জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ পুত্র ও ক্রীড়াসংগঠক শহীদ শেখ কামালের ৭১তম জন্মবার্ষিকী আজ বুধবার নানা কর্মসূচির মধ্যদিয়ে পালিত হয়েছে।
সকাল সাড়ে ৮টায় ধানমন্ডি আবাহনী ক্লাব প্রাঙ্গণে শহীদ শেখ কামালের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মধ্যদিয়ে দিবসের কর্মসূচি শুরু হয়।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ পুত্র শেখ কামাল ১৯৪৯ সালের এই দিনে তিনি তদানীন্তন গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গীপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালো রাতে শাহাদাত বরণ করেন।
এ সময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, এডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আব্দুর রহমান, তথ্যমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক ও মির্জা আজম, সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, প্রচার সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সবুর, ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়–য়া, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আওয়ামী লীগ ছাড়াও ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগ, শ্রমিক লীগ, ছাত্রলীগ, ঢাকা জেলা মহিলা আওয়ামী লীগ, আবাহনী পরিচালকবৃন্দ, আবাহনী সমর্থক গোষ্ঠী, আবাহনী কর্মকর্তা ও খেলোয়াড়বৃন্দ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন শেখ কামালের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে।
পরে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বনানী কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত শহীদ শেখ কামালের সমাধিতে নেতৃবৃন্দ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে কবরস্থান মসজিদে কোরানখানি, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
শেখ কামালের জন্মদিন উপলক্ষে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় বুধবার ভার্চুয়াল এক আলোচনা সভার আয়োজন করে। সভায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলের সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে আয়োজিত এ আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সংসদ সদস্য সালমান ফজলুর রহমান, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ ও বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। অনুষ্ঠানে শহীদ শেখ কামাল ‘আলোমুখী এক প্রাণ’ শীর্ষক স্মারক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
এদিকে, ক্রীড়াসংগঠক শহীদ শেখ কামালের ৭১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভার আয়োজন করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য এডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ মন্নাফীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ.ফ.ম. বাহাউদ্দিন নাছিম বক্তব্য রাখেন। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবির সভা পরিচালনা করেন।
এরপর পবিত্র কোরআান থেকে তিলাওয়াত ও বঙ্গবন্ধু পরিবারের সকল শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহ সকলের সুস্থতা কামনা করে মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।
এদিকে শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ পুত্র, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব শহীদ শেখ কামালের ৭১ তম জন্মবাষির্কী পালন করেছে আওয়ামী যুবলীগ।
সংগঠনটি এ উপলক্ষ্যে বুধবার শেখ কামালের প্রতিকৃতি ও কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন, কোরআন খতম, মিলাদ দোয়া ও দু:স্থদের মধ্যে খাবার বিতরণ করেছে।
দিনের শুরুতে ধানমন্ডিস্থ আবাহনী মাঠে শেখ কামালের প্রতিৃকতিতে শ্রদ্ধা জানান যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল। শীর্ষ দুই নেতা এরপর সিনিয়র নেতাদের নিয়ে বনানীস্থ কবরস্থানে শ্রদ্ধা জানান।
এদিকে শেখ কামালের জন্মদিন উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কোরআন খতম, মিলাদ, দোয়া ও দু:স্থদের খাবার বিতরণ করেছে যুবলীগ। এতে অংশ নেন আওয়ামী যুবলীগের সাধারন সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল।
বহুমাত্রিক অনন্য সৃষ্টিশীল প্রতিভার অধিকারী তারুণ্যের দীপ্ত প্রতীক শহীদ শেখ কামাল শাহীন স্কুল থেকে মাধ্যমিক ও ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগ থেকে বি.এ. অনার্স পাস করেন।
তিনি বাংলাদেশের শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতি অঙ্গনের অন্যতম উৎসমুখ ‘ছায়ানট’-এর সেতার বাদন বিভাগের ছাত্র ছিলেন। স্বাধীনতা উত্তর যুদ্ধ-বিধ্বস্ত বাংলাদেশের পুনর্গঠন ও পুনর্বাসন কর্মসূচির পাশাপাশি সমাজের পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীর ভাগ্য উন্নয়নে সমাজ চেতনায় উদ্বুদ্ধকরণে মঞ্চ নাটক আন্দোলনের ক্ষেত্রে তিনি প্রথমসারির সংগঠক ছিলেন। বন্ধু শিল্পীদের নিয়ে গড়ে তুলেছিলেন ‘‘স্পন্দন শিল্পী গোষ্ঠী’’।
শেখ কামাল ছিলেন ঢাকা থিয়েটারের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। অভিনয় শিল্পী হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যাঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। শৈশব থেকে ফুটবল, ক্রিকেট, হকি, বাস্কেটবলসহ বিভিন্ন খেলাধুলায় প্রচ- উৎসাহ ছিল তাঁর। তিনি উপমহাদেশের অন্যতম সেরা ক্রীড়া সংগঠন, বাংলাদেশে আধুনিক ফুটবলের প্রবর্তক আবাহনী ক্রীড়াচক্রের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।
শহীদ শেখ কামাল আমাদের দেশে নান্দনিক ফুটবল ও ক্রিকেটসহ অন্যান্য দেশীয় খেলার মানোন্নয়নে অক্লান্ত শ্রম দিয়ে অপরিসীম অবদান রেখেছিলেন। তিনি নতুন নতুন খেলোয়াড় সৃষ্টির লক্ষে প্রশিক্ষণ শিবির গড়ে তুলতেন এবং তাদের সাথে নিয়মিত অনুশীলন করতেন। ১৯৭৫ সালের ১৪ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ব্লু’ খ্যাতিপ্রাপ্ত দেশবরেণ্য অ্যাথলেট সুলতানা খুকুর সাথে তাঁর বিয়ে হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শাহাদাত বরণের সময় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের এম. এ শেষ পর্বের পরীক্ষার্থী ছিলেন এবং বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগের অঙ্গ-সংগঠন জাতীয় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন।