Sunday, 13 July 2025, 04:55 PM

সৈয়দপুরের ফারুক ৩০ বছর ধরে লাশ নিয়ে ছুটছে

বিডি নীয়ালা নিউজ(২৪জানুয়ারি১৬)- আসাদুজ্জামান সুজন (নীলফামারী প্রতিনিধি):  নীলফামারীর জেলার সৈয়দপুরের ফারুক। বর্তমানে বয়স ৫০ বছর। নেই সংসারের পিছটান , তাই জিআরপি থানার বারান্দায় বছরের পর বছর কাটান। পেশায় একজন লাশ বাহক। সৈয়দপুর থেকে চিলাহাটি- পার্বতীপুর রেললাইনে কাটা পড়া কারো অস্বাভাবিক মৃত্যু হলেই ডাক পড়ে তার।


ঘটনাস্থল থেকে রিকশাভ্যানে লাশ নিয়ে ছুটে যেতে হয় নীলফামারী সদর আধুনিক হাসপাতালের মর্গে। সেখানে ময়না তদন্ত শেষে মৃত ব্যক্তির বাড়িতে লাশ পৌঁছে দিতে হয় তাকে। কখনও কখনও বেওয়ারিশ লাশ হলে তা দাফনের কাজটি করতে হয় ফারুককে। বিনিময়ে তার ভাগ্যে জোটে মাত্র ২শ’ টাকা। এভাবে দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে লাশ টেনে


চলেছেন ফারুক।চাল-চুলাহীন এই ব্যক্তি জীবন বাঁচার তাগিদে আজ এক বিচিত্র পেশায় জড়িয়ে পড়েছে সে।


ফারুক জানায়, সে সুইপার গোত্রের লোক নয়। মায়ের সাথে এই শহরে আসেন ছোট্ট বেলায়। তার বাড়িঘরের কথা বলতে পারেন না। জীবনে বিয়েও করেননি। তাই সংসারের পিছটান নেই তার। স্টেশনে ঘোরাঘুরির সুবাদে তার ঠাঁই হয় রেলওয়ে জিআরপি থানার বারান্দায়। চিলাহাটি থেকে পার্বতীপুর পর্যন্ত রেললাইনে কোন অস্বাভাবিক মৃত্যু হলে ছুটে


যায় ফারুক। রেলে কাটা ছিন্ন ভিন্ন লাশ জোড়া লাগিয়ে রিকশা ভ্যানে তোলে নিয়ে যান মর্গে। আর বাকি সময় জিআরপি থানার ঝাড়– দিয়ে প্রতিমাসে ২শ’ টাকা পান। মাঝে মধ্যে থানার পাশের এক গৃহবধূ তাকে খাবার দিয়ে যায়। এভাবে চলে যাচ্ছে তার জীবন। এ পর্যন্ত কতগুলো লাশ বহন করেছে তার হিসাবও সে রাখেনি। তবে ৪/৫শ হবে বলে জানায়। লাশ বহনে তার মজুরী ২শ’ টাকা দেয়া হয় আর স্বজনরা খুশি করে যা দেন তাই। লাশ বহনে প্রথম প্রথম যদিও মনের মাঝে ভীতি থাকলেও এখন সবকিছুই স্বাভাবিক মনে হয় তার কাছে। ফারুক আরও জানায়, সময়মতো মর্গে লাশ নিয়ে যেতে না পারলে সমস্যায় পড়তে হয় তাকে। মর্গে চিকিৎসক না থাকায় অনেক সময় মর্গে লাশ রেখে পরের দিন সেখানে খাওয়া-দাওয়াসহ ঘুমাতে হয় তাকে। তার লাশবাহী রিকশাভ্যানটি জিআরপি থানায়


কিনে দিয়েছে। এমনকি বিগত ২০১৫ সালে জিআরপি থানার সাবেক ওসি সাজু মিয়া থানার পাশেই থাকার জন্য ফারুককে একটি ঘর তুলে দেন। লাশবাহী রিকশা ভ্যানটি যেহেতু থানা কর্তৃপক্ষ কিনে দিয়েছেন তাই সেটি ভাড়ায়


চালানোর সুযোগ নেই তার। আর যাত্রীরা জানতে পারলে এই রিকশাভ্যানেও উঠবে না এটাও ফারুকের ভালোভাবে জানা। তাই জীবন বাঁচার তাগিদে নতুন একটি রিকশা বা অন্য কিছু করতে চায়। কিন্ত অভাব-অনটনের কারণে পারছে না। তাই থানার বারান্দা, কখনো তার জীর্ণ কুটিরে বর্তমানে দিন কাটছে খেয়ে কখনো না খেয়ে। তবুও লাশ টানার পেশা ছাড়েনি ফারুক।

// Disable right-click context menu // Disable text selection // Disable dragging of images and text // Disable copy events // Disable common keyboard shortcuts for copying // Check for Ctrl/Command key combinations with C, X, S, or P