Monday, 10 March 2025, 04:54 AM

অবৈধ গণ্য করা উচিত বিএনপিকে : প্রধানমন্ত্রী

বিডি নীয়ালা নিউজ(১২জানুয়ারি১৬)- অনলাইন প্রতিবেদনঃ রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপিকে অবৈধ গণ্য করা উচিত বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘হাইকোর্টের রায়ের মধ্য দিয়েই জিয়াউর রহমানের ক্ষমতা দখল সম্পূর্ণ অবৈধ ও অসাংবিধানিক ঘোষিত হয়েছে। কাজেই সে যা যা করে গেছে, সবই অবৈধ। ক্ষমতায় গিয়ে জিয়া যে দল গঠন করেছে, সেটাও প্রকৃতপক্ষে অবৈধ বলে গণ্য করা দরকার। জিয়াকে আর রাষ্ট্রপতি বলার অধিকার নেই।’

গতকাল সোমবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে

সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী আসেন বিকেল সোয়া তিনটার দিকে। কিন্তু এর আগেই সমাবেশস্থল কানায় কানায় ভরে যায়। নারী কর্মী-সমর্থকদের উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো। সমাবেশস্থলের প্রবেশমুখগুলোতে কড়াকড়ি থাকায় বাইরেও প্রচুর মানুষ ছিল।

মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দেওয়া বক্তব্যের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যে সুরে কথা বলে, তিনি (খালেদা) সেই সুরে কথা বলেন। ওনার কত বড় দুঃসাহস, শহীদদের নিয়ে তিনি কটাক্ষ করেন। উনি বলেন, এত মানুষ নাকি মারা যান নাই। অর্থাৎ ওনার পেয়ারে পাকিস্তান যে সংখ্যা বলে, সেটা ওনার কাছে সত্য। আর মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে মানুষ যে সত্য দেখেছে, জেনেছে, সেটা ওনার কাছে সত্য না।’

বিডিআর বিদ্রোহে খালেদা জিয়ার সম্পৃক্ততার সন্দেহ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিদ্রোহ শুরু হলো নয়টার দিকে। খালেদা জিয়া কেন ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে সকাল সাড়ে সাতটা-আটটার মধ্যে আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে গেলেন? সেই জবাবটা তাঁকে জনগণের কাছে দিতে হবে। আজকে এটাই প্রতীয়মান হয়, ওই ঘটনার সঙ্গে তাঁর যোগসূত্র ছিল। তাঁর (খালেদা) ছেলে লন্ডন সময় রাত একটা থেকে দুইটার মধ্যে ৪৫ বার ফোন করেছে বাংলাদেশে। মাকে ঘর থেকে তাড়াতাড়ি বের হয়ে যেতে বলেছে। কেন তার মাকে ঘর থেকে বের হয়ে যেতে বলল? এর রহস্যটা কী? এ ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততা কার থাকতে পারে? তাঁর নিজেরই থাকতে পারে।’

বিডিআর বিদ্রোহে নিহত ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তার ৩৩ জনই আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান—আবারও এ তথ্য উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তাদের কেন সেখানে পোস্টিং দেওয়া হয়েছিল, সেটাও একটা প্রশ্ন। আসলে বিডিআর বিদ্রোহের মাধ্যমে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। উচ্চ আদালতে এ ঘটনার বিচার চলছে। আমরা এই ষড়যন্ত্রের রহস্য উদ্ঘাটন করব।’

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে হওয়া ভোট নিয়ে করা খালেদা জিয়ার বক্তব্যের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি খালেদা জিয়াকে জিজ্ঞেস করি, উনি যে ভোট নিয়ে কথা বলেন, ওনার স্বামী যে ভোট করেছিলেন, হ্যাঁ-না ভোট। ১১০ শতাংশ ভোট পড়েছিল, নাকি বাক্স খালি ছিল? খালেদা জিয়া ১৯৯৬ সালে ভোট চুরি করেছিলেন। কিন্তু বাংলার মানুষ তাঁকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেছিল। তিনি হয়তো এটা ভুলে গেছেন।’

মর্যাদাবৈষম্যের অভিযোগে শিক্ষকদের চলমান আন্দোলনের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সকলের ১২৩ ভাগ বেতন বৃদ্ধির পরও অনেকের মধ্যে অসন্তোষ। বেতন এত বাড়ানোর পর কেন অসন্তোষ, তা আমার বোধগম্য নয়। পেটে যখন খাবারের টান থাকে, তখন খাবারের চিন্তা থাকে। খাবারের চিন্তা তো আমি দূর করে দিয়েছি। তবু এখন পেট চিপিয়ে যায়!’

