Monday, 07 April 2025, 07:29 AM

পতিতাবৃত্তির জম্ম ও বিবর্তন

                                                      মোরাই রাশেদ 

বিডি নীয়ালা নিউজ(১৭ই এপ্রিল১৬): আমি ইতিহাসের বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পারি যে, পতিতা বৃত্তি একটি আদিম পেশা । আদিম বলতে আমরা কি বুঝি ? আদিম বলতে বুঝায়, সৃষ্টির শুরু থেকেই যা চলে আসছে। আসলে পতিতাবৃত্তি নতুনেও নয়,আবার আদিমেও নয় ।

পৃথিবীতে মানব সৃষ্টির শুরু থেকেই যখন মানব সমাজ তাদের জীবন যাত্রার মান আধুনিকতার বদৌলতে উন্নতির দিকে লাগামহীন ভাবে বেড়ে যাচ্ছে এবং সমাজ- সভ্যতার উন্নতির লক্ষ্যে ক্রমান্নয়ে এগিয়ে চলছে ,সেই থেকেই পতিতা বৃত্তি পেশা হিসাবে চলে আসছে এমন কোন দলিল আমার দৃষ্টিগোচর হয় নাই, তবে যৌনাচার ছিল। কিন্তু এ কথা নিসন্দেহে বলতে পারি, পতিতা বৃত্তি পরিপূর্ণ পেশা হিসাবে সমাজ বির্বতনের বহু পরে শুরু হয়েছে। এনসাইক্লোপেডিয়া বৃটেনিকা  বলেছে “যৌনাচার সমাজে প্রচলিত ছিল এমন সমাজ আদিতে দেখা যায় না ”।

’’তবে প্রাচীন ভারত, মধ্যপ্রাচ্য ও পশ্চিম আফ্রিকায় অদ্ভুদ অদ্ভুদ সব সামাজিক রীতিনীতির কারণে মেয়েদেরকে বহুভোগ্যা হতে হতো। এগুলো সংক্ষেপে ……………………….

পেশার আকারে এগুলোকে  সরাসরি পতিতা বৃত্তি বলা যাবে না । তবে এই ধরনের ব্যবস্থার ফলে অনেক মেয়ে পরবর্তীতে  পরিত্যক্তা হয়ে দেহদান করে অর্থ আয় করতো । এটাকেও সরাসরি  সংগঠিত আকারে  আধুনিক গণিকা ব্যবসার মতো বলা যাবে না। তা ছিলো নিতান্ত অসংগঠিত ও বিক্ষিপ্ত এবং এরা ছিলো সামাজিক কু-প্রথার শিকার । এ ব্যবস্থাটিও  আদিম নয় ।

আদিম কথাটাই আপেক্ষিক । আজকের তুলনায় বৃটিশ আমল আদিম, পুরোনো, হাজার বছর পরে আমরা হয়ে যাবো প্রাচীন। সমাজ শুর হবার পর থেকে, আরো পরিস্কার করে বললে,  মানুষ জন্মের শুরু থেকে কোন অবস্থায়ই পতিতাবৃত্তি প্রচলিত ছিলো না। এমন কি কোনো যৌনাচারের কথাও জানা যায় না।

মানব জীবনের অস্তিত্ব সাত লাখ বছর আগের বলে বৈজ্ঞানিকেরা মনে করে থাকেন । কিন্তু সভ্যতার যাত্রা  দেড় লাখ বছর আগের বলে জোরালো ভাবেই মনে করা হয় । সাত লাখ বছর আগের কথা বাদ দিলেও, দেড় লাখ বছর আগে যে সভ্যতার শুরু, পতিতাবৃত্তি পেশার অস্তিত্ব এই দেড় লাখ বছর আগে যদি আবিস্কার করা যায় তবেই তাকে আমরা আদিম বলবো । কিন্তু দেড় লাখ বছর আগের সভ্যতার বহু প্রমাণ পাওয়া গেলেও পতিতাবৃত্তির কোন প্রমাণ পাওয়া যায়না”

মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম পতিতাবৃত্তি ঃ কারণ ও পতিকার গ্রন্থে পাওয়া যায় “ সভ্যতার যাত্রাপথে বহু – বহু বছর পরে ,ভারতে বৈদিক যুগে পতিতাবৃত্তি প্রচলিত ছিলো বলে কোনো কোনো অনির্ভরযোগ্য প্রাচীন পুস্তকে জানা যায় । অবশ্য এ ধরণের পতিতাবৃত্তি বর্তমাণ যুগের  মতো নয় । মূলত ধর্মীয় ও সামাজিক কুসংস্কার ও খারাপ আচারের ফলেই এসব পতিতাবৃত্তির উদ্ভব ঘটতো। বৈদিক যুগের পরবর্তী যুগে পতিতা বৃত্তি আইন সম্মত প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয় বলে যানা যায়। তৎকালীন ভারতীয় সমাজের নোংরা আচার ব্যবস্থার কারণে নারীজাতী নিপীড়িত, লাঞ্চিত হতো, ভোগকরা হতো তাদেরকে বিভিন্ন ভাবে, নানা নিয়ম নিষ্ঠার ছন্দাবরণে। অবশেষে ছুঁড়ে ফেলে দেয়া হতো রস নিংড়ানো ছোবড়ার মতো । অগত্যা  বেশ্যাবৃত্তি  ছাড়া গতি থাকতো না এদের। এরকম অত্যাচারের কাহিনী ছড়িয়ে আছে বিভিন্ন অনুসন্ধানী গ্রন্থে । সে অত্যাচার ও নারী নির্যতনের ধরন ও প্রকৃতি বহু বিচিত্র। আমরা সে বিষয়ে কিছু আলোকপাত করবো । দেখবো কিভাবে নির্যাতনের শিকার হয়ে ইতিহাসের একটি পঙ্কিল অধ্যায়ে নারী তার দেহ বিক্রির ব্যবসায়ে নামতে বাধ্য হয়েছে”।

কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে গণিকায় উল্লেখ করা হয়েছে  রাজসভার অপরিহার্য অঙ্গ হিসাবে । “ প্রধান গণিকাসহ  বেশ কিছু গণিকা  নিয়োগ করা হতো, যারা রাজার বিভিন্ন সেবা যত্ন ও অঙ্কশায়িনী হবার জন্যে প্রস্তুত থাকতো। রাজদরবারে গণিকা ছাড়াও মন্দিরে দেবদাসী  নিয়োগের কথা  কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে উল্যেখ পাওয়া যায় । প্রথাটি ধর্মীয় ভিত্তিতে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি লাভ করায় সুন্দরী যুবতীদের কেনাবেচা  আইনানুগ হয় । তখন থেকেই  সুযোগ সন্ধানীরা এই প্রথার সুযোগ নিয়ে ব্যাভিচার শুরু করে । দক্ষিণ ভারতে এই প্রথা এতো জনপ্রিয় ছিলো যে, মোক্ষ ও অর্থলোভের আশায় কেউ কেউ বাইরে থেকে মেয়ে কিনে এনে ,আবার কেউবা নিজের কন্যাকে পর্যন্ত মন্দিরে উৎসর্গ করতো । রাজকীয় পুরুষ ও মন্দিরের উচ্চশ্রেণীর পুরোহিতেরা এই নারীদেহ ভোগ করেতো । এদের জন্য ভালবাসা বা বিয়ে ছিলো মৃত্যুতুল্য অপরাধ। মন্দির থেকে একবার এরা বিহিস্কৃত হলে পতিতালয় ছাড়া এদের আর জায়গা হতো না ।

দেখা যায় কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে বৈদিক যুগে ভারতে পতিতালয়ের অস্তিত্বের  কথা বলা হয়েছে । শুনলে অবাগ লাগে, সে সময় মানুষেই কি না কাজ করে,তাও সভ্যতার জন্য, নাকি উন্নত জীবনের বা ভোগ বিলাসিতার জন্য ।

অমর কোষ গ্রন্থে ‘জায়াজীব’ বলে একশ্রেণীর লোকের উল্যেখ পাওয়া যায়, “যে সমাজে পয়সার বিনিময়ে একজনের স্ত্রীকে অনেকে ভোগ করতো”।

“রামায়ণে আছে রাম বনবাসে যাবার সময় , সীতা সংগে যাবার জন্যে জেদ ধরলেন । রাম অস্বীকার করলে সীতা বললেন,‘ নর্ত্তকেরা যেমন তাদের স্ত্রীদের অন্যভোগ্যা করে, তুমিও আমাকে তাই করতে চাও ?”

এখান থেকে চিন্তা  করলে অন্যভোগার সম্পর্কে একটা ধরণা  আসে ………

“বাৎসায়নের কামসুত্রে চারণকবি সম্প্রদায়ে উল্যেখ করে বলা হয়েছে, চারণদের স্ত্রীরা  সহজলভ্যা ছিলো ”।

পৌরাণিক কাহিনী ও শাস্ত্রগুলো থেকে আরো জানা যায় , “রাজবাড়ির উৎসবের দিন সিংহ দরজা খুলে দেওয়া হতো। বহু রমণী আসতো বিভিন্ন কাজে ও দেখতে। রাজা দুর থেকে দেখে যাকে পছন্দ করতেন দ্যূতি মারফতে  উপঢৌকনসহ তাকে রাজার শয্যাশায়িনী হবার জন্যে আমন্ত্রণ জানানো হতো ! স্বেচ্ছায় না এলে জোর করে ধরে এনে পালষ্কে ফেলা হতো। রাজার দেখা দেখি আত্যবর্গের কাছে যে  সকল রমণী কাজে আসতে বাধ্য হতো ,তারা এই সকল উচ্চ রাজকর্মচারীর যৌন সম্ভোগের শিকার হতো ”।

সেই সময়ে গ্রাম প্রধানেরা বা প্রভাব শালীর যুবক পুত্রেরা  তাদের কৃষিসহ নানান  কাজে নিয়োজিত রমণীদের তাদের সঙ্গে যৌন সঙ্গমে মিলিত হতে বাধ্য করতো তাদের প্রভাব খাটিয়ে অথবা  তাদের পিতার  পদমর্যাদার  সুযোগ নিয়ে ।

কামসুত্রে আরো উল্যেখ আছে, “বিধবা,স্বামী পরিত্যাক্তা, প্রসিতভর্তৃকা, অক্ষমের স্ত্রী ও বাড়ির  দাসীকে পুরুষরা  বিভিন্নভাবে  ফুসলিয়ে অথবা জোর করে ধর্ষণ করতো । এসব যৌন অপরাধের বিরুদ্বে আইনও  ছিলো। বাৎসায়নের  এই  চিত্রের  সঙ্গে  আজকের  দিনের  একটুও  তফাৎ  নেই।

বৈদিকোত্তর যুগের চিত্র তুলে ধরেছেন এল.ডি.যোশী, “ নৈমিতাল, আলমোড়া এবং গাড়োয়াল অঞ্চলে দেশীয়  রাজাদের  অধীনে  ‘নাইক’ নামে  এক  সম্প্রদায়  ছিলো। নাইকদের  মেয়েরা  ঘরের  পুরুষদের  ভরণ  পোষণের  জন্য  বেশ্যাবৃওি  গ্রহণ  করতে  বাধ্য হতো। অর্থের  বিনিময়ে পুরুষরা  ঘরের  মেয়েদের  বিক্রি  করে  দিতো”।

