Monday, 10 March 2025, 05:27 PM

মানুষ খুন করাই যেন সহজ

বর্তমানে বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থায় আর দশটা কাজের চেয়ে মানুষ খুন করাটাই যেন সজহ কাজে পরিণত হয়েছে। এখানে কোনো কারণ ছাড়াই মানুষকে হত্যা করা যায়। নির্বাচন হলেই মানুষ হত্যা করা হয়, ক্ষমতা দখলের জন্য মানুষ হত্যা করা হয় আর মানুষ হত্যা করা হয় ধর্মের নামেও। আর হত্যা করার পন্থাটিও যেন সহজ। চা-পাতি, গুলি আর মোটরসাইকেল হলেই যথেষ্ট। পথে ঘাটে, বাসাবাড়িতে, মন্দির এবং গীর্জায় নির্বিঘ্নে   মানুষ হত্যা করে পার পাওয়া যেন নিত্যদিনের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর হত্যার কাজে ব্যবহৃত সরঞ্জামাদিও হাতের কাছেই পাওয়া যাচ্ছে। মানুষ যেমন সৃষ্টির সেরা জীব, তেমনি সবচেয়ে নিকৃষ্ট জীবেও পরিণত হতে পারে। অপরজনকে হত্যাই যদি মানুষের শত্রুতার সর্বোচ্চ বহিঃপ্রকাশ হয়, তাহলে পৃথিবীর কোনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীই এই সব হত্যাকান্ড  ঠেকাতে পারবে না।
সম্প্রতি এক হত্যাকান্ডের  রেস কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আরেক হত্যাকান্ড। এক শোকের ছায়া কাটতে না কাটতেই ফের নৃসংশ হত্যাকান্ড, যেন হত্যাকান্ডের এক উর্বর ভূমিতে পরিণত হতে যাচ্ছে ৩০ লাখ শহীদের রক্তে কেনা এই বাংলাদেশটি। যেন হত্যা ছাড়া আর কোনো পন্থা নেই। প্রতিবাদের পর প্রতিবাদ। হত্যাকারীদের শাস্তি হচ্ছে, ফাঁসিও কার্যকর হচ্ছে তবুও থামছে না হত্যা। এবার হত্যার শিকার হলেন পুলিশ সুপারের স্ত্রী। যেখানে আইনশৃঙ্খলার লোকজনও রক্ষা পাচ্ছে না। এক হত্যার পর অপেক্ষা আরেক হত্যার। এভাবে কি সমাজ ব্যবস্থা চলতে পারে? তারপর এই হত্যাভীতি নিয়েই আমাদের চলতে হচ্ছে। পৃথিবীতে জীবনের মতো মহামূল্যবান জিনিস আর নেই। মানুষের কাছে তার সব চেয়ে বড় সম্পদ তার জীবন। কিন্তু এখন সেই জীবনেরই কোনো মূল্য নেই। যেকোনো সময় কেড়ে নেওয়া হচ্ছে জীবন। চলছে চা-পাতির আক্রমণ। মানুষ হচ্ছে সভ্যতার রূপকার এবং মানুষ ছাড়া সভ্যতা অর্থহীন। আর সেই মানুষ হত্যায় মত্ত হয়ে উঠেছে দুর্বৃত্তরা।
সম্প্রতি বাংলাদেশে ব্লগার, প্রকাশক, অধ্যাপক, শিক্ষার্থী, বিদেশী নাগরিক, ধর্মীয় সংখ্যালঘু, মানবাধিকারকর্মী, ভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষজনকে পরিকল্পিতভাবে অতর্কিত হামলা চালিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটছেই। একের পর এক এই সব হত্যাকা- সমাজকে আতঙ্কগ্রস্ত করে তুলছে। প্রশ্নবিদ্ধ করছে আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থাকে। এই সব হত্যাকান্ডে  দেশ-বিদেশ থেকে উদ্বেগও প্রকাশ করা হচ্ছে। কিন্তু এখন প্রশ্ন হচ্ছে হত্যাই কি শেষ সমাধান?  