Monday, 10 March 2025, 05:09 PM

যৌন নিপীড়ন, ধর্ষন এবং এর প্রতিকার

…….মোঃ আব্দুল মান্নান

নারীদের নিরাপত্তা কোথায় ? নারীত্বের প্রতি অবমাননা উদ্ধেগজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে দেশে। কোন স্থানেই নারী নিরাপদ নয়। নারীর ইজ্জত- আব্রুর কোনই নিরাপত্তা নেই। কোন বয়সের নারীই নিরাপদ নয়। দেশে এখন অসংখ্য নারী ধর্ষনের ঘটনা ঘটেছে। এ গুলোর অধিকাংশই প্রকাশ পায় না। গোপন রাখা যায় না যে সব ধর্ষনের ঘটনা, তা-প্রকাশ পেয়েই আলোচনায় আসে।

জনমনে এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, মানুষ পাশবিকতার থেকেও কেন ক্রমশঃ নীচে নেমে চলছে ? কোন সে কারন, যা-অকল্পনীয় বর্বরতার জন্ম দিচ্ছে ? সমাজবিজ্ঞানী,মনোবিজ্ঞানী এবং সমাজ সচেতন মণিষীরা এর কারন তুলে ধরছেন বিভিন্ন ভাবে। কেউ আর্থিক, কেউ বেকারত্বজনিত হতাশাকে,কারো কারো মতে ইহা নিয়ন্ত্রণে আইনের উপযুক্ত প্রয়োগ নেই বলে মনে করেন। আবার অনেকে মনে করেন, আধুনিক বিজ্ঞানের ইন্টারনেট ব্যবস্থার প্রভাবই এর মূল কারন।
ধর্ষনের শিকার হয়েছে এরূপ কিছু পরিবার থেকে জানা যায়, ধর্ষনের বিষয়গুলো প্রকাশে ধর্ষক অথবা তাদের পরিবার থেকে চাপ এবং লোক সমাজে বিষয়টি গোপন রাখার স্বার্থেই মূলতঃ ধর্ষিতার পক্ষ এ ব্যপারে নিরব থাকে। সম্মানহানির ভয়ে তারা বিষয়টি প্রকাশ থেকে বিরত থাকে।অনেক ধর্ষিতার পরিবার আইনি ঝামেলা এড়ানোর জন্যই এ সব বিষয়ে এগুতে চায় না। এমন অসংখ্য ধর্ষনের ঘটনা থাকলেও প্রায় ২০ শতাংশ ধর্ষিতানারী ধর্ষকের বিরুদ্ধে মামলায় লড়ছেন, যা-বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার ২৯ অক্টোবর ২০১৬ তে প্রকাশিত সংখ্যার এক রির্পোটে উল্লেখ। ঐ বছর ধর্ষনের শিকার হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২৫৩২ ধর্ষিতা, আর মামলা করেছে ৬৩০ জন, যা বর্ণিত পত্রিকার রিপোটে বলা হয়েছে।

চলতি ২০১৭ সালে এ পর্যন্ত অসংখ্য যৌন নিপীড়ন ও ধর্ষনের ঘটনা ঘটেছে যার চিত্র অত্যন্ত ভয়াবহ । পরিবেশগত কারনে এ সব ঘটনা বাড়ছে বলে বিশেষজ্ঞগণ মন্তব্য করেছেন। নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা থেকেও এ প্রবনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে অনেকে ধারণা করছেন। ইন্টারনেটে পর্ণগ্রাফির সহজ লভ্যতায় শারীরিক ও মানুষিক বিকৃতি থেকেও ধর্ষনের ঘটনা বেশি বেশি ঘটছে বলে বিশেষজ্ঞগণ মনে করছেন। আইনে কঠোর শাস্তির বিধান জেনেও ধর্ষকদের এ ব্যাপারে তেমন কোন মাথা ব্যাথা নেই, যা ধর্ষনের বর্ধিত মাত্রা থেকে বুঝা যায়।

আমি কোন সমাজবিজ্ঞানী কিংবা মনোবিজ্ঞানী নই। সমাজ, রাষ্ট্রের প্রতি কর্তব্যবোধের কারনে এ বিষয়টি লিখছি। আমি চেষ্টা করছি এ ব্যপারে আমার দৃষ্টি ভঙ্গি সর্বাতক ভাবে ব্যাখ্যা করতে। উপরোক্ত কারনগুলোর প্রতিটিরই কিছু না কিছু ক্রিয়াশীল বিষয় থাকে যৌন নিপীড়নের পিছনে, এতে কোন সন্দেহ নেই। কোন সামাজিক সমস্যা একটি মাত্র কারনে সংঘঠিত হয় না। এ ক্ষেত্রে সমস্যার সমাধানে প্রকৃত কারন চিহিৃত হওয়া অবশ্যই দরকার।

আর্থিক সমস্যা ও বেকারত্বজনিত হতাশায় অপরাধ প্রবনতা বৃদ্ধি করে এটা প্রমানিত। এ অপরাধ ধর্ষনের মুখ্য কারন হিসেবে চিহিৃত, এটা ভাবা যুক্তিযুক্ত নয়। আগেও আমাদের আর্থিক সমস্যা ছিল। তখন ধর্ষন এতটা ব্যপক ছিল না। আর শিশু ধর্ষনের ঘটনা কালে-ভদ্রে এক-আধটা শোনা যেত। বেকারত্ব আগেও ছিল, এখনো প্রকট। তবে বেকারত্ব যদি বর্তমানে দশভাগ বৃদ্ধি পায়, ধর্ষনের ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে এর চেয়ে অনেকগুন বেশি। উন্নত বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দেশ যুক্তরাষ্ট্রে বেকারত্ব সমস্যা থাকলেও সে দেশের নারীরা আমাদের দেশের নারীদের চেয়ে অনেক বেশি যৌন নির্যাতনের শিকার।
নিয়ন্ত্রিত জীবনের এক বড় নিয়ামক হল নৈতিকতা। এটার উপস্থিতি মানুষকে সততা ও মানবতার পথে পরিচালিত করে। উচ্ছৃঙ্খলতা এবং খারাপ অভ্যাস পরিহার করতে প্রেরণা যোগায়।