বৃটিশ  শাসনামলে  আইন  করে  এই  প্রথা  বন্ধ  করার  চেষ্টা  করা  হয়।

“মিসেস  গৌরী  ব্যানার্জী  ‘নাম্বুদ্রি’ সমাজে এক মর্মস্পশী  চিত্র তুলে ধরছেন । “ নাম্বুদ্রি সম্প্রদায়ের কন্যারা থাকতো পর্দার অন্তরালে। কোন পুরুষ যদি হঠাৎ কখনো তাদের দেখে ফেলতো কিংবা স্পর্শ করতো, তবে সেই মেয়ে পতিতা বলে গণ্য হতো সমাজে । সমাজ প্রিতিরা মেয়েটিকে  সমাজচ্যুত ঘোষনা করতো । ঘোষণার পর প্রথমে বাড়ির ভৃত্যরা মেয়েটিকে যথেচ্ছ ভোগ করে রাস্তায় ফেলে দিয়ে আসতো । বাবা-মা‘র সাধ্য ছিলো না বাধা দিতে । রাস্তায় ফেলার  পরে  কাড়াকাড়ি করে যে তাকে নিতে পারতো ,ইচ্ছে মতো কয়েকদিন ভোগ করে তারপর সে তাকে বিক্রি করে দিতো অথবা অন্য কাউকে দান করতো । এমনি ভাবে হাত বদল হতে হতে মেয়েটি শেষতক গিয়ে পৌছতো অন্ধকার জগতে । আত্বহত্যা অথবা পতিতাবৃত্তি ছাড়া তখন তার সামনে আর কোনো পদ খোলা  থাকতো না ”।

“ ডি.এন. মজুমদার হিমালয়ের কোলে উপজাতিদের মধ্যে এক আশ্চর্য প্রথার কথা লিখেছেন । ‘রীত ‘ নামক এক প্রথা অনুযায়ী ব্যক্তি তার প্রথমা স্ত্রীকে অন্যের কাছে বিক্রি করে দিতো । সেই অর্থে সে স্বচ্ছন্দে দ্বিতীয় স্ত্রী সংগ্রহ করতে পারেতো । তাকেও সে এমনি ভাবে বেচে  দিতে পারতো । এই ভাবে কেনাবেচার  ফলে হাত বদল হতে হতে, যৌবন নিঃশেষ হলে পরে তারা আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হতো। স্থানীয় সরকার স্ত্রী বিক্রির ওপর কর আদায় করে রাজকোষে ভালো অর্থ জমা করতো”।

মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম লেখেছেন “ আমাদের বাংলাতেও এক সময় ছিলো এক উদ্ভুত প্রথা । রাজা লক্ষণ সেন ছিলেন এই প্রথার উদ্যক্তা । এই প্রথার নাম ‘কুলিন ‘ প্রথা । ব্রাক্ষ্মণ কুলিন পুরুষরা  অর্থের বিনিময়ে ঘরে ঘরে বিয়ে করে বেড়াতো । কোন কোন কুলিন স্বামীর শতাধিক স্ত্রী থাকবার কথাও জানা যায় । অনেক যৌবনবতী স্ত্রী স্বামীর সংসর্গ না পেয়ে ব্যাভিচারে লিপ্ত হতো । এতে সে গর্ভবতী হয়ে পড়লে ‘কুলিন স্বামী ‘মেয়ের পিতার কাছ থেকে  সন্তানের পিতৃত্ব স্বীকার করার বিনিময়ে অনেক টাকা আদায় করতো । অন্যথায় ব্যভিচারের অপরাধে মেয়েটিকে সমাজচুত্য করা হতো । বিতাড়িত মেয়েটির সামনে তখন খোলা থাকতো মাত্র দু‘টি পথ-      আত্বহত্যা না হয় বেশ্যাপল্লী ।