কিংবা দাবি আদায় বা মতামত প্রতিষ্ঠার একমাত্র পথ কি হত্যাই ! হত্যার বাইরে কি আর কিছুই নেই। মানুষ হত্যা করলেই কি সমস্ত কিছু অর্জন হয়ে যাবে ? কেবল বাংলাদেশে নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই প্রতিনিয়ত নগ্ন হামলায় প্রাণ হারাচ্ছে নিষ্পাপ শিশুসহ বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ। আইএসের নারকীয় ধ্বংস যজ্ঞ আমরা মধ্যপ্রাচ্যে প্রতিনিয়ত অবলোকন করছি। তাদের বর্বর হামলায় প্রাণ হারাচ্ছে নিরীহ মানুষ। শিশুরাও তাদের তান্ডব  থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। একের পর এক হামলায় ভেঙে পড়ছে সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা। গৃহহীন হয়ে পড়ছে মানুষ। কেবল আরব দেশে নয়, এই আইএসের আক্রমণের শিকার হচ্ছে ইউরোপ-আমেরিকার উন্নত দেশগুলোও। ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে প্রায় একই সময়ে কয়েকটি স্থানে বোমা হামলা ও বন্দুকধারীদের গুলিতে শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন। হামলার দায়¡ কেউ স্বীকার না করলেও মধ্যপ্রাচ্যের জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসকেই সন্দেহ করা হচ্ছে। এছাড়াও ২২ মার্চ বেলজিয়ামের ব্রাসেলসের ইয়াবেনতেম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধান কার্যালয়ের নিকটবর্তী মালবিক মেট্রো স্টেশনে আত্মঘাতী বোমা হামলায় ৩১ জন নিহত এবং ২৭০ জন আহত হন। মধ্যপ্রাচ্য ভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) ওই হামলাগুলোর দায় স্বীকার করেছে। চট্টগ্রামে পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানমকে গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। বাসা থেকে ৩০০ গজ দূরত্বে নগরের পাঁচলাইশ থানার জিইসি মোড়ে এই হত্যাকান্ড ঘটে। জঙ্গিবিরোধী অভিযানে এসপির সক্রিয় ভূমিকার কারণে তাঁর স্ত্রীকে হত্যা করা হতে পারে বলে ধারণা পুলিশের। জিইসি মোড় এলাকায় রাস্তায় পড়ে থাকে বাবুল আক্তারের স্ত্রীর মরদেহ। পরনে কালো বোরকা। মাথায় হিজাব। এতো দিন আমরা কেবল পুরুষদের উপর হামলা দেখলাম। কিন্তু এখন এই তালিকায় যুক্ত হয়েছে নারীও। পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যাকান্ডে জঙ্গিগোষ্ঠী জড়িত থাকতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি বলেন, ‘পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রীকে হত্যা একটি পৈশাচিক, নৃশংস এবং ঘৃণিতহত্যাকান্ড । বাবুল আক্তার জঙ্গি দমনে একের পর এক দুঃসাহসিক অভিযান পরিচালনা করেছেন। জঙ্গিগোষ্ঠীর টার্গেট ছিলেন বাবুল আক্তার। তাকে না পেয়ে তার স্ত্রীকে টার্গেট করে জঙ্গিরা হত্যা করেছে।’
