Friday, 05 December 2025, 10:19 AM

ট্রাম্পের অভ্যর্থনায় সৌদি-আমেরিকা সম্পর্কে নতুন যুগের সূচনা

ওয়াশিংটনে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সফর অত্যন্ত সফল হয়েছে। ‘ভবিষ্যৎ বাদশাহ’র জন্য রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। পাশাপাশি, গত কয়েক বছর ধরে যুবরাজকে নিয়ে চলা সমালোচনার জবাবও দিয়েছেন তিনি।

সৌদি আরব থেকে এএফপি এ খবর জানায়।

মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে সৌদি সিংহাসনের উত্তরাধিকারীকে রাজকীয় সংবর্ধনা দেওয়া হয়। মার্কিন নেতারা সৌদি আরব সফরে গেলে যেমন আতিথেয়তা পান, যুবরাজের জন্যও ছিল তেমনই আয়োজন।

২০১৮ সালে সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ডের পর এই প্রথম যুক্তরাষ্ট্র সফর করলেন সৌদি যুবরাজ। সৌদি এজেন্টদের হাতে ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিশ্বজুড়ে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছিল এবং যুবরাজ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রায় একঘরে হয়ে পড়েছিলেন।

এই রাষ্ট্রীয় সফরটি ছিল বেশ চমকপ্রদ। কারণ, যুবরাজ এখনো দেশটির আনুষ্ঠানিক রাষ্ট্রপ্রধান নন। তারপরও ট্রাম্প তাকে রাষ্ট্রীয় অতিথির মর্যাদা দেন। 

এই সফরে সৌদি আরবের অর্জন এবং দুই দেশের সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে নিচে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো:
দীর্ঘদিনের মিত্র হলেও যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের মধ্যে কয়েক বছর ধরে একধরনের অস্বস্তি বিরাজ করছিল।

মানবাধিকার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ এবং ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের হামলার স্মৃতি এই সম্পর্কে ছায়া ফেলেছিল। ওই হামলায় জড়িতদের অধিকাংশই ছিল সৌদি নাগরিক। এছাড়া সৌদি আরবের সঙ্গে চরমপন্থার যোগসাজশ নিয়েও ভীতি ছিল।

তবে এখন এই সম্পর্কে লক্ষণীয় পরিবর্তন এসেছে।

মঙ্গলবার সৌদি যুবরাজের সম্মানে সামরিক বিমানের মহড়া, অশ্বারোহী বাহিনী তাকে স্কর্ট করে নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি লালগালিচা সংবর্ধনাও দেওয়া হয়।

একইদিন রাতে মোমবাতি প্রজ্বালিত এক জমকালো নৈশভোজের আয়োজন করা হয়। সেখানে ফুটবল তারকা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, প্রযুক্তি মোগল ইলন মাস্ক এবং অ্যাপলের প্রধান নির্বাহী টিম কুকের মতো বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। 

চলতি সপ্তাহের শেষের দিকে সৌদি অর্থায়নে একটি বড় বিনিয়োগ সম্মেলন হওয়ার কথা রয়েছে।

এই সফরে মানবাধিকার ইস্যু নিয়ে কোনো কঠোর মন্তব্য শোনা যায়নি। বরং ওভাল অফিসে রিপোর্টাররা খাশোগি হত্যার প্রসঙ্গ তুললে ট্রাম্প সরাসরি যুবরাজের পক্ষে অবস্থান নেন।

প্যারিসের সায়েন্সেস পো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক করিম বিটার এএফপিকে বলেন, ‘ওয়াশিংটনে এই রাজকীয় সংবর্ধনা এমবিএসকে (মোহাম্মদ বিন সালমান) যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ অংশীদার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। এটি প্রমাণ করেছে আরব বিশ্ব বলতে এখন রিয়াদকেই বোঝায়।’

রিয়াদ আসলে কী পেল?
সৌদি আরব বিভিন্ন বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি পেয়েছে। পাশাপাশি, একটি বড় প্রতিরক্ষা চুক্তিও নিশ্চিত করেছে, যার জন্য তারা বছরের পর বছর ধরে লবিং বা তদবির করে আসছিল।

চুক্তির মধ্যে রয়েছে ভবিষ্যতে এফ-৩৫ স্টেলথ যুদ্ধবিমান বিক্রি, বেসামরিক পারমাণবিক কর্মসূচির পথ প্রশস্ত করা এবং সৌদি আরবকে প্রধান নন-ন্যাটো মিত্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া।

তবে চুক্তির বাইরেও এই সফরের বড় দিক হল যুবরাজ মোহাম্মদের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন নিশ্চিত হওয়া। খাশোগি হত্যাকাণ্ড নিয়ে কয়েক বছর ধরে চলা সম্পর্কের টানাপড়েনের পর এই সমর্থন পেলেন তিনি।

কার্নেগি মিডল ইস্ট প্রোগ্রামের স্কলার অ্যান্ড্রু লেবার বলেন, ‘সৌদি আরবের মূল অর্জন হলো এমবিএস-কে কেন্দ্র করে। বাদশাহ হওয়ার আগে এটি প্রমাণ হলো যে, যুক্তরাষ্ট্র-সৌদি সম্পর্কের অবিচ্ছেদ্য অংশ তিনি।’

ট্রাম্পের লক্ষ্য রিয়াদ-ইসরাইল সম্পর্ক স্বাভাবিক করা। এ বিষয়ে প্রিন্স মোহাম্মদ বলেন, তা সম্ভব, তবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্পষ্ট পথ থাকতে হবে।

দেশে এই সফরকে কীভাবে দেখা হচ্ছে?
ওয়াশিংটনে যুবরাজ যে সম্মান পেয়েছেন, তাতে উচ্ছ্বসিত সৌদি নাগরিকরা। সেখানকার সংবাদপত্রের শিরোনামগুলোতেও ছিল প্রশংসার বন্যা।

বুধবার টিভি চ্যানেলগুলোতে বৈঠকের উল্লেখযোগ্য অংশ এবং ট্রাম্প ও যুবরাজের আলিঙ্গনের দৃশ্য বারবার প্রচার করা হয়।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশংসার পাশাপাশি আলোচনায় এসেছে ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের পোশাক, যা সৌদি পতাকার রঙের সঙ্গে মিলেছে। এক ব্যবহারকারী এটিকে ‘সম্মানজনক কূটনৈতিক ইঙ্গিত’ বলেছেন।

আরব নিউজের প্রধান সম্পাদক ফয়সাল জে. আব্বাস সৌদি দৈনিকটির এক সম্পাদকীয়তে লিখেছেন, ‘এই সম্পর্ক এখন আর তেল ও নিরাপত্তার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই।’

তিনি আরও লিখেন, ‘পারমাণবিক সহযোগিতা, মহাকাশ গবেষণা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং উন্নত প্রযুক্তি এখন আলোচনার টেবিলে। এটি কেবল দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নতি নয়, এটি একটি কৌশলগত অগ্রগতি।’

BSSN

// Disable right-click context menu // Disable text selection // Disable dragging of images and text // Disable copy events // Disable common keyboard shortcuts for copying // Check for Ctrl/Command key combinations with C, X, S, or P