জয়নাল আবেদীন হিরো, নীলফামারী জেলা প্রতিনিধিঃ বৈধ কাগজপত্র ও দখল থাকার পরও অধিগ্রহণকৃত জমির ক্ষতিপূরণের অর্থ প্রদানে গড়িমসি করছে নীলফামারী জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের এল এ ( ল্যান্ড একুইজেশন ) শাখার কর্মকর্তা। ফলে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে সংশ্লিষ্ট জমির মালিকেরা।
তাদেরই একজন নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মো. আব্দুল গফুর সরকার। তিনি সংবাদ সম্মেলন করে এমন হয়রানির অভিযোগ তুলে ধরেছেন সংবাদ কর্মীদের কাছে। মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) বেলা দেড়টায় সৈয়দপুর শহরের সরকারপাড়ায় নিজ বাসভবনে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন।
তিনি বলেন, কামারপকুরের আইসঢাল গ্রামের মৃত আজিম উদ্দিনের ছেলে আকবর আলীর কাছ থেকে ২০০২ সালে ২৮ শতক জমি কিনেছি এবং তখন থেকেই ভোগ দখল করে আসছি। জমিটির তফসিল হলো জেএল নং ৩১, কামারপুকুর মৌজা, দাগ নং ৫৮০। দলিল নং ৪০৪১/২০০২। কিন্তু দলিলে ভুলক্রমে দাগ নং ৪৮০ উল্লেখ হওয়ায় সংশোধনের জন্য সৈয়দপুর আদালতে মিস কেস করি এবং রায় পাই। এই রায়ের প্রেক্ষিতে সৈয়দপুর উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা (এসি ল্যান্ড) সংশোধন ও খাজনা খারিজ সম্পাদন করে দেন।
সম্প্রতি ওই জমির ওপর দিয়ে নর্দান গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানির পাইপ লাইন নেয়া হয়েছে। এর ফলে ওই জমিটি অধিগ্রহণ করেছে নীলফামারী জেলা প্রশাসন। কিন্তু অধিগ্রহণকৃত জমির ক্ষতিপূরণের অর্থ প্রদানের ক্ষেত্রে আমার পরিবর্তে আকবর আলীকেই রেকর্ডমুলে মালিক দেখানো হয় এবং তার উত্তরসূরীদেরকেই অর্থ প্রদানের উদ্যোগ নেয়।
এবিষয়ে জানতে পেরে আমি জেলা এলএ শাখায় লিখিত অভিযোগ দেই। এতে ওই শাখার দায়িত্বরত কর্মকর্তা কাশপিয়া তাসরিন আমাকে ও আকবর আলীর ওয়ারিশদের তাঁর অফিসে ডেকে নিয়ে শুনানি করেন। এসময় প্রতিপক্ষ মিথ্যে তথ্য দেয় যে ওই জমি বিক্রি করা হয়নি। তাছাড়া বিএস রেকর্ডে এখনও আকবর আলীর নামেই আছে এবং তাদের দখলেই আছে। অথচ তারা কোন কাগজপত্র বা প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারে নাই।
আমি দলিল, খারিজের ফটোকপি দিলেও ওই কর্মকর্তা তা গ্রহণ না করে আসল দলিল দেখতে চান। পরে দলিলের সঠিকতা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করে তা যাচাইয়ের জন্য সাব রেজিষ্ট্রি অফিসে চিঠি দেন এবং দখল বিষয়ে নিশ্চিত হতে মাঠ পর্যায়ে তদন্ত টিম পাঠান। এতে দুইস্থানেই আমার মালিকানা সংক্রান্ত প্রমাণ ও কাগজ পান তিনি। কিন্তু তারপরও আবার তার অফিসে ডেকে পাঠান উভয় পক্ষকে।
গত ২৬ ডিসেম্বর সর্বশেষ গেলে আসল দলিলসহ অন্যান্য প্রমাণপত্রও উপস্থাপন করি। এতেও প্রতিপক্ষ মিথ্যেচার করতে থাকে এবং ওই কর্মকর্তা তাদের পক্ষেই অবস্থান নেন। এক পর্যায়ে তার অফিসে উপস্থিত আকবর আলীর শ্যালক প্রিন্সিপল স্বীকার করেন জমিটি আমার কাছে বিক্রি করেছে এবং তিনিই দলিলে সনাক্তকারী ছিলেন। এরপরও কর্মকর্তা কাশপিয়া তাসরিন বিষয়টির সুরাহা না করে ঝুলিয়ে রাখেন এবং আবারও আরেকদিন উভয় পক্ষকে উপস্থিত হতে বলেন।
আমি কি কারণে আবার আসবো জানতে চাইলে তিনি কোন সদুত্তর দেননি। তাছাড়া একইভাবে আমার একটা জমি দাগ নং ৬৮৯ যা ইতোপূর্বে বিক্রি করেছি। কিন্তু তা এখনো আমার নামেই রেকর্ড আছে। সেই জমির বর্তমান মালিক গ্যাস পাইপ লাইনের জন্য জমি অধিগ্রহণের অর্থ স্বাভাবিক ভাবেই পেয়েছেন। আমার কোন নো অবজেকশন প্রত্যায়নের প্রয়োজন হয়নি। তাহলে আমার ক্ষেত্রে এতোটা জটিল করার কারণ কি?
এই কর্মকর্তা কেন এভাবে বার বার হয়রানি করছেন? আমি একজন সাবেক কলেজ অধ্যক্ষ, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান, বর্তমান সৈয়দপুর জেলা বিএনপির সভাপতি হয়েও সকল সঠিক কাগজপত্র থাকার পরও এতো হয়রানির শিকার হয়েছি। তাহলে সাধারণ মানুষ তার দ্বারা আরও কত যে হেনস্তা হচ্ছে তার ইয়ত্তা নেই। এই দুর্ভোগের অপসারণ চাই। যেন ভবিষ্যতে আর কেউ এমন হয়রানির শিকার না হয়।
উল্লেখ্য, নীলফামারী জেলা প্রশাসকের এলএ শাখার এমন হয়রানির অভিযোগ আরও অনেকে করেছেন। এখানে টাকা না হলে কোন কাজ হয়না। টাকা দিলে কাগজপত্র ছাড়াও ক্ষতিপূরণের অর্থ পেলেও শুধু টাকা না দেয়ায় বছরের পর বছর ধরে ঘুরেও বৈধ কাগজপত্রের মালিকও অর্থ প্রাপ্তিতে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে। এমনকি অনেক ভুয়া ব্যক্তিও শুধু ওই অফিসের সহযোগিতায় অর্থ পেয়েছে বলেও গুঞ্জন রয়েছে।
এব্যাপারে এল এ শাখার কর্মকর্তা কাশপিয়া তাসরিনের বক্তব্য নেয়ার জন্য যোগাযোগ করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি ফলে তাঁর বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি ৷