শিক্ষকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘যদি কোনো অসুবিধা হয় দেখব, দেখছি। তাই বলে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা নষ্ট করবেন না। যদি ক্লাস নেওয়া বন্ধ করে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা বন্ধ করেন, ছাত্রছাত্রীরাও তা মেনে নেবে না।’

প্রধানমন্ত্রী শিক্ষকের মর্যাদার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘আমার শিক্ষক ড. আনিসুজ্জামান সাহেব, আমার শিক্ষক রফিক স্যার (রফিকুল ইসলাম)। প্রধানমন্ত্রী হলেও তাঁদের আমি আমার শিক্ষক হিসেবে সম্মান করি। সেই মর্যাদাই তাঁরা পাক। এখন একজন শিক্ষক যদি সচিবের মর্যাদা চান, আমার কিছু বলার নাই। সম্মানবোধ কিছুটা নিজেদের ওপরই নির্ভর করে। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া বন্ধ করে সম্মান আদায় করা শিক্ষকদের মানায় না। এটা একজন শিক্ষকের জন্য মোটেই সম্মানজনক না। আর যদি সচিবের মর্যাদাই লাগে, তাহলে চাকরি ছেড়ে দিয়ে নিজেরা সচিব হয়ে যান বা পিএসসিতে পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন।’

শেখ হাসিনা শিক্ষকদের জন্য নেওয়া তাঁর বিভিন্ন পদক্ষেপ উল্লেখ করে বলেন, ‘আমরা চাই শিক্ষকেরা মর্যাদা নিয়ে থাকুন, সম্মান নিয়ে থাকুন। তবে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া বন্ধ করা যাবে না। সব ইউনিভার্সিটি সচল রাখতে হবে।’

সারা দেশে নেওয়া নানা উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আসার পথে যানজটে পড়েছি। যানজট দেখলে আমার দুঃখ হয় না, আনন্দ হয়। মানুষের আর্থিক সচ্ছলতা বৃদ্ধি পেয়েছে। গাড়ি ক্রয় করার সক্ষমতা অর্জন করেছে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্য দিয়ে মেট্রোরেলের পথ যাওয়া নিয়ে আন্দোলনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছাত্রছাত্রীদের কথা বিবেচনা করে মেট্রোরেলের একটি স্টেশন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাখা হয়েছে, যাতে উত্তরা, মিরপুরে থাকা শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে পারে। কিন্তু কিছু ছাত্র-শিক্ষক আন্দোলনে নেমেছেন। আসলে এ দেশে এক শ্রেণির মানুষ আছে, যা-ই করতে যাবেন, তারা সবকিছুতে ‘কিন্তু’ খোঁজে। তিনি বলেন, ‘এ দেশের মানুষের মঙ্গল কিসে, অসুবিধা কিসে, সেটুকু জানার মতো জ্ঞান আমার আছে। উন্নয়নের কাজে দয়া করে কেউ বাধা দেবেন না।’

সমাবেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘সারা বিশ্ব বলছে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সর্বক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে। এমন কোনো সেক্টর নেই যে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে না। শেখ হাসিনাকে আরও সময় দিতে হবে। আরও কয়েকটা টার্ম তাঁর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রয়োজন আছে। শেখ হাসিনার জন্য নয়, এ দেশের মানুষের জন্য।’

শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্থহীন হয়ে যাবে যদি অর্থনৈতিক মুক্তি দিতে না পারি। তাই এদিন তিনি তাঁর দ্বিতীয় বিপ্লবের সূচনা করেছিলেন।’

কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, শেখ ফজলুল করিম সেলিম ছাড়াও সমাবেশে বক্তব্য দেন মাহবুব উল আলম হানিফ, দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মেয়র আনিসুল হক ও সাঈদ খোকন, এম এ আজিজ, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী, সুজিত রায় নন্দী, আমিনুল ইসলাম প্রমুখ। সমাবেশ পরিচালনা করেন দলের প্রচার সম্পাদক হাছান মাহমুদ।

// Disable right-click context menu // Disable text selection // Disable dragging of images and text // Disable copy events // Disable common keyboard shortcuts for copying // Check for Ctrl/Command key combinations with C, X, S, or P