অপরাধ নিমর্মতা এবং অন্যায় সংঘঠিত হয় এর অভাবেই, শান্তি-শৃঙ্খলা ও কল্যাণের স্বার্থে নৈতিকতাকে উজ্জীবিত করা দরকার এ কারনেই। আর নৈতিকতার বড় বাহন হল ধর্মীয় মূল্যবোধ। ধর্মীয় মূল্যবোধ থেকে মানুষ আচার আচরণের দিক নির্দেশনা পায়। মানুষের মনে সর্বশক্তিমান আল্লাহর নিকট তার কৃত কর্মের জবাবদিহীতার অনুভুতির সৃষ্টি করে। নিন্দনীয় কার্যক্রম বর্জনের শিক্ষা দেয়, সৎ কর্মের প্রেরনা জোগায় এবং অসৎ কর্মের প্রতি বিতৃষ্ণার সৃষ্টি করে, যা যৌন অপরাধ নির্মূলে গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা রাখতে সহায়ক । যৌন নিপীড়ন বন্ধে ধর্মের প্রভাব সুপ্রামানিত। কোন ধর্মই যৌন অপরাধ সমর্থন করে না।

বিভিন্ন গবেষনায় উল্লেখ করা হয় যে, ধর্মীয় গ্রুপগুলোর সক্রিয় সদস্যদের মধ্যে ধর্মবিমুখদের তুলনায় বিবাহ বহিৃর্ভুত যৌন অপরাধ অত্যন্ত কম। ধর্মীয় অনুভুতির প্রভাবে নিয়ন্ত্রিত যৌনজীবন যাপন সম্ভব। ধর্মবিধ্বংসী ভাবাবেগকেও নিয়ন্ত্রন করে নিয়ন্ত্রিত যৌনজীবন ব্যবস্থা। ধর্মীয় অনুভূতি যদি রাষ্ট্রীয় এবং সামাজিক সুযোগ ও দুর্বার আকর্ষণকে উপেক্ষা করার প্রেরনা দিতে পারে, তা-হলে আমাদের সমাজবাস্তবতায় এর প্রভাব শতগুন বৃদ্ধি পাওয়ার কথা। সাংবাদিক, কবি-সাহিত্যিক তাঁদের লিখনির দ্বারা যৌননিপীড়ন ও ধর্ষন সংক্রান্ত অপরাধ ত্যাগ করে নৈতিক জীবন যাপনে ফিরে আসাতে মানুষকে উৎসাহী করে তুলতে পারে।

যে সব প্রবল ভাবাবেগ মানুষকে হিতাহিত জ্ঞানশুন্য করে ফেলে, তা নিছক উপদেশ বাণী ও নীতি বাক্যেই নিয়ন্ত্রিত হয়ে যাবে, এটা ভাবা নির্বুদ্ধিতা ছাড়া কিছু না। পারলৌকিক জীবনে জবাবদীহিতার অনুভুতিই কেবল মাত্রই এটা পারে। এ অনুভুতি মানুষের মধ্যে যত অধিক তীব্র হবে, অন্যায় অনাচার হতে মানুষ ততধিক দূরে সরে আসবে।
বর্তমান সরকার প্রধান ও স্পীকার একজন নারী । তাঁদের কাছে নারী জাতির প্রত্যাশা এখন অনেক। ধর্ষন ও যৌন অপরাধের জন্য তাঁরা আইন প্রনয়ন করেছেন। কিন্ত একটি বিষয় এ ক্ষেত্রে বিবেচনার দাবী রাখে, তা হলো উল্লেখিত অপরাধ যেন বারংবার সংঘঠিত হতে না পারে সেদিকে অধিক যত বান হওয়া এখন বেশি জরুরী। এ জন্য জাতীয়ভাবে নৈতিক সংস্কারের কর্মসূচী জোরদার করা অত্যন্ত প্রয়োজন। বেশি ভাল হত, যদি আইনগত সংস্কারের পাশাপাশি ধর্মীয় অনুভুতি জাগ্রত করার পদক্ষেপ গ্রহন করা হত। যদি মানুষের মধ্যে ন্যায় ও কল্যাণের পথে প্রেরনা সৃষ্টি করা হত। এ জন্য ধর্মীয় শিক্ষার প্রসার ঘটানো জরুরী। পরিশেষে বলতে কোন ধর্মই যৌন নিপীড়ন ও ধর্ষনের মত ঘটনা সমর্থন করে না। আর ধর্ম হলো নারীর শালীণতা রক্ষা করার এক পরীক্ষিত প্রহরী। এ ব্যবস্থা চালু থাকলে সমাজ থেকে দূর হবে যৌন অপরাধ ও ধর্ষনের মত জঘন্ন নোংরামী। আমাদের নারী সমাজও রক্ষা পাবে এ মহা সর্বনাশ থেকে।

লেখক : সাংবাদকি ও কলামষ্টি।

// Disable right-click context menu // Disable text selection // Disable dragging of images and text // Disable copy events // Disable common keyboard shortcuts for copying // Check for Ctrl/Command key combinations with C, X, S, or P