সর্বশেষ ঝিনাইদহ সদর উপজেলায় কড়াতিপাড়া গ্রামে একজন হিন্দু পুরোহিতকে গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। কালো একটি মোটরসাইকেলে আসা তিনজন আরোহী হত্যাকান্ডটি ঘটিয়ে চলে যায়। মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে করাতিপাড়ার বাড়ি থেকে সাইকেলে করে কালীগঞ্জ উপজেলার একটা বাড়িতে পূজো করার উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলেন পুরোহিত আনন্দ গোপাল গাঙ্গুলী। ওই সময় মহিষাডাঙ্গা গ্রামে মাঠের ভেতরে মোটরসাইকেলে করে আসা তিন যুবক ওই পুরোহিতকে বিলের মাঝখানে ফেলে গলা জবাই করে চলে যায়।
যারা মানুষ হত্যাকেই শেষ সম্বল হিসেবে বেছে নিয়েছে, তারা কখনই তাদের উদ্দেশ্য হাসিল করতে পারবে না। হত্যা কখনো দাবি আদায়ের পথ হতে পারে না। হত্যাকারীরা ভুলে গেছে- মানবসভ্যতার ইতিহাসের কথা। হত্যার মধ্য দিয়ে আমরা আজকের আধুনিক সভ্যতায় উপনীত হইনি। এই সভ্যতার ভীত রচিত হয়েছে শান্তি, কল্যাণ, মহৎ মানুষের অবদান, ভ্রাতৃত্বে সুদৃঢ় বন্ধন এবং ত্যাগ তিতিক্ষার মাধ্যমে। ১৯৭১ সালে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানীরা হত্যার মধ্য দিয়ে বাঙালিকে দমিয়ে রাখতে চেয়েছিল। তারা নির্বিচারে হত্যা চালায় আমাদের নিরীহ মানুষের উপর। কিন্তু বাস্তবতা হলো এই হত্যাযজ্ঞের মধ্য দিয়ে তারা লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য অর্জন করতে পারেনি। আমরা ঠিকই স্বাধীনতা অর্জন করেছি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ও আমরা দেখেছি হিটলার নির্বিচারে ইহুদিদের হত্যা করে। কিন্তু হত্যার মধ্য দিয়ে হিটলার তার দাবি আদায় করতে পারেনি। অবশ্য বর্তমানে সেই রকম অবস্থা আর নেই।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে ৩৭টি হত্যার ঘটনার মধ্যে ২৫টির সঙ্গে সরাসরি জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) জড়িত। আর আটটির সঙ্গে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম (এবিটি) এবং বাকি চারটির সঙ্গে অন্যান্য জঙ্গি ও সন্ত্রাসী সংগঠন জড়িত বলে সরকারি মহল থেকে বলা হচ্ছে। এদিকেহত্যাকান্ড গুলো ঘটছে একই পদ্ধতিতে এবং বেশীরভাগ ঘটনার পরেই কথিত ইসলামিক স্টেট বা আল কায়েদা এর দায় স্বীকার করতে দেখা যাচ্ছে। বলা হচ্ছে জঙ্গিদের লক্ষ্য ইসলামি শাসন ব্যবস্থা কায়েম করা। সেটাই যদি তাদের লক্ষ্য হয়ে থাকে তবে ভালো। কারণ ইসলাম শান্তি, সম্প্রীতি, ভ্রাতৃত্বের বন্ধনের কথা বলে। পৃথিবীর যেকোনো ধর্মেরই মূল কথা হলো শান্তি। ধর্ম কল্যাণকর। ধর্ম মানুষকে সুপথ দেখায়। কিন্তু ধর্ম প্রতিষ্ঠার পথ কি হত্যা ! মানুষ হত্যা করেই কি ধর্মের অনুশাসন কায়েম করতে হবে। কিন্তু মানুষ হত্যার মধ্য দিয়ে ধর্ম প্রতিষ্ঠার নজির কোনো সময়েই নেই। আমাদের ইসলাম ধর্ম কি মানুষ হত্যার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। মহানবী (সাঃ) তার আদর্শ এবং সৎ গুণাবলীর মাধ্যমে মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছেন। তিনি শান্তি এবং কল্যাণের কথা বলেছেন। তার কথার মাধ্যমে সেসময় মানুষ ইসলাম গ্রহণ করেছে। তিনি সকল ধর্মের মানুষকে সম্মান দেখিয়েছেন। এই