সামনত যুগে রাজ- পৃষ্ঠপোশকতায় বেশ্যাবৃত্তি প্রসার লাভ করে । রাজা মহারাজারা ছাড়াও আমাত্যবর্গ পেশাদার রমণী নিয়োগ করতো । সে সময় পেশাদার রমণীর এতো চাহিদা হয় যে, এদের যোগান দেবার জন্য নিয়মিত নারী চালান ,নারী কেনাবেচার ব্যবসার সূত্রপাত হয় । এক শ্রেণীর পুরুষ জীবিকা হিসেবেই এই ব্যবসাকে পেশা হিশেবে গ্রহণ করে। রাষ্ট্রের কাছে এই ব্যবসার কেনাবেচার হিশেব দিতে হতো ও কর পরিশোধ করতে হতো । রাষ্টীয় পৃষ্ঠপোশকতার ফলে এই ব্যবসা এককালে এতো জোরদার হয়ে ওঠে যে, গৃহস্থ রমণীদেরও রেহাই ছিলো না । সমুদ্র বাণিজ্যে ভারত থেকে নারী চালান যেতো বিদেশে , আবার বিদেশ থেকেও বাছাই করা রমণী আসতো ভারতীয় রাজদরবারের বৈভব বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে ।

এসব কাহিনী ভারতীয় পুরান ও ধর্ম- সংহিতাসমুহের ওপর ভিত্তি করে রচিত । এর ঐতহাসিক মূল্য পাঠকরাই  নির্ধারণ করবেন” ।

এবার এনসাইক্লোপেডিয়ার অনুসন্ধানে দেখা যাক পতিতাবৃত্তির জম্ম ইতিহাস ।“ নগর সভ্যতার পত্তনের ফলে ধীরে ধীরে যৌনতার প্রসার হতে থাকে ।

প্রথমাবস্থায় এটাকে দমন করা হলেও স্বার্থান্বেষী ও সংশিলষ্ট কিছু কিছু গ্রুপ এটাকে প্রশ্রয় দেয় । বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা, ক্রীতদাসী প্রভৃতিরা গোপনে যৌন ব্যবসায়ে নিয়োজিত হয়। ধীরে ধীরে গোপনে এই ব্যবসা স্বীকৃতি লাভ করে ।

ভূমধ্যাসাগরীয় অঞ্চলে ‘লিডিয়ান’ ও ‘সাইপ্রিয়ান’ জাতির কন্যারা দুরবর্তী অঞ্চলে গিয়ে বেশ্যাবৃত্তি করে অর্থ সংগ্রহ করে এনে বিয়ে করতো ।

পুরোহিতেরা কখনো কখনো ধর্মের নামে মেয়েদেরকে বেশ্যাবৃত্তিতে নিয়োজিত করতো । যেমন প্রাচীন ব্যাবিলোনিয়ায় মেয়েদেরকে ইশতার দেবীর মন্দিরে যেতে হতো । মন্দিরের যে পুরুষ প্রথমে জিহ্বা দিয়ে ঐ মেয়েকে রুপার মুদ্রা নিক্ষেপ করবে , সেই পুরুষ ঐ মেয়ের দেহ ভোগের অধিকার পাবে । এ নিয়ম প্রাচীন ভারত, মধ্যপ্রাচ্য ও পশ্চিম আফ্রিকায় প্রচলিত ছিলো ।

প্রাচীনকালে, এক পর্যায়ে প্রযুক্তিক উন্নয়নের ফলে নগরায়ণ সাধিত হয় এবং এই ধরনের নগরের মধ্যে পতিতাবৃত্তিকে পেশা হিশেবে স্বীকৃতি দিয়ে নির্দিষ্ট গন্ডির মধ্যে রাখার ব্যবস্থা করা হয়। প্রাচীন  গ্রীস,  রোমে এধরনের পতিতাবৃত্তির প্রথম উৎপত্তি । পৃথিবীর অন্যান্য জায়গায় স্বেচ্ছামুলকভাবে গোপনে পতিতাবৃত্তি প্রসার লাভ করে। কিন্তু কোথাও আইনগত স্বীকৃতি পায়না ।

