবুর কাছে বাবা মায়ের প্রেরণা
এই চলার যেন আর শেষ হয় না।
চলতে চলতে মায়ের যন্ত্রণা
বাবুকে নিয়ে আর পারা যায় না।
সংসারে বাবা আছেন কর্মরত
বাবু আমায় ক্ষণে ক্ষণে করে বিরক্ত,
পাড়ার ছেলেরা দল বেঁধে খেলে
বাবুকে দেখলে তারা সঙ্গে নিয়ে চলে।
পিতা মাতার বাসনা পূর্ণ হবে সেই দিন
বাবু যেন চলার গতিতে উদ্যমি হয় প্রতিদিন।
শংক চিল আকাশে উড়ে রোদ, বৃষ্টি ও ঝড়ে
কোকিল ডাকে মনের সুরে কুহ কুহ করে।
চাঁদ মামা রাতের বেলায় ডুব ডুব করে
বাঁদুর বেটা ঐ সুযোগে ছুটা ছুটি করে।
কৃষেকরা ফসল ফলায় রোদ বৃষ্টি ও ঝড়ে
নেতারা মনের আনন্দে লাফালাফি করে।
সূর্য যখন পাটে বসে আঁধার করে ঘর,
ঐ সুযোগে নেতারা আর কাউকে করে না পর।
নির্বাচনে নেতাগণ ছুটে বেড়ায় রোদ, বৃষ্টি ও ঝড়ে
এই সময় নেতাদের মন উজাড় করে রাখে,
গ্রামগঞ্জের মাসি পিসির একটাই আবেদন
পুরান নেতারে ভোট দিব না এই আমার পণ।
দামাল ছেলেরা যতই চলুক রোদ, বৃষ্টি ও ঝড়ে
প্রতিবাদ করার সাহস হয় না নেতাদের সামনে।
দাদার চিৎকার আগুন আগুন
রান্না ঘরের উনানে আগুন
বহ্নিমান শিখা হাতে নিয়ে
দাদার ধ্বনি আগুন আগুন।
হরতালের চিহ্ন যেখানে সেখানে
টায়ার কিংবা তেল ঢেলে ধীক ধীক
জ্বলে আগুন আগুন।
দিনের বেলায় সূর্যের আলো
আর আতশী কাচ কাগজে পরলে
জ্বলে উঠে আগুন আগুন।
বন থেকে বনান্তরে শুকনো গাছের
ডালে ঘর্ষণে উৎপন্ন হয়
আগুন আগুন।
হঠাৎ কোথায় সতর্কতা হীনভাবে
দৃশ্যমান হয় বাড়ী, ঘর, ফ্যাক্টরী
বা অফিসে আগুন আগুন।
সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে যায়
শুধু পড়ে থাকে মনের
আগুন, আগুন আর আগুন।
আমি জীব, আমি সেবক, আমি ভক্ষক
আমি করুণা কবি করুণা পেতে ভালবাসি।
সাঁতার জানি না, জলে মাছ ধরি,
দল নেই আমার, সব সময় সমাবেশ করি।
আমি জীব, আমি সেবক, আমি ভক্ষক
কণ্ঠ ভাল না, তবু গান গাইতে ভালবাসি।
আষাঢ় মাস, তবুও বৃষ্টি নেই জমিনে,
স্বৈরাতন্ত্র নেই দেশে, স্বৈরাশাসকের ভাব ধরি।
আমি জীব, আমি সেবক, আমি ভক্ষক
পতাকা চিনি না, তবুও দেশকে ভালবাসি
আকাশে মেঘ নেই, তবুও বৃষ্টি অভাব নেই
কামলার অভাব নেই, আমলার ভাব ধরি।
আমি জীব, আমি সেবক, আমি ভক্ষক
আমি শিক্ষিত নই, শিক্ষাকে ভালবাসি
নৌকা চালাতে পারিনা, সমুদ্রে নোঙ্গর তুলি।
নেতা হওয়ার যোগ্য নই, নেতৃত্বের ভাব ধরি।
আমি জীব, আমি সেবক, আমি ভক্ষক
আমি চেষ্টা করলে হতে পারি রক্ষক।
হাজার হাজার সালাম
আর নববর্ষের শুভেচ্ছা
গোলাপের সুগন্ধি
আর জাতীয় ফুল শাপলা,
হে দুরন্ত দু’হাজার
তোমাকে নিয়ে এখন যায় বলা।
তুমি চল সহস্র নদীর স্রোত
আর ঘড়ির কাটার মত,
কখনও কি ফিরে দেখেছ
পিছনে দুঃখ আনন্দ কত,
তাইতো তোমাকে নিয়ে কবিরা
কবিতা লিখে শত শত।
শতাব্দী যায় আর ফিরে আসে
আমি শুনেছি তুমি একদিন চলে যাবে,
ফিরে আসবে না, কিন্তু ফিরে আসবে
তোমার মত শত শত;
আর ফিরে আসবে হাজার হাজার কাল
হে দূরন্ত দু’হাজার।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে ভরা
আমাদের এই দেশ
কোথাও স্বজন প্রীতি
আর কোথাও বিদ্বেষ।
তুমি আমাদের পরাইওনা অলংকার
আর করিও না অহংকার।
সেই ৭১এর ঘাতকরা
কেড়ে নিয়েছিল আনন্দ আর প্রীতি
আমরা কি আজ ফিরে পেতাম
তোমার মত স্মৃতি।
আজ থেকে যেত
অনেক দুঃখ আর বেদনা
যা আমরা মাতৃভাষা দ্বারা
প্রকাশ করতে পারতাম না।
আজ আমরা পেয়েছি স্বাধীনতা
যা আমাদের হাজার বছরের সাধনা।
হাজার হাজার শতাব্দী ছাড়িয়ে
যাচ্ছে প্রবীনদের এড়িয়ে,
আর নবীনরা যাচ্ছে
আকাশ পাতাল জয়ের দিগন্তে,
তাইতো আধুনিকচেতা নাগরিক
দিনদিন পাচ্ছে সব কিছু হাতের নাগালে,
টিপ দিলে পানি পড়ে
ফ্যান ঘুরে, আলো জ্বলে
সবকিছু নিমিষে ঘটে
হে দূরন্ত দু’হাজার।
তোমার পরে আসবে যারা
ইশারাতে কাজ করবে তারা,
ধ্বংস হলে এই পৃথিবী
মুছবে স্মৃতি চিরজীবী।