Sunday, 22 December 2024, 02:07 PM

মোরাই রাশেদ রচিত কয়েকটি কবিতা যা বাস্তবকে হার...

মোরাই রাশেদ  রচিত কবিতাসমুহ………

বি‌নিদ্র ছায়া

মেঘ বড় হিসাবী আকাশের বুকে
গরল সমীর ব্যার্থতায় অনেক দিন
সূর্যের তান্ডবে কুয়াসার বাতাস
আলগে রাখে তারে হৃদ‌য়ের ঝি‌লে
বুকের মা‌ঝে জমিয়েছে কঠিন বরফ ।

সেদিন বাতাস একান্তে গানে গানে
ছাড়পত্র পেয়েছিল পুড়া‌নো জমিন
মেঘ ইচ্ছা অনিচ্ছার হিসাব ফেলে
নানান রঙের অধরু আয়োজন নি‌য়ে
‌নে‌মে এ‌লো সাত আসমান থেকে ।

জ‌মি‌নের চোখ কুয়াশার মেখে মে‌খে
অন্ধাকার আলো জোনাকির ঠোটে
‌নিভেু নিভু মিট মিট একটু আ‌লো
প‌ড়ে আ‌ছে অন্ধকা‌রের ছায়া ঘি‌রে ।

হয়‌তো সেই দিনটি আসবেনা আর
অপেক্ষার সময় যেন ফুরায় না তার
মেঘ থাকে রোজ আধাঁরের তারায়
অব‌শে‌ষে এলো সে ‌বি‌নিদ্র ছায়ায়
ভালবাসার সেই সিরি বেয়ে বে‌য়ে
আলোর অন্ধকারের গায়ে গায়ে ।

নীরব নিস্প‌ত্তি

ঝরণার জ‌লে আকন্ঠ তৃ্ষ্ণায় এক পা‌খি
কত যুগ দাঁ‌ড়ি‌য়ে পুকু‌রের ধা‌রে
দম ফাটা তৃষ্ণা পাঁজর ভাংগার গা‌নে
তবুও অনুরত ছিল বিশ্বা‌সের সিক‌ড়ে ।

‌সিড‌রে একটা একটা ক‌রে খ‌সে প‌ড়ে
তার বু‌কের সব কয়‌টি আশার পালক
পা‌য়ের নি‌চে গ‌জি‌য়ে উ‌ঠে আল‌কেশী
থ‌রে ‌বিথ‌রে ফু‌টে ফুল পা‌খি‌দের পলক।

‌নি‌শ্চিন্ন পাহাড়ের ঝরণার অপমৃত্যু
‌মি‌শে গে‌লে সম‌য়ের মান‌চি‌ত্রে
পা‌য়ে ম‌রি‌চিকা ধু‌য়ে যায় গর‌ল কাদায়
তবুও পা‌খি দাঁড়ি‌য়ে একা‌কি‌ত্তে ।

কা‌রোর প্র‌তি নেই কোন অ‌ভি‌যোগ আর
সব অ‌ভিমান ভু‌লে অদৃর্শ দৃষ্টির ছায়ায়
নীর‌ব মৃত্যুর মা‌ঝে ক‌রে জীবন যাপন
সময় নিস্প‌ত্তি আধাঁ‌রের অব্যক্ত ধাঁয়ায়।

আঁধারের আলো খুঁ‌জি

এখনও আমি আঁধারের আলো নি‌য়ে
ভিজে যাই শুধু কুয়াসার বৃষ্টিতে
হা‌তের তালু‌তে লোনা কালির আঁচড়ে
নৈমিত্তিক গ‌ড়ে যাই শব্দের নির্মাণ
রচনা করি এক‌টি নৈশব্দ্যের কবিতা
তবুও যায় না মুছে উদভ্রান্ত হিমোলতা ।

বিস্তস্থ বর্ণে নৈপুণ্য শব্দের গাঁথায়
সূর্যের ছায়ায় জোনাকিরা ঘুমায়
নেপথ্য প্রহরী সম্মুখে দাড়ায়
আধাঁরের আলো আবারও জ্বালায়
তারাগুলো যেন জেগে জেগে যায়
উপ-প্রেমের মাতম প্রহরীর পাহাড়ায় ।

পথের ঠিকানা হারা আমি প্রতি পদে পদে
নিকশের মা‌ঝে খুঁ‌জি জোৎস্নার খোঁ‌জ
নগ্ন নিপর উল্লাস করে সবার অজান্তে
আর অবরুদ্ধ আমি আধারের আলোতে
তবুও খুঁজি জোস্না আধারের কোন ছায়াতে
তুলে রাখি সব আশা হৃদয়ের বিমূড় তাবুতে।