চীনে তা’ঙ রাজবংশ একটি নির্দিষ্ট এলাকায় বেশ্যাবৃত্তি চালু করে ।পরবর্তী সা’ঙ রাজবংশ (৯৬০-১১২৬ খৃঃ) ক্যাফেতে ও অন্যান্য প্রমোদস্থানে যে সব কর্মরত মহিলা ছদ্দ ( ছন্দ বানান ঠিক করতে হবে) বেশ্যাবৃত্তি করতো, তাদেরকে হাংচৌ শহরে সীমাবদ্ধ করে দেয় ”।

রোমান আমলেই পৃথিবীতে প্রথম বেশ্যাবৃত্তি পেশার জন্য লাইসেন্স দেয়া হয় ও কর ধার্য করা হয় ।॥

নানান  শাস্ত্র গ্রহন্থে জানা যায় সেই সময় নারী-বিদ্বেষী ভয়ংকর বর্বরতা মতাদর্শ আদি মহাভারতের বিভিন্ন অধ্যায়ে অনুসন্ধান করে জানতে পারি মহাভারতের অনুসাষনপর্বে বলা হয়েছে (হুবহু মনুসংহিতার ভাষায়)

‘‘ত্রিলোকমধ্যে কোন স্ত্রীরই স্বাধীনতা নাই । কুমারবস্থায় পিতা, যৌবনাস্থায় ভর্ত্তা ও বৃদ্ধাবস্থায় পুত্রেরা স্ত্রীজাতির রক্ষণাবেক্ষণ করিয়া থাকে, সুতরাং স্ত্রীজাতির কখনই স্বাধীনতা থাকিবার সম্ভাবনা নাই“।

“সেই সময় নারীরা স্বাধীনভাবে অর্থনোপাজর্নন ও সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চি ছিল । শংকর শীল ‘মহাভরতের নরনারীর‘ গ্রহন্থে  লেখেছেন

‘‘এতদসত্ত্বেও আমরা ব্রাহ্মণ্য শাস্ত্রগ্রন্থে ও মহাভরতে বার বার একটি বিষয়ের উল্যেখ দেখি – সেটা  হচ্ছে ‘‘স্ত্রীধন ‘‘ । এই স্ত্রীধন কথাটির উল্লেখ দেখে অনেকেই মনে করেন, পরিমানে কম হ‘লেও  নারীজাতির কিঞ্চিৎ ধনোপার্জনের  অধিকার ছিল, নইলে স্ত্রীধন কথাটি এল কোথেকে ? কিন্তু এ ধরনের অনুমানের আদৌ কোন ভিত্তি আছে কি ? দেখা যাক, স্ত্রীধন কথাটির প্রকৃত অর্থ কী । মনুসংহিতারয় বলা হয়েছে, স্ত্রীধন বলতে বোঝায় মোট ছ‘রকমের ধন যা নারীরা পায় ,যেমন-

(১)  বিবাহকালে পিতৃকুল থেকে,

(২)  পতিগৃহে গমনকালে,

(৩)  স্বামী খুশি হ‘য়ে যা দেন,

(৪)  ভাই যে ধন দেন, মাতা যে ধন দেন এবং ,

(৬)  পিতা যে ধন দেন”।- ১৬

এটাই স্ত্রীধনের অবিসংবাদী সংজ্ঞা ।

এই স্ত্রীধনে নারীর কোন উপার্জনের অংশ থাকে না  তাই স্ত্রীধন এ নারীরা হস্তক্ষেপ করার অধিকার ছিলনা অন্যান্য ব্রাম্মণ্য শাস্ত্রে বলা হ‘লো স্ত্রী যদি শুধুমাত্র কন্যাসন্তানের জম্ম দেয়, যদি মৃত্যু সন্তানের জম্ম দেয়,যদি স্বামীর মুখের উপর কথা বলে, যদি সুরা পান করে, যদি ঘর বন্ধি না থেকে প্রাকাশ্য উৎসব বা মেলায় যেতে চায়, যদি টাকাকড়ি চায়- তাহলে তাকে স্বচ্ছন্দে ত্যাগ করা যায়, এবং এ-ক্ষেত্রে স্ত্রীকে দুর ক‘রে দেওয়ার পূর্বে স্বামী তাকে চাবুক পেটা করতে পারবে , তার সব অলংকার কেড়ে নিতে পারবে, সমুদয় স্ত্রীধন হরণ করতে পারবে”

