Friday, 25 July 2025, 08:17 PM

যুদ্ধ, বিভাজন ও উত্তেজনা: পাক-ভারত সম্পর্কের সংকটময় যাত্রা

পহেলগাঁওয়ে পর্যটকদের ওপর নৃশংস সন্ত্রাসী হামলার জেরে পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী দুই দেশ পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে দীর্ঘদিনের উত্তেজনা আবারও বেড়েছে।  পালটা জবাবে ভারত পাকিস্তানের ভূখণ্ডে প্রাণঘাতী হামলা চালিয়েছে।


পাকিস্তানের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত ২৬ জন নিহত হয়েছেন। পাকিস্তান পালটা প্রতিক্রিয়া জানানো শুরু করেছে, যা দক্ষিণ এশিয়ার এই দুই দেশের মধ্যে এক বড় ধরনের উত্তেজনার সূচনা করেছে।


ভারত অভিযোগ করছে, ২২ এপ্রিল ভারতীয় নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরে (আইআইওজেকে) বেসামরিক নাগরিকদের ওপর চালানো বহু বছরের সবচেয়ে ভয়াবহ হামলার পেছনে পাকিস্তানের মদদ রয়েছে—যেখানে ২৬ জন নিহত হয়।


তবে ইসলামাবাদ এই অভিযোগ সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে। এরপর থেকেই নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) বরাবর দুই দেশের সেনাদের মধ্যে গুলিবিনিময় চলছে। এলওসি হচ্ছে আজাদ জম্মু ও কাশ্মীর (এজেকে) এবং ভারতীয় নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের মধ্যে একটি কাঁটাতার দিয়ে ঘেরা, বহুলভাবে সামরিকীকৃত সীমান্ত।


এদিকে, ভারত তার সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে এবং নাগরিকদের সরিয়ে নিচ্ছে।


এই দুই দেশ ১৯৪৭ সালের রক্তক্ষয়ী বিভাজনের পর থেকে একাধিকবার সীমান্তে সংঘর্ষ এবং পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের মধ্যে জড়িয়েছে। এখন পর্যন্ত দুদেশের সংঘাতের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস নিয়ে এক প্রতিবেদন করেছে জিও টিভি।


১৯৪৭: দেশভাগ


দুই শতাব্দীর ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটে ১৫ আগস্ট, ১৯৪৭-এ। উপমহাদেশ ভাগ হয়ে সৃষ্টি হয় মুসলিম-প্রধান পাকিস্তান ও হিন্দু-প্রধান ভারত।


এই বিভাজনে এক মিলিয়নের বেশি মানুষ নিহত হয় এবং প্রায় দেড় কোটি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়।


কাশ্মীরের রাজ্যটি কোন দেশে অন্তর্ভুক্ত হবে—এ নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। জাতিসংঘ-সমর্থিত এক অস্ত্রবিরতির মাধ্যমে জানুয়ারি ১৯৪৯-এ ৭৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তরেখা তৈরি হয়, যা কাশ্মীরকে বিভক্ত করে।


১৯৬৫: কাশ্মীর যুদ্ধ


পাকিস্তান ১৯৬৫ সালের আগস্টে দ্বিতীয় যুদ্ধ শুরু করে, যখন তারা কাশ্মীর পুনর্দখলের চেষ্টা চালায়।  হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়, এবং সেপ্টেম্বরে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি হয়।


১৯৭১: বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ


১৯৭১ সালে পাকিস্তান তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে স্বাধীনতা আন্দোলন দমনে সেনা মোতায়েন করে।  ৯ মাসের এই যুদ্ধে আনুমানিক ৩০ লাখ মানুষ নিহত হন এবং লক্ষ লক্ষ মানুষ ভারতে আশ্রয় নেয়। ভারত এই সময় পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়ায়।


১৯৮৯-৯০: কাশ্মীর বিদ্রোহ


১৯৮৯ সালে ভারতীয় নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে বিদ্রোহ শুরু হয়। এই দীর্ঘ সংঘাতে সেনা, স্বাধীনতাকামী এবং সাধারণ মানুষসহ হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারান।


ভারত দাবি করে, পাকিস্তান এই বিদ্রোহীদের অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করেছে।


১৯৯৯: কারগিল যুদ্ধ


পাকিস্তানি সেনারা কাশ্মীরের কারগিল পাহাড়ি অঞ্চলে ভারতের সামরিক চৌকি দখল করে। যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং পারমাণবিক যুদ্ধের আশঙ্কায় পাকিস্তান পিছু হটে। দশ সপ্তাহের এই যুদ্ধে অন্তত ১,০০০ মানুষ প্রাণ হারায়।


২০১৯: পুলওয়ামা হামলা


কাশ্মীরের পুলওয়ামায় আত্মঘাতী বোমা হামলায় ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর ৪০ সদস্য নিহত হয়।  ভারত সাধারণ নির্বাচন সামনে রেখে পাকিস্তানের ভূখণ্ডে বিমান হামলা চালায়।


এই হামলার জবাবে পাকিস্তান একটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করে এবং পাইলট উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমানকে আটক করে। পরে তাকে শান্তির বার্তা হিসেবে ওয়াঘা সীমান্তে ভারতের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

jug/n

// Disable right-click context menu // Disable text selection // Disable dragging of images and text // Disable copy events // Disable common keyboard shortcuts for copying // Check for Ctrl/Command key combinations with C, X, S, or P