আ‌মি তাহার মুগ্ধ পাঠক

‌তিন প্রহ‌রে শেষ বিকা‌লে পেলাম যা‌রে
‌রোজ আমা‌রে শ‌ুনি‌য়ে যেত দ্রো‌হের যত গান
প্র‌তি ক্ষ‌ণে ক্ষ‌ণে আমার কা‌নে কা‌নে
ব‌লে যেত আ‌রো তার স্ব‌প্নের কত কথা
আ‌মিও ‌ছিলাম একান্ত তার ম‌ুগ্ধ এক স্রোতা
ভু‌লে যেতাম আ‌মি আমার ছিল যত ব্যাথা।

আস‌লে চিন‌তে পা‌রি‌নি তা‌কে আ‌মি এক বোকা
তবুও বা‌লিকার নাম রে‌খে‌ছি এক আয‌নিকা
বা‌লিকার হা‌তে এখন শব্দের খেলা চ‌লেড়
‌ এখন সে মস্ত বড় ক‌বি আমার হৃদয় ঝি‌লে
আ‌মি তাহার মুগ্ধ পাঠক বিশ্ব ভুবন ভু‌লে ।

আ‌মি খুঁজি তাহার সুন্দর তম লেখা
‌যে লেখায় খুঁজে পাই আমি জীব‌নের রেখা
‌সে এখন আমায় নি‌য়ে খে‌লে নী‌তির ‌খেলা
ই‌চ্ছে মত নদীর বু‌কে ভাসায় তাহার ভেলা
এখন আমার আগুন বু‌কে জ্ব‌লে আগুন
ভীষণ এক জ্বালা ।

ইদা‌নিং সে উ‌কি মা‌রে মে‌ঘে ফাঁকে ফাঁ‌কে
ভু‌লে গিয়ে‌ছে সে,ভালো বে‌সে‌ছি যা‌কে
তবুও সে আমার কা‌ছে মহা এক ক‌বি
‌গোপ‌নে গোপ‌নে এ‌কে যাই তা‌রই ছ‌বি
ক‌বির ভাল থাকা আমাকে ভাল থাকায়
আ‌মি ভীষণ মন্দ থা‌কি তাহার দু:খ প্রা‌তে ।

 

বেলার শে‌ষে

‌যে ফু‌লে বাঁজপাখীর হা‌মেসা আচঁড়
‌সে ফু‌লে মৌমা‌ছি ব‌সেনা ভু‌লেও
‌যে ফুলবালার চোখ চ‌লে যায় দুর দুরা‌ন্তে
‌অ‌নি‌র্ণে কত স্বপ্ন বু‌নে তার বু‌কের ত‌লে
ভূ‌মি থে‌কে জ‌মি‌নের বু‌কে আকা‌শের চুম্বন
‌সে আকা‌শের ঠো‌টেই স্পর্শ ক‌রতে চায় ফুলবালা
তা‌রই নিশায় গা‌য়ে মে‌খে আ‌লোর বর্ণ্যা
ফুলবালা হয়‌তো বু‌ঝেনা অথবা জা‌নে না
আকা‌শ কখনও ছুঁই‌তে পা‌রেনা মা‌টির বু‌ক


একদিন ফুলবালার পাঁজ‌রে আকান্ত হ‌বে ভারী
ফু‌রি‌য়ে যা‌বে দি‌নের ভিতর দি‌নের আ‌লো
জীব‌ন আ‌লো হা‌রি‌য়ে যা‌বে এক‌দিন বিনি‌দ্রে
গোধুলীর মি‌ছি‌লে কুয়াসার মান‌চি‌ত্রে ।

সকা‌লের আ‌গে নাম‌বে সময়ের ক‌ঠিন রাত
এভা‌বে ফুলবালা ভুগ‌বে যন্ত্রণায় ভুগ‌বে ভীষণ
‌চো‌খের জল নিভা‌তে পার‌বেনা অনুতপ্তের আগুন
সে‌দিন বুঝ‌বে ফুলবালার হিসাব বেলার শে‌ষে ।

বৃত্তের কাছে

কারোর কাছে আমার কোন মূল্য নেই
তাই চুপচাপ পড়ে থাকি শবের ভাগাড়ে
মনের সামিয়ানায় হেটে হেটে যাই দুরে
অথচ আমার পায়ের নিচে চোরা বালি
না পারি চলতে না পারি মরতে
সম্মুখে আমার বিরান মাঠ ।

নিজেকে মনে হয় কুয়াসার মত সন্ধ্যা
জিপসী ভেলার নিলোর্জ্জ দৃষ্টি খাবলে খায়
আমার আধাঁরে যেটুকু সব আলোকেই
বাতাসহীন বাতাসে কেবলেই উড়ে যাই
অথচ পড়ে থাকে বিশাল এই মাঠ এই ঘাট ।

