Sunday, 22 December 2024, 07:56 AM

প্রসঙ্গ- নারী পুরুষের অবাধ মেলামেশা।

                                              ……….মোঃ আব্দুল মান্নান

 

মানুষ তার জীবনে আন্তরিকভাবে যে আদর্শ ধারণ করে, তার রঙেই তার মূল্যবোধ গড়ে ওঠে। মানব জাতির রয়েছে বিভিন্ন জীবনাদর্শ যেমন সমাজতন্ত্র, পূঁজিবাদ, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতাসহ নানা ধরনের জীবনাদর্শ। মানুষ মনে প্রাণে যে আদর্শ ধারণ করবে সে আদর্শের রঙেই গড়ে উঠবে তার মূল্যবোধ এবং এ মূল্যবোধই মানুষের জৈবিক তাড়নাকে সংযত করে, আবার অনেককে ব্যভিচারে প্রলুৃব্ধ করে। যে ব্যক্তি পাশ্চত্যের ফ্রি- সেক্স এর আদর্শ ও সংস্কৃতি বুকে ধারণ ও লালন করবে তার কাছে ব্যভিচারকে মনে হবে খুবই শোভনীয়, পছন্দনীয় ও সুন্দর কাজ।

যে ব্যক্তি সঠিক অর্থাৎ ধর্মের আলোকে জীবনাদর্শ লালন করবে তার নিকট ব্যভিচার হলো একটি জঘণ্য ও সর্বনিকৃষ্ট কাজ। ব্যভিচারের ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষ উভয়ই একে অপরের সহযোগি। কেননা পরস্পরের সম্মতিতে যে অবৈধ যৌনাচার, তাই-ই- ব্যভিচার। আর এ ব্যভিচার চরিত্রের দৃঢ়তাকে ধ্বংস করে, কলুষিত জীবন গঠনে অভ্যন্ত করে এবং পরবর্তী প্রজন্মকেও প্রভাবিত ও কালিমায় লিপ্ত করে। মানব সমাজে প্রধান দুটি সমস্যা রয়েছে, একটি হ’ল ব্যক্তি ও ব্যক্তি সমষ্টির পারস্পারিক সম্পর্ক নির্ধারণ এবং অন্যটি সমাজ ও সভ্যতায় নারীর অবস্থান নির্ধারণ। এ দুটি ক্ষেত্রেই মানব জাতির রচিত মতবাদগুলো ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। কেননা পৃথিবীতে জেঁকে বসা ইউরো- আমেরিকান জীবন ধারা দুটি ক্ষেত্রেই মানুষকে দুর্ভোগের আবর্তে নিক্ষেপ করছে। পরীক্ষিত এ স্বাতন্ত্রবাদ ও সমাজবাদ কোনটিই মানুষের জন্য কল্যাণকর হয় নি। আর ইউরো- আমেরিকান জীবনধারা ইসলাম ধর্ম এবং নারীদের জন্য চরম অবমাননা কর।

যে জীবনধারা এদেশে বাস্তবায়নের প্রচেষ্টায় নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন সর্বদাই ব্যস্ত। ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তে বাংলাদেশ প্রতিদিন বহুল প্রচারিত দৈনিক প্রত্রিকার খোলা কলামে লেখা “প্রেমকে কেন অসামাজিক কাজ বলা হয়” শিরোনামে প্রকাশিত হয়। এ পত্রিকায় তসলিমা নাসরিন লিখেছেন, পার্ক ও হোটেল থেকে তরুন-তরুণীদেরকে ধরে নিয়ে আসা হয় ও জঘণ্যভাবে অপমান করা হয়, অকথ্য ভাষায় গালি-গালাজ করা হয়, জরিমানাও করা হয় এবং মামলায় ফাঁসানো হয়। তাদের অপরাধ, তারা অসামাজিক কাজ করেছে অর্থাৎ প্রেম ও সেক্স করেছে। তসলিমা নাসরিন তার লেখায় এ কথা বুঝাতে চেয়েছেন যে, তরুণ-তরুণীরা অবাধে প্রকাশ্যে পাশ্চাত্য ধারায় একে অপরের সাথে মেলামেশা করবে, সেক্স করবে, তাদেরকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন কিছুই বলতে পারবেনা। এক কথায় পশ্চিমাদের জীবন আদর্শের আলোকেই চলবে এদেশের সমাজ ব্যবস্থা।

তার এ লেখা পড়ে মনে হয়, এ তসলিমা নাসরিন যেন ইউরো-আমেরিকার অধিবাসী কিংবা অন্যকোন পশ্চিমা ফ্রি-সেক্স এর দেশের বাসিন্দা অথবা এ দেশের যুব-সমাজকেই ফ্রি-সেক্স করতে উষ্কে দেয়ার পায়তারা করার অপচেষ্টা ও ব্যভিচার প্রসারের একমাত্র কারণ হতে পারে। আর যে সমাজে ব্যভিচারের প্রতিকার নেই সে সমাজে ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন অবশ্যম্ভাবী। ফ্রি-সেক্সের দেশগুলোর দিকে নজর দিলে এর প্রমাণ মিলে। বাংলাদেশ হ’ল একটি মুসলিম প্রধান দেশ। রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতির একটি হলো ধর্ম নিরপেক্ষতা, কিন্তু ফ্রি সেক্স এর দেশ নয়। অবৈধ সেক্স করা এ দেশে বে-আইনী। এ দেশটা পাশ্চাত্য জীবনাদর্শে গড়া দেশ নয় এবং এ দেশের ৮৫ ভাগ জনগণ মুসলিম।