মহামানব ইসলামের দাওয়াত দিতে গিয়ে কত নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তিনি তা মুখ বুজে সহ্য করেছেন। তারপরও তিনি কোনো প্রতিবাদ করেননি। কিন্তু এখন আইএস নামে একটি সন্ত্রাসীগোষ্ঠী ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার নামে বিশ্বব্যাপী নৃসংশ হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠেছে। তারা ভুলে গেছে ইসলামের আদর্শ। তারা ধর্মকে ভুল ব্যাখ্যা করে মানবতাবিরোধী কাজে লিপ্ত। এই সব হত্যার সাথে ইসলামের মতো শান্তির ধর্মের নাম জড়িয়ে দিয়ে ইসলামকে কলুষিত করছে। ইসলাম ধর্মের ভাবমূতি তারা ক্ষুর্ণ করছে। মানুষ হত্যা মহাপাপ এবং জঘন্য কাজ। এ বিষয়ে পবিত্র কোরআন এবং হাদিসে স্পষ্ট উল্লেখ আছে। কেবল তাই নয়, ইসলাম ভিন্ন ধর্মের মানুষের প্রতি সম্মান দেখিয়েছে। কিন্তু যারা ধর্মের নামে মানুষ হত্যা করছে- তারা কোন ধর্মের লোক হতে পারে না। তাদের কোনো ধর্ম নেই। যারা মানুষ হত্যা করে তারা কোনো ধর্মের অনুসারী হতে পারে না। মানুষ হত্যার মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত মতাদর্শ কোনোভাবেই শুভকর হতে পারে না। মানুষ হত্যা ছাড়াও বর্তমান বিশ্বে ধর্ম এবং নিজস্ব মতামত প্রতিষ্ঠার নানা পথই রয়েছে। কেবল তাই নয়, এখন সারা বিশ্বে ইসমালী দাওয়াতের কাজ অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশে তাবলীগ জামায়াতসহ এখনও কিছু ধর্মীয় সংগঠন রয়েছে, যারা মানুষকে ধর্মের কথা বলে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে সখ্যতার খাতিরে তারা ইসলামের শান্তির কথা বলে থাকেন। তারাও তো ধর্মের প্রচার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশে এখনও এমন পরিবেশ তৈরি হয়নি যাতে ভিন্ন মত প্রকাশ করার জন্য মানুষ হত্যা করতে হবে। কিন্তু দুঃখজনক হলো আমাদের এখানে রাজনৈতিক ফায়দা নেওয়ার জন্য মানুষ হত্যা করা হয়। এর আগেও আমরা দেখেছি তথাকথিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে একটি রাজনৈতিক দল একের পর এক রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে টানা অবরোধ ঘোষণা করেছিল। অবরোধ চলাকালে দেশের নিরীহ সাধারণ মানুষকে পেট্টোল বোমায় পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। জ্বালিয়ে দেওয়া হয় শতশত যানবাহন। নির্বাচন ঠেকানোর নামে দেশের প্রায় পাঁচশতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ করা হয়। কতকগুলো টোকাই এবং দুর্বৃত্তদের হাতে টাকা দিয়ে মানুষকে পুড়িয়ে মারা কোনো রাজনৈতিক আন্দোলন নয় বরং ছিল সন্ত্রাসী কর্মকান্ড কাজেই এখন যে সব হত্যাকান্ড- সংঘঠিত হচ্ছে তা কেবল ধর্ম প্রতিষ্ঠার জন্য চলছে-এমনটিও বলা যায় না।
আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্য বলে এদেশ কখনো আএস বা জঙ্গিবাদীদের দেশ হতে পারে না। এ দেশ আশাবাদের দেশ, নতুন স্বপ্ন বোনার দেশ, এগিয়ে চলার দেশ, বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেওয়ার দেশ। আমরা উন্নয়নের বিশ্বাসী। বাঙালি জানে বিজয় ছিনিয়ে আনতে। এই সব হত্যাকান্ড- ঘটিয়ে বাঙালির উন্নয়নের এই ধারাবাহিকতাকে কেউ রুখতে পারবে না। উন্নয়নের মহাসড়কে থেকে দেশকে আর কেউ পিছিয়ে নিয়ে যেতে পারবে না। শত বাধা বিপত্তি এড়িয়ে দেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাবেই।
বাংলাদেশে রাজনৈতিক অবস্থা এই সব হত্যাকান্ডে-জন্য জড়িত বলা হলেও বিশ্বব্যাপী হত্যাকান্ডের  কারণ কী ?  কারো মতামত, চিন্তা, ধ্যানধারণা তথা জীবন ধারণের ব্যাপারে অন্যের থেকে ভিন্ন হতে পারে- তাই বলে তাকে হত্যা করতে হবে- এমন কোনো বিধান নেই। দেশে প্রচলিত আইনকানুন রয়েছে-যার আশ্রয় নিয়ে যে কেউ প্রতিবাদ করতেই পারে। কারো বক্তব্য যদি অন্যের অনুভূতিতে আঘাত লাগে তবে সেই ব্যক্তি প্রচলিত ব্যবস্থার মাধ্যমে উক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে। আলাপ আলোচনার মাধ্যমে উদ্ভুত পরিস্থিতি সমাধান করা সম্ভব। কিন্তু বর্তমানে আমরা এর বিপরীত অবস্থা দেখছি। একটি গণতান্তিক দেশে ভিন্ন মত থাকবেই। কিন্তু ভিন্ন মত দমনের নামে মানুষ হত্যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। যারা এই সব হত্যার মতো জঘন্য কাজে লিপ্ত, তাদের উচিত হবে যেকোনো মাধ্যম ব্যবহার করে তাদের দাবিদাওয়া প্রকাশ করা। আলাপ, আলোচনা এবং সমঝোতার মাধ্যমে সকল সমস্যা সমাধানের পথ খোঁজা। মানুষ হত্যা করে তাৎক্ষণিকভাবে উত্তেজনা, আতঙ্ক এবং প্রচার প্রকাশ পাওয়া সম্ভব। কিন্তু হত্যার মাধ্যমে কখনই শান্তি কায়েম করা যায় না। যারা মানুষ হত্যায় মেতে উঠেছে তাদের উচিত সে পথ ছেড়ে প্রচলিত ধারায় ফিরে আসা। মানুষ হত্যার মাধ্যমে তারা কখনই তাদের কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবে না। বাংলাদেশের মানুষ এখন হত্যা আতঙ্কে রয়েছে। কে কখন হত্যার শিকার হয়- সে সংশয় আমাদেরকে সর্বদা তাড়া করছে। এই ভাবে জীবন যাপন করা যায় না। এই সব হত্যা মানবসভ্যতার কলঙ্কের ভীত রচনা করছে। যেভাবেই হোক না কেন, এই সব হত্যাকান্ড  ঠেকাতে হবে। হত্যা নয়, বরং শান্তি আলোচনা, সমঝোতার মাধ্যমে সমাজে সমস্যার সমাধান হোক। আমাদেরকে চাপাতির কোপ রুখতে হবে। দমন করতে অবৈধ অস্ত্রের অপব্যবহার। অবস্থাদৃষ্টে এমনই মনে হচ্ছে এগুলো টার্গেট খুন। আগে থেকে হত্যার ছক আকা হচ্ছে।

 লেখকঃ প্রভাষকগণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগজগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

// Disable right-click context menu // Disable text selection // Disable dragging of images and text // Disable copy events // Disable common keyboard shortcuts for copying // Check for Ctrl/Command key combinations with C, X, S, or P