আর আমিও ভাবি এভাবেই ম‌রে যাই
কিন্ত মরনে আমি ‌যে বড় ভয় পাই ।

রাতে নাকি মাঠে

বনবাদারের ছাঁয়ায় ঘুড়েছি অনেক
বসেছিলাম শাখা শাখায় ফুলে ফুলে
তার মৌ মৌ ঘ্রাণে নেমেছির সন্ধ্যা
আমার ঘুম চোখে জেগে ছির জোস্না ।

অন্ধকার ছায়ায় ঘুমেয়ে ছিলো স্বপ্নগুলো
তবুও কোনকিছু স্ফর্শ করি নাই আমি
এভাবে সময় গোড়ায় আলো-আধাঁর পধে
ফুরে যায় রাত জেগে উছে মাঠ
পড়ে থাকি আমি রাতে নাকি মাঠে ।

এতো দ্বন্দ কেন

বাতাসে বাতোসে যেখানে চলে ঘৃর্ণিত দ্বন্দ
সেখানে মেঘের ইচ্চার নেই কোন মূল্য
কখনো কচু পাতায় বসে থাকা বিন্দু তুল্য
অথবা হেমন্তের শেষে ঝড়া পাতার হৃদপিন্ডে
সূর্য্যে চুম্বনে চুষে নেয় বড় নিষ্টুর মৃত্যু ।

যেখানে রোদ আর মেঘের চলে নিলোর্জ্জ দ্বন্দ
সেখানেই মুরুভূমির নিরর্থক তাকিয়া থাকা
তার আশা হয়তো নামবে কোন এক দিন
আকালিক বৃষ্টি কুয়াসার মত ঝর
আলোর ছাঁয়ার মত গাঢ় অন্ধকার ।

যেখানে দিগন্ত জুড়ে চলে রাতের বৃষ্টি
সে আকাশে থাকেনা গ্রহ-নক্ষত্র জোস্নার চাঁদ
কুয়াসার শেষে রাতের মৃত্যু হয় অবহেলায়
দিনের আলোয় একটা একটা করে খসে পড়ে
সব আশার সামিয়ানা ছিড়ে ছিড়ে ধুলো হয়ে ।

যেখানে দিন চলে দিনের মত
যেখানে রাত চরে রা‌তের মত
তাহলে এতো দ্বন্দ কেন সব খানে ?

শুনতে কি পাও- আযনিকা

কুয়াশার আকাশ মেঘে ছিলো ঢাকা
জমিন হারিয়েছে রোদের মানচিত্র
আমিও ছিলাম ভীষণ অন্ধকারে
পড়ে ছিলাম শুকনা ঘাষের উপর
হঠাৎ মেঘের কোল থেকে নক্ষত্র এক‌টি
খসে পড়ে আমার এ বুকের প’রে
তারেই আলোয় কেটে গেল সব আধাঁর
দেখি বহু দুর আকাশ দিগন্ততে প্রান্তে
যেখানে স্বপ্নরা উড়ে সুখের পাখনা মেলে ।

কখনোর সখনো নক্ষত্র আমার
হারিয়ে যায় কুয়াসার মত ভারী আকাশে
তখন আমি হয়ে যাই বড় একা, বড় একা
আধাঁরের ছায়া ছুটে আসে তর তর করে
রাতের ছায়া এ বুকে বাঁজে রিন রিন সুরে
শুনতে কি পাও ওআমার আযনিকা ।

 

সে পথ খুঁজি আমি

আমি চলছি আজও সময় নদী‌টির ধারে ধারে
তবুও কেন পথের ঠিকানা শেষ হয়না দেখনা হেটে হেটে চ‌লে এলাম আজ সাগর পাড়ে
তবুও পথের শেষ ঠিকানাটার নেই কোন দৃষ্টিতে
মেঘের যেমন নিদৃষ্ট কোন পথ নেই আকা‌শে
রোদের যেমন ‌নেই কোন মানচিত্র নেই
ফাঁকা মাঠে যেমন থা‌কেনা কোন আ‌লোর ছাঁয়া
তেমনি আমার চলার পথের নেই কোন ঠিকানা ।

একদিন কুয়াশার ভোরে দেখলাম কা‌ছে
দিনের শেষে সূ‌র্য্যের ঠিকানা আছে
রাতেরর শেষ সময় আছে সূর্য্যের পিছে
সূর্য্যে নিদৃষ্ট একটা পথ আছে তার গন্ত‌ব্যে
গ্রহ নক্ষত্র চলে নিজ নিজ কক্ষপথে ।

শুধু আমার চলার নেই কোন নিদৃষ্ট পথ
আমার কোন চাওয়া নেই, পাওয়ার মাঝে
আমি কি চাই তা হয়তো জানি না
অথবা চিনি না তবুও চলছি বিরামহীন
চলছি কুয়াশার পথে, সেই পথের ঠিকানায়
সে পথ খুঁজি আমি, যে পথের সকলে যায় ।