এছাড়া বাকী ১৫ ভাগ জনগণও অবাধ মেলামেশার মাধ্যমে অবৈধ যৌনতা সমর্থন করে না। ধর্মীয় কারনেই পশ্চিমা দেশ সমূহের ভোগবিলাসী কোন জীবানাদর্শ এখানে স্বীকৃত নয় এবং অনুমোদিতও নয়। কিন্ত তসলিমা নাসরিন তার লেখায় পশ্চিমাদের ভোগবিলাসি জীবন ব্যবস্থা অর্থাৎ “ফ্রি সেক্স” প্রথা প্রচলনে এ দেশের বিপদগামী যুব সমাজকে আরও উষ্কে দেয়ার প্রচারণায় মেতে উঠেছে। এ কারনে পশ্চিমাদের তথাকথিত সেই ফ্রি-সেক্স এর আগ্রাসনের শিকার হতে পারে এ দেশের বিপদগামী তরুণ-তরুণীরা। আর নারী সমাজের উপর নেমে আসতে পারে পাশবিক অত্যাচার, যৌননির্যাতন, ব্যভিচার ও ধর্ষণের মত ভয়ংকর ঘটনা। যে কারনে নারীদের নিরাপত্তা বিপন্ন হতে পারে, জন্ম নিতে পারে অকল্পনীয় বর্বরতার।

ব্যভিচার কোন ধর্মেই স্বীকৃত নয় আর একমাত্র ধর্মীয় অনুশাসনই ব্যভিচার বন্ধ করতে পারে। পাশ্চত্য যৌনদর্শন হলো ফ্রি-সেক্স বা ব্যভিচারের দর্শন। ব্যভিচারই এ দর্শনে স্বাভাবিক যৌনতা হিসেবে স্বীকৃত। ব্যভিচার হল অত্যন্ত নির্লজ্জতা ও নিকৃষ্টতম আচরণ মূলক একটি জঘন্য কাজ। এ নিকৃষ্ট ও জঘন্য কাজ বন্ধে আমাদের সচেতন হওয়া প্রয়োজন। পাশ্চত্য যৌন দর্শনকে বহাল রাখার অপপ্রচারে বিদেশে বসেও তৎপরতা চালাচ্ছে এ বিতর্কতি লেখিকা।

দেশে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশার আইনি কোন স্বীকৃতি নেই, তা সত্বেও দেশে সংঘঠিত হচ্ছে যৌন সংক্রান্ত নানা ধরনের বর্বরচিত ঘটনা। এ সব কর্মকান্ড বন্ধে অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে কাজ করছে দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তারপরও এ ধরনের অবৈধ কর্মকান্ড নিয়ন্ত্রণে হিমশীম খাচ্ছে তারা। আর এ প্রবণতা থেকে বিরত রাখতে প্রয়োজন নিয়ন্ত্রিত জীবন। নিয়ন্ত্রিত জীবনের বড় নিয়ামক হ’ল নৈতিকতা। এর উপস্থিতি মানুষকে সততা ও মানবতার পথে পরিচালিত করে। উচ্ছশৃঙ্খলতা ও খারাপ কাজ পরিহারে প্রেরণা জোগায়। নৈতিকতার বড় বাহন হ’ল ধর্মীয় মূল্যবোধ। ধর্মীয় মূল্যবোধ থেকেই মানুষ আচার -আচরণের দিক নির্দেশনা পায়। তসলিমা নাসরিনের ভাবধারায় নারী পুরুষের অবাধ মেলামেশা ও ফ্রি-সেক্স নামক শ্রুতিমধুর, মনমাতানো শ্লোগান এ দেশের বিপদগামী তরুণ সমাজকে ফ্রি-সেক্স করার হীন মানসিকতা জোগাতে সক্ষম হলে সমাজের অপূরণীয় ক্ষতি হতে পারে।

তসলিমা নাসরীন এর এ লেখা সর্বদাই বিপদগামী যুব সমাজকে উৎসাহ জোগাবে, যা থেকে এর বিস্তৃতিও ঘটতে পারে ব্যাপকভাবে। এমনিতে পাশ্চাত্য জীবনধারার শ্রুতিমধুর স্লোগান ও অন্তঃসারশুণ্য বাহ্যিক চাকচিক্যে প্রভাবিত হয়ে সঠিক পথ মনে করে সে পথেই এগিয়ে যাচ্ছে দ্রুততার সাথে এ দেশের বেশির ভাগ যুবক। আশ্চার্যের বিষয় হ’ল ইউরোপ আমেরিকার জীবন ব্যবস্থার গোলক ধাঁধায় পড়ে প্রতাক্ষ ও পরোক্ষভাবে এ দেশের যুব সমাজ তাদের দেয়া জীবন ধারায় চলতে এমনিতেই পিছপা হচ্ছে না এবং এ জীবন ধারার ভয়ানক পরিনতির কথা ভেবেও মোটেই সঠিক চেতনা জাগ্রত হচ্ছে না তাদের মনে, আফসোস সেখানেই। তাই বিতর্কীত লেখিকা তসলিমা নাসরিনের এ ধরনের উষ্কানীমূলক লেখা প্রকাশ পেলে তা আমাদের যুব সমাজে ভয়ানক ক্ষতি ডেকে আনতে পারে, যা থেকে এখনই সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।

সুতরাং আমাদের এখনই সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় এসেছে। আমরা ব্যভিচারের পাশ্চত্য দর্শনকে গ্রহণ করব নাকি মুসলিম জীবন দর্শনে শান্তি-নিরাপত্তা ও মর্যাদার জীবন যাপন করে প্রকৃত মুক্তির পথ খুঁজবো।