এদিকে চরম আর্থিক নিরাপত্তাহীনতা, অন্যদিকে যে কোন মুহুর্তে স্বামী কর্তৃক পরিত্যক্তা হ‘য়ে পথে এসে দাঁড়ানো—এ থেকেই প্রাচীন ভারতীয় সমাজে দলে দলে  পতিতার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছিল, তবে রমনী-মানস আলোচনাকালে আমাদের মনে রাখতে হবে ‘‘পতিতা‘‘ ও  ‘‘গণিকা‘‘ শব্দ দু‘টির ভিন্ন অর্থির কথা । গণিকা বলতে তাঁদেরই বোঝায় যারা  বাৎস্যায়নের কামসূত্র অনুযায়ী । রুপে, যৌবনে ,শিক্ষায় ও শিল্পকলায় শ্রেষ্ঠ নারী।

এখান থেকে জানতে  পারি গণিকাকে  রাষ্ট্র কিছু স্বাধীনতা দিয়েছিল  সেই সময় গণিকাকে প্রকাশ্যে কেহ অপমান করিলে বা তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষণ করিলে তাহাকে অর্থদন্ড দিতে হত তাছাড়া গণিকারা কি ধরণের প্রার্থী খুঁজবে সে ব্যাপারে কিছু স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছিল  কামসুত্রে ,যদিও প্রতি পধে শতর্কী করণ ছিল পুরুষটি যেন ধণী হয় ।  বাস্তবে গণিকারা ছিল পুরুষের ভোগ্যপণ্য, যদিও রাজার অমনোনিত  প্রার্থীকে  ফিরিয়ে দেওয়ার স্বাধীনতা  থাকলেও রাজার প্রেরিত প্রার্থীকে বিমুখ করলে গণিকাকে জুটোপেটা ,বেত্রাঘাত ও বিপুল অর্থদন্ড মনোনিম এখান থেকে আমরা জানতে পারি প্রাচীন কালেও পতিতাবৃত্তি ছিল ।

আাধুনিকতার বদৌলতে সমাজে সবকিছুতেই যেমন  বদলের  ছোয়া লেগেছে  সেই তুলনায় আধুনিক পতিতাবৃত্তির বিস্তার নারীর মর্যাদার চরম ভাবে অবমানননা করে ,জনস্বাস্থ্যের অকল্পনীয় অবনতি ঘটায় যা  বিশ্ব মানবতাকে দারুণভাবে নাড়া দেয় । পতিতাবৃত্তির দ্রুত বিস্তারে বর্তমান পশ্চিমা জগতে নানান ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে । আজ বিশ্ব সমাজ বিশেষ করে যারা নারীদেরকে কথাকথিত নারী সাধীনতার নামে জড়ালো ভূমিকা রেখেছেন  তারাই এখন সমাজকে বাঁচার জন্য মাথা ঘামাতে শুরু করেন, পতিতাবৃত্তির এই দুষ্ট ক্ষতের ক্রমবর্ধমান বি¯তৃতি নিয়ে । বর্তমানে বিশ্ব মনীষীরা ব্যাপক গবেষণা ও আলোচনা -সমালোচনায় রত হন এর কারণ উদঘাটন ও তা দুরীকরণের জন্য ।

কবি ও লেখক –

// Disable right-click context menu // Disable text selection // Disable dragging of images and text // Disable copy events // Disable common keyboard shortcuts for copying // Check for Ctrl/Command key combinations with